কী করলে মেয়েগুলো রক্ষা পাবে, বলবেন কেউ?

লাজ্বাতুল কাওনাইন:

বাচ্চাদের কতো কী আবদারই না বাবা-মায়েরা সহ্য করেন। এটা তো শুধুমাত্র চন্দ্রবিন্দু। আর বাবা মায়েদের আজব কিছু আবদার কিন্তু আবার সন্তানরাও সহ্য করে! আর সেটা অন্ধকারময় ভয়াবহতা। কেমন ধরনের আবদার আসুন না দেখি….

আমি না মনে মনে একটা ব্যাপার ঠিক করেছি। স্বাভাবিক মানুষের পেটেই তো তৃতীয় লিংগের সন্তান জন্ম নেয়। এরপর তাদেরকে একটা নির্দিষ্ট সমাজে হস্তান্তর করা হয়। এটা ভালো ব্যাপার। পরিবার, সমাজ যদি এর দায়ভার নিতে না চায় তো কী দরকার ঘরে রাখা। সুন্দর হবে কিন্তু এই অসামাজিক রীতিটা।

মধ্যযুগে একটা বর্বর ঘটনা নাকি ঘটতো। মেয়ে সন্তান হবার সাথে সাথেই তাকে জ্যান্ত মাটিচাপা দেওয়া হতো। এটাও একটা দারুণ বিষয়। এক পিচ্চি মেয়েকে বাবা নাকি নিয়েছে মাটি চাপা দিবে। তো, সে কবর খুঁড়ছে আর ঘামছে। মেয়ে বাবার ঘাম মুছে দিচ্ছে। আহা, কী কষ্ট বাবার! বাবার মন গলে না। বাবা মেয়েকে মাটি চাপা দিয়ে আনন্দে বাড়ি ফিরে এলো। অসাধারণ কিন্তু। মেয়ে যদি বোঝা হয়, মেয়ে যদি সম্মানের সাথে বড় করার ক্ষমতা না থাকে তো চাপাচুপা দেওয়াটাই বুদ্ধিমানের কাজ। বোঝা যায়, তারা বিশাল মগজের দাবিদার।

আবার আমাদের নবী করিম(সা:) তাঁর মেয়েদের ভীষণরকম ভালোবাসতেন। উনার ছোট মেয়ে ফাতেমা(রাঃ) এর সাথে কথা বলার সময় ডান পা আর বাম পা দুজনের লাগিয়ে বসে কথা বলতেন। এটা ভালোবাসার একটা প্রকাশমাত্র! আর শুধু তাই না। বাবাকে ফাতেমা(রাঃ) ব্যক্তিগত যতো সমস্যা আছে, বলতেন, সমাধান চাইতেন। বাবা উনার পরম বন্ধু।

এবার আসি আমার আম্মার প্রসঙ্গে। একটু বড় হবার পর তিনি আমার চলাফেরা পোশাক-আশাকের ব্যাপারে খুব বেশি সচেতনতা দেখাতেন। একদিন বললেন, তুমি সবসময় নিজের ব্যাপারে সচেতন থাকবে। সেটা কত গুরুত্ববহ কথা ছিলো তা আজ বুঝতে পারি। আর বলতেন,কোথাও কোনো সমস্যা হলে সাথে সাথে আমাকে বলবে। মনে রেখো আমি এবং আব্বু ছাড়া দুনিয়াতে আপন আর কেউ না।

তো কী দাঁড়ালো! মা আপন, বাবা আপন। আমি আজকাল আর এটা মনে করতে পারছি না। মেয়ে মানুষ জন্মানোর সাথে সাথে এদের মেরে ফেলা বা এমন একটা আলাদা সমাজ হোক, সেখানে দিয়ে দেওয়াটা উত্তম। সারাদেশ আছে ধর্ষণের উপরে। ধর্ষণের হোলিখেলা চলছে। আগেও চলতো, তবে মিডিয়ার উন্নতি তখন শুরু হয়নি। মেয়েদের সাহসও তখন বাড়েনি। এখন ধর্ষণের শিকার মেয়েরা নিজেই সাহসী। উপায় নেই। দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে।

