সুপ্রিয় সন্তানের জন্মদাতাগণ, একটিবার বাবা হোন!!

ডা. শিরীন সাবিহা তন্বী:
ফেসবুকের টাইমলাইনে চোখ বুলাতে বুলাতে ঠিক যে দৃশ্যপটটিতে চোখ আটকে যায়, আনন্দে আত্মহারা অনুভব করি, তা হলো বাবার এলবামে সন্তানের প্রথম প্রকাশ। আগমনী বার্তা। ‘আলহামদুলিল্লাহ! বাবা হলাম’।।
টাইমলাইনের শুধু না। দেশের এবং দেশের বাইরের সকল বাঙ্গালী বাবা এবং হবু বাবাদের বলছি!
বাবা হওয়ার এই অপার স্বর্গীয় আনন্দ মুহূর্তটি আপনাকে উপহার দিয়েছেন আপনার সন্তানের মা। আর সন্তান জন্ম দেয়ার পূর্বে দীর্ঘ সময় তিনি ছিলেন একজন গর্ভবতী নারী।
চরম ব্যস্ততার রথে চড়ে থাবমান বর্তমান সময়ে বেশীর ভাগ নারীই কর্মজীবী। কর্মজীবী নারীদের জন্য অফিস স্বামী সংসার সবকিছু সামলে মা হতে যাওয়া যেন এক বিশাল চ্যালেঞ্জ।
যুগ যুগ ধরেই প্রাকৃতিক নিয়মেই একজন নারীকে মা হতে হলে প্রেগনেন্সির সময়টাতে নানাবিধ শারিরীক মানসিক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যেতে হয়। হরমোন নামক যে আশ্চর্য রাসায়নিকের প্রভাবে পুরুষ মানুষ, পুরুষ এবং নারী, নারী হিসেবে সমাজে স্বীকৃত হয়, সেই হরমোনের কারণেই গর্ভবতী নারীর শরীরে-মনে আসে পরিবর্তন।
এই পরিবর্তনের প্রকাশ হতে পারে বমি, অস্থিরতা, শ্বাসকষ্ট, অস্থিরতা, প্যানিক এট্যাক, অতিরিক্ত খিটখিটে হয়ে যাওয়া, নিদ্রাহীনতা, দুঃস্বপ্ন দেখা – নানা প্রকারের উপসর্গের মধ্য দিয়ে।
একজন নারী সে যতোই আত্মবিশ্বাসী এবং আত্মনির্ভরই হোক না কেন, প্রেগনেন্সিতে সে সবথেকে অসহায় অনুভব করে, সন্তানের বাবার উপর নির্ভর করতে পছন্দ করে। আপনি যত বড় বীরপুরুষই হোন না কেন, আপনার প্রেগন্যান্ট স্ত্রীর নির্ভরতার কেন্দ্র না হয়ে উঠতে পারলে আপনি দেশ সেরা কাপুরুষ, দায়িত্বহীন।
আপনার স্ত্রীর শরীরে একটি মাত্র কোষ থেকে ধীরে ধীরে বাড়ছে আপনার শরীর-মনের ধারক-বাহক যে সন্তান, সমাজে আপনার উত্তরাধিকার বা বংশধর হয়েই সে বড় হবে। তাহলে ঐ শরীরটাকে ঐ মানুষটাকে যত্ন করা আপনার করুণা না, সেবাও না। এটা আপনার ধর্ম। এটা আপনার কর্তব্য।
আমরা ছেলেবেলাতে রচনা পড়েছি, “পিতামাতার প্রতি কর্তব্য”, শিক্ষকের প্রতি কর্তব্য”! আমরা পড়িনি একজন গর্ভবতী মায়ের প্রতি তার স্বামীর, পরিবারের, সমাজের, রাষ্ট্রের কর্তব্য!
কর্মজীবী সন্তান সম্ভবা নারীটি যেন কর্মক্ষেত্রে নিরাপদ এবং স্বাস্থ্যকর পরিবেশ পায়, খানিকটা বিশ্রাম পায়, সেদিকে আমাদের সকলের যত্নশীল হতে হবে।
একজন গর্ভবতী মা নারীর অন্যতম মূল্যবান সম্পদ তার শারিরীক সৌন্দর্যকে, সুস্থতাকে বিসর্জন করে যখন মা হতে যায়, সমাজের বিত্তভিত্তিক বিভাজনের প্রায় সবক্ষেত্রেই কিছু কিছু মাকে তাদের স্বামীদের অত্যন্ত লজ্জাজনক এবং ন্যাক্কারজনক কিছু কুকর্মের সাক্ষী হতে হয়, যা কখনোই কাম্য নয়।
প্রেগন্যান্ট নারী মোটা, অসুন্দরী, কর্মে অক্ষম! কারণ সে তোমার সন্তানকে বহন করছে। প্রকৃতির এই চরম সৌন্দর্য্য – বংশগতিকে নারী তার শরীরের মাঝে টিকিয়ে রেখেছে, এর থেকে সুন্দরতম ঘটনা কী হতে পারে?? 
একজন মা একজন শিশু তথা সমগ্র জাতির ভবিষ্যতের ধারক। তার সুস্থতার সাথে সাথেই গড়ে উঠবে একটি সুস্থ আগামী।
তাই বাবাগণ, আপনার সন্তানকে গর্ভে ধারণ করেছে যে নারী, সে আপনার সম্পত্তি না। সম্পদ। তাকে যত্ন করুন। তার ছোট ছোট চাওয়া পাওয়া, শখ, আহ্লাদ,সমস্যার গুরুত্ব দিন। তাকে সময় দিন। তাকে খুশি রাখুন।
তার টলটলে চোখের দিকে মমতা ভরে পুরো প্রেগনেন্সির নয়টা মাসে প্রতিদিন একবার অন্তত বলুন,
প্রিয়! তোমার ভয় নেই। আমি তোমার পাশেই আছি। তোমার কোমল হাত দুটোকে শক্ত করে ধরে এমনিই থাকবো তোমার আশা হয়ে ভরসা হয়ে। আর তোমার শরীরে একটু একটু করে বাড়ছে যে এঞ্জেল, তুমি আমি আর তাকে নিয়েই হবে আমাদের সুখের জীবন !!!!!
শেয়ার করুন: