গোধূলি খান:
“আমার মনও শাহবাগের আন্দোলনে ছুটে যেতে চায়” – প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। (সূত্রঃ প্রথম আলো, ১০–২–২০১৩)
কী কাণ্ড! আমাদের প্রধানমন্ত্রী গাঁজাখোরদের সাথে আন্দোলন করার ইচ্ছে প্রকাশ করেছিলেন আজ থেকে চার বছর আগে। তার মন শাহবাগে ছুটে যেতে চেয়েছিল। ইশ! এই কথা কি মুমিন বান্দারা জানে? তারা যদি না জেনে থাকে তাহলে আরও একটু জানাই, ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ার মাসের দ্বিতীয় রবিবার জাতীয় সংসদে বক্তব্য দেওয়ার সময় এই ইচ্ছার কথা বলেছিলেন শেখ হাসিনা।
তিনি আরো বলেন, “আমি তরুণ প্রজন্মকে বলতে চাই, আমরাও তোমাদের সঙ্গে একমত। তোমাদের শপথ বাস্তবায়নে যা যা করা দরকার, আমরা করবো। তরুণ প্রজন্ম জাতীয় সংসদে যে স্মারকলিপি দিয়েছে, তার প্রতিটি কথা যুক্তিসংগত।”
আমার তো ব্রেনই কাজ করছে না। মগজের মধ্যে চুলকাচ্ছে। কী যে করি! কারণ আওয়ামী এমপিও শাহবাগকে গাঁজাখোরদের আড্ডা বলেই ডাকে। গণজাগরণের আন্দোলনকে গাঁজাখোরদের আন্দোলন বলে।
না বলে পারছি না যে, আমাদের গোয়েন্দা বিভাগ মোটেও কাজের কাজ কিচ্ছু করে নাই। প্রধানমন্ত্রীকে গোপন সংবাদ দেয় নাই যে, ওখানের ছেলেমেয়েরা সব গাঁজাখোর, ওখানে দিনরাত গাঁজার আড্ডা চলে। কোনো আন্দোলন-ফান্দোলন চলে না। হাজার হাজার আবাল–বৃদ্ধ–বনিতা ওখানে গাঁজায় দম দেয়। ইশ, কী কারবার বলুন তো দেখি! এইটা কিছু হইলো?
চার বছর আগের ঘটনা অনেক রথী-মহারথীরা ভুলে গেছেন মনে হয়। তাই চলেন দেখি আমাদের প্রধানমন্ত্রী সেদিন আর কী কী বলেছিলেন!
সেদিন জাতীয় সংসদে দাঁড়িয়ে প্রধানমন্ত্রী তরুণ প্রজন্মকে আশ্বস্ত করে বলেছিলেন, সব যুদ্ধাপরাধীর বিচার হবে। যত বাধা-বিপত্তিই আসুক, জীবন দিয়ে হলেও তিনি যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করবেন। তিনি বলেন, ‘যুদ্ধাপরাধীদের ঠাঁই বাংলাদেশে হবে না। এইটুকু তরুণ প্রজন্মকে বলতে চাই।’
আরও মজার ঘটনা হলো-সংসদে তরুণ প্রজন্মের দেওয়া স্মারকলিপিকে যুক্তিসংগত অভিহিত করেন শেখ হাসিনা। তিনি তরুণ প্রজন্মের আন্দোলনের সঙ্গে একমত পোষণ করেন। এরপর হলো আরও ভয়াবহ ঘটনা- শুধু প্রধানমন্ত্রী একা নন। জাতীয় সংসদে উপস্থিত সব সংসদ সদস্য তরুণ প্রজন্মের দাবির সঙ্গে একাত্ম বলে ঘোষণা দেন।
ও মোর খোদা! সেদিন কোথায় ছিলেন জনাবা বাপ্পী? আপনি কি একাত্মতা ঘোষণা করেননি? নাই করতে পারেন, তা আপনার গণতান্ত্রিক অধিকার।
তারপর দেখলাম, মানবতাবিরোধী অপরাধী কাদের মোল্লার রায়ে এ দেশের তরুণসমাজ জেগে ওঠায় তাঁদের অভিনন্দন জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, তারা যদি জেগে না উঠতো, তাহলে সারা দেশের মানুষও সোচ্চার হতো না।
ছিঃ ছিঃ আমাদের প্রধানমন্ত্রী তাহলে এই গাঁজাখোরদের অভিনন্দন জানিয়েছিলেন?
শাহবাগের আন্দোলনকে অভূতপূর্ব জাগরণ হিসেবে অভিহিত করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, তারা অদ্ভুত ঘটনা ঘটিয়েছে। অভূতপূর্ব জাগরণ সৃষ্টি করেছে। জাগরণ সারা বাংলাদেশে ছড়িয়ে গেছে। প্রতিটি জেলা, প্রতিটি উপজেলায় সব জায়গায় মানুষ সোচ্চার হয়ে উঠেছে। আন্দোলনে সোচ্চার শিশু, নারী, বৃদ্ধ, তরুণ–তরুণী সবাইকে ধন্যবাদ জানান শেখ হাসিনা।
একই বছরের ১৭ই ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয় আসেন শাহবাগে “ রাজীব হায়দারের জানাজায় অংশ নিতে। রাজীব হায়দার ছিল একজন শাহবাগের সৈনিক, যাকে নাস্তিক উপাধি দিয়ে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করা হয়। প্রশ্ন হলো, জয় সাহেব ওখানে কেন গেল? একজন নাস্তিক গাঁজাখোরের জানাজায়? এর জবাব কি আছে আপনার কাছে সংরক্ষিত আসনে আসীন সাংসদ? ওই দিনগুলির পত্রিকা দেখলেই আমার লেখার সূত্র পেয়ে যাবেন।
আজকাল রাজনীতিতে কোনো নীতি নাই। যার যা ইচ্ছে করছে, বলছে। জনপ্রতিনিধিরা আমাদের সাথে এমন আচরণ করেন যেন আমরা তাদের কেনা দাস। কিন্তু সংবিধান কী বলে? কেউ কি সংবিধান মানেন? জনগণের সেবায় নিয়োজিত হবার কথা যাদের, তারা সারাটিক্ষণ ছড়ি ঘুরিয়ে চলেছে। হুমকি ধামকি, মারধর-হামলা মামলা নিয়ে ব্যতিব্যস্ত। আর যতটুকু সময় পায়, সামাজিক মিডিয়াতে নিজেদের ভাবমূর্তি উন্নয়নে ব্যস্ত। ভার্চুয়াল দুনিয়াতে রঙীন চশমা পরে ঘোরেন ঘণ্টার পর ঘণ্টা, কিন্তু রিয়েল লাইফে সমাজের উন্নয়নে তারা একদম জিরো ফিগার।
মালয়েশিয়া–নিউ ইয়র্ক –লন্ডন–কানাডা–সিংগাপুর–ইন্ডিয়াসহ পৃথিবীর নানান দেশে তাদের সম্পদের পাহাড়। বিদেশী ব্যাংকগুলিতে উপচে পরা সম্পদ।
আমাদের প্রধানমন্ত্রী যদি একটু সময় করে এদের আগুল ফুলে কলা গাছ হয়ে যাবার কারণ তদন্ত করাতেন, তাহলে দেখা যেত কে কী ছিল, আর কী হয়ে গেছে!
ধর্ষণবিরোধী বক্তব্য দিয়ে, ধর্ষণ প্রতিরোধ কমিটির মেম্বার হয়ে, নারী নির্যাতনকারীদের শাস্তির দাবি করে এসে এরাই আবার ধর্ষকদের সুবিধা দেয়। ধর্ষকদের কাছ থেকে বিভিন্ন সুবিধা নেয়। ধর্ষক সাফাত ও নাঈমের মুখ থেকে অনেকের অনেক গুণের পরিচয় পাওয়া গেছে। কিন্তু একজন নারীরও যে ধর্ষকের প্রতিপালক হয়, তা না দেখলে বিশ্বাস করতাম না।
ক্ষমতাবানদের অনেক বন্ধু থাকে, সাংবাদিক থেকে শুরু করে সব পেশার মানুষ এদের অনুগ্রহ পেতে চায়। এরা অন্যায় করলেও কেউ কিছু বলে না, কারণ সুবিধাগ্রাহী পেশাজীবীরা তখন চুপ করে, চোখ ঢেকে, কান চেপে রাখে। নিজেদের দাসত্বের শেকলে বেঁধে চুপ করে পায়ের কাছে বসে লেজ নাড়ায়।
আমরা আমাদের কষ্টের ইনকাম থেকে ট্যাক্স দেই, আমাদের পাঠানো টাকার রেমিটেন্স পায় সরকার। হুন্ডি করলে ডলারে দু পাঁচ টাকা বেশি পাওয়া যায়, কিন্তু সেই বেশির লোভ ছেড়ে ব্যাংকের মাধ্যমে টাকা পাঠায় প্রবাসীরা, যাতে রেমিটেন্স পায় সরকার, সেই টাকা লুট হয়, বছরে ১৭ হাজার টাকা পাচার হয় দেশ থেকে।
আপনারা ফেসবুকে কে কী করলো, তা না দেখে, দেশের সর্বনাশ কারা করছে, কীভাবে করছে, তা নিয়ে কাজ করেন, ফেসবুকে সময় দেবার মতো সময় কি আপনাদের থাকা উচিত? মাঝে মধ্যে দিতেই পারেন, কিন্তু কতোক্ষণ? কিন্তু দেখি সারাক্ষণই ব্যস্ত থাকেন সবাই ফেসবুকে বিবিধ জিনিস আপলোড করতে। নানান পদের খাবার রান্না করে সাংবাদিকদের নিমন্ত্রণ জানানো, সবই জানা হয়ে যায় ফেসবুকের কল্যাণে।
জনগণকে সেবার বদলে জনগণের জীবনকে দুর্বিষহ করার জন্য তো জনপ্রতিনিধি নির্বাচন করা হয় না।
এই সরকারের আমলে নারীর প্রতি সহিংসতা বেড়ে চলেছে। দেশ তো ধর্ষণের ক্ষেত্রে রেকর্ড করবে বলেই মনে হচ্ছে অচিরে। এমন একটা দিন নেই যে, ধর্ষণের খবর নাই পত্রিকার পাতায়। বিচারহীনতার কারণে আজ এমন দুঃসাহস দেখাতে পারছে মানুষ এইদেশে।
এখন তো আরও ভাল হয়েছে, আছে ফেসবুক। ভার্চুয়াল দুনিয়াতেও চলছে ধর্ষণ। কাউকে পছন্দ হলো না, কারো সাথে বনিবনা হলো না, কারো কথা পছন্দ হলো না, শুরু করে দাও নোংরামি, পুরুষ হলে তার মা–বোন–বউ–মেয়ে কেউই রেহাই পায় না। আর মেয়ে হলে তো কথাই নাই। দলবল নিয়ে চলে তাকে ভার্চুয়াল ধর্ষণ।
সংরক্ষিত আসনের সাংসদ জনাবা বাপ্পীকে জানাই, পৃথিবীর সব থেকে ক্ষমতাধর ব্যক্তিদের নিয়ে হরদম ট্রল হচ্ছে। কী মাত্রার ট্রল হয়, তা একটু পড়ে দেখেন না হয়। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে নিয়ে ট্রল দেখেছেন কখনও? শারমিন শামসের ট্রল তো অশালীন কিছু ছিল না। আপনি তাকে আপনার সমর্থকদের দিয়ে যেভাবে গালাগালি ও নোংরাভাবে হেনস্থা করালেন, তার কোনো তুলনা হয় না।
আপনি তা করতেই পারেন, অবশ্যই আপনার রুচি অনুযায়ী কাজ করবেন, আমাদের বলার কিছু নাই। কিন্তু আপনি যখন একজন সাংসদ, হোন না কেন সংরক্ষিত আসনের, আপনি সাংসদ তো। আপনার তো জবাবদিহিতা থাকতে হবে। এমন ন্যাক্কারজনক ঘটনা আপনি আপনার ফেসবুক ওয়ালে কেন হতে দেবেন? আপনি উপেক্ষা করতে পারেননি শারমিনের ট্রলকে, তা আপনার দুর্বল মনের পরিচায়ক। জনপ্রতিনিধিদের দায়িত্ব–কর্তব্য আপনার ভালো করে জানা উচিত বলেই মনে হয়। আপনার পদের মর্যাদা ধরে রাখা আপনারই দায়িত্ব। আপনি যা করলেন তা হলো এককথায় সাইবার ক্রাইম।
আমাদের প্রধানমন্ত্রীর অর্জনগুলি ম্লান হয়ে যায় তারই দলের কিছু মানুষের জন্য। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কি একবার ভেবে দেখবেন, দয়া করে?
বাংলাদেশে সব থেকে বেশি ট্রল হয় কেকা ফেরদৌসীকে নিয়ে। সারাবছর তাকে নিয়ে ট্রল চলে, বিশেষ করে রমজান মাসে উনার তো নিস্তার নাই। আপনি জনপ্রতিনিধি হলেও জনাবা কেকা আপনার থেকে শতগুণ পরিচিত ও জনপ্রিয়। দয়া করে দেখে নেবেন উনি কী উত্তর দিয়েছেন তার সাথে করা ট্রলের। এখানেই পার্থক্য মানুষে মানুষে। উনার ট্রলের উত্তরে পাওয়া যায় শিক্ষা, ধৈর্য, সংযম ও ফান। ট্রল ও স্যাটায়ার সম্পর্কে ধারণা আছে মনে করেছিলাম। যাক সেকথা। আপনাকে বলার আমার কিছুই নাই। কারণ আপনার কাছে আমার কোনো আশাই নাই। আপনার যে মনের পরিচয় আপনি তুলে ধরেছেন, তাতে আপনার কাছে কিছু প্রত্যাশা করা হবে গাঁজা খাওয়ারই শামিল।
তবে কখন থেকে শাহবাগ হয়ে গেল গাঁজাখোরদের আড্ডা????
ভাবেন একটু সবাই, যারা এখন শাহবাগকে গালি হিসাবে দিতে চান।