দিনের পর দিন সৎ বাপ ধর্ষণ করে। সৎ বাপ বলে কথা। সে বলতেই পারে, এটা তো ভাই আমার রক্তের কিছু না। যা মুঞ্চায় করুম। কিন্তু মা! সেতো রক্তের! ওই মা কিন্তু বেশ সাহসী, প্রথমত সে তার আগের স্বামী বা মেয়েটির রক্তবাপকে ছেড়েছে। অবশ্যই কোনো যুক্তিযুক্ত কারণে। আবার এই লোককে (সৎ বাপ) বিয়েও করেছে। (আমাদের কথিত সমাজ আবার এগুলান ঘেন্নায়)। যাক সেই লোক যুগ যুগ ধরে তার মেয়েকে ধর্ষণ করে, মেয়ে কাঁদে,মাকে বলে, আর মা বলে,আহা সহ্য করো।

আপন মামা-চাচা ইত্যাদি বিপুল সংখ্যায় আপন ব্র‍্যান্ডের জিনিষগুলো (দু:খিত শব্দটা উচ্চারণের জন্য) মেয়েদের ইচ্ছেমতো ব্যবহার করছে। মেয়ে মাকে বললে মা উল্টা বলে, ছিঃ ছিঃ কাউকে বলো না কিন্তু! চেপে যাও, কী লজ্জা! আহা লজ্জা! আমারই তো জানি কেমন জানি খুব লজ্জা করছে।

সেদিন ফেসবুকের কল্যাণে এক মেয়ের ভিডিও দেখলাম। এবার সে রক্তবাপের শিকার। নির্যাতন এর চূড়ান্ত। রাতদিন। তার মা- ভাই সব জানে। আত্মীয়স্বজন। কিন্তু সে আশ্রয় চাইলো ফেবুতে। বাহ! বাড়িঘর আর নিরাপদ না। ভার্চুয়াল নিরাপত্তার আশায় একটা মেয়ে কাঁদছে। লজ্জা-ফজ্জা সব বিসর্জন দিয়ে আকুতি করছে বাঁচার! বাপের ধর্ষণ থেকে বাঁচতে না কিন্তু, বাপ যে নিজের পাপ ঢাকতে মেয়েকে পিটাচ্ছে আর অকথ্য বকা দেয়, সে এতে মারা যাবে বলে সবার কাছে প্রাণভিক্ষা চাইছে। কেন বাঁচে মেয়েগুলো? কী উদাহরণ হয়ে বিধাতা তাদের বাঁচিয়ে রাখেন!

আমি বলবো দুনিয়াতে বাবা এর সংখ্যা এর শতকরা হিসেব যদি করা হয় তবে তা হবে প্রায় ৯৭%। এরা সত্যিকারেরই বাবা। আর বাবা-মেয়ের সম্পর্ক এর হিসাব-নিকাশে নাই বা গেলাম। কিন্তু বাকি ৩% যে পিশাচ আছে, আর তাদের বউগুলো পিশাচীমূর্তি। তাদের কর্মকাণ্ডে আমরা হতবাক হচ্ছি না ঠিক। হাতপা ছুঁড়াছুঁড়ি করছি। কী করা যায়! কেন কিছু করতে পারছি না!

আমি আপনি কারো পরিবারে ঢুকে মাতব্বরি করার অধিকার রাখি না। শত শত ভদ্র বাসা, বস্তি ঘর বড়লোকের ডুপ্লেক্সে এই জাতীয় সাইকো বাস করে। তাদের শিকার তাদের নিজ ছেলে, মেয়ে, বাসার কাজের লোক। তাদের বউরা সব এক ধরনের পিশাচ! ঠুনকো মানসম্মান বা জানের ভয়ে চুপ থাকে। তারা দেখে, বুঝে, বোঝায় আবার কাঁদে। এর কিছু প্রকাশ পায়। চিকচিকা খবর হয়ে। অতি উত্তেজনা নিয়ে আমরা সেগুলো পড়ি। উঁহ আহ্ করি। আবার ভুলে যাই। আর কিছু অপ্রকাশিতই থেকে যায় আজীবন। বাচ্চাগুলো গুমরে কাঁদে। কেউ মরে, কেউ বাঁচে,কেউ বা নতুন সাইকো হয়ে পুনরাবৃত্তি ঘটায় পিশাচ কাহিনীর।

আপনাদের কাছে প্রশ্ন রইলো প্রিয় বাবা এবং মায়েরা। কী করলে এদের কষ্ট ঘুচবে জানেন কি? আমার সত্যি জানা নেই। কী বিচার, কী শাস্তি বা কী সচেতনতা বা কী শিক্ষা বা কী পরিবেশ পেলে এগুলো চিরতরে বন্ধ হয়ে যাবে? একটু জানলে, জানাবেন প্লিজ! খুব অস্থিরতায় আছে সমাজ, দেশ আর ওই বাচ্চাগুলো! কিছু তো করতেই হবে এবং হবেই হবে।

শেয়ার করুন: