‘নিরাপদ’ যৌন মিলন নারীর জন্য নিরাপদ?

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক:

 ‘যৌন সম্পর্ক’ নিয়ে জানার কী আছে? দাদী-নানীরা এসব না জেনেই বাপ-চাচাদের জন্ম দেয় নাই? ইহ্, যৌন শিক্ষা! আর যে কত কী শুনবো…’ না, ধার করা কোন সংলাপ নয়, আমার পরিবারের একজনের উক্তি কানে লেগে আছে। ‘যৌন’ ব্যাপারটা যেখানে শুধুমাত্র বাচ্চা পয়দা দেয়ার প্রক্রিয়া, সেখানে নারীর শিক্ষার কী আছে!!! নারী তো কেবলমাত্র ধারক…

না না, আমি আসলে যৌনশিক্ষার গুরুত্ব নিয়ে লিখতে বসিনি। বাংলাদেশী মধ্যবিত্ত মানসিকতায় বড় হয়ে ওঠা মেয়েদের কাছে যৌনশিক্ষা কী, তা আঁচ করা যায় যখন ‘শিক্ষা’ বিষয়টিও তাদের কাছে স্পর্শকাতর ‘যৌন’ বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। তবে যথাযথ শিক্ষার অভাবে নিজে কী বিপাকে পড়েছি, বসেছি সেই কথা লিখতে। আমার অভিজ্ঞতা সবাইকে জানাতে চাই, পড়লে যদি কেউ একই রকম বিপদ থেকে রক্ষা পায়।

ওই যে বললাম, ‘যৌন’ ব্যাপারটা যেখানে শুধুমাত্র বাচ্চা পয়দা দেয়ার প্রক্রিয়া এবং নারী শুধুমাত্র ধারক- আর তাই বাচ্চা হওয়া ঠেকাতে অর্থাৎ জন্ম নিয়ন্ত্রণ ঠেকাতে পিল বলেন, ইনজেকশন বলেন, আর যাই বলেন- সবই কিন্তু ব্যবহার করতে হবে নারীর। পুরুষের খায়েশ বিলাস ভোগ ব্যসনে কোন বাধা যেন না আসে, নারীর উপর প্রয়োগ করা যায় প্রায় ২০ ধরনের জন্মনিয়ন্ত্রক পদ্ধতি। বিভিন্ন মেয়াদি হরেক রকম পিল, আইইউএস, ফিমেল কনডম, প্যাচ, ইমপ্ল্যান্ট, কয়েল, ভ্যাজাইনাল রিং, স্টেরিলাইজেশন, ক্যাপ- আরও কত কী!!! এসব জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির সাইড এফেক্ট, ঘড়ির কাঁটায় ঠিক করা ব্যবহার বিধি, লোকলজ্জা নিয়ে কথা না বলি?

না না, পুরুষদের খাটো করে দেখছি না। যদি তাদের ব্যবহারে আপত্তি না থাকে তো তাদের জন্যও অাছে, আদি ও অকৃত্রিক কনডম। আর? ভ্যাসেকটমি করে চিরতরে সন্তান জন্মদানে অক্ষম হওয়া ছাড়া তাদের জন্য স্বল্প, মধ্যম, দীর্ঘ কোনো মেয়াদীই অন্য কোন জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি পুরুষের জন্য নয়। আবিষ্কার হয়নি, না আবিষ্কার করা হয়নি- সে তর্কে যাবো না। দরকার কি? গর্ভ তো ধারণ করে নারী- পুরুষের জন্য তো ভোগ, উপভোগ কিংবা সম্ভোভের সুযোগ আর সম্ভাবনার অবারিত দ্বার। গর্ভ ধারণ যাতে না হয়? আছে নিরাপদ যৌন সম্পর্কের মুলো, নারীর সামনে ঝুলিয়ে দিলেই হলো।

কিন্তু এই ‘নিরাপদ’ যৌন সম্পর্কের উপকরণ অর্থাৎ কনডম কতটুকু নিরাপদ নারীর জন্য? ওই যে বলছিলাম ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা- জ্ঞানগর্ভ প্যাঁচালে না গিয়ে সেটা বলি।

আমি বিবাহিতা- তিনমাস হয়েছে বিয়ের। স্বামী শিক্ষিত এবং প্রগতিশীল। প্রেমের বিয়ে না হলেও অমতে কিংবা চাপিয়ে দেয়া বিয়ে নয়- কথায়, কাজে, ফ্রিকোয়েন্সিতে মিলে গেল- দেখলাম সহ্য করতে পারছি, তাই পারিবারিক বিয়ে। বলা চলে সুখেই আছি। 

যেহেতু কনডমে অরুচি নেই, তো চলছে একরাতের স্বামী-স্ত্রীর সামাজিক ‘নিরাপদ যৌন সম্পর্ক’। প্রক্রিয়া শেষ হলে টের পেলাম, কনডম উধাও। দুজনেই ভাবলাম, বিছানার কোথাও হয়তো পড়ে আছে। পাত্তা দিলাম না। কিছুক্ষণ পরে বুয়া আসবে ঘর পরিষ্কার করে বিছানার চাদর বদলে দিতে, তাই খোঁজ শুরু হলো ব্যবহৃত কনডমটির। বিবাহ বহির্ভূত ‘অবৈধ’ সম্পর্ক নয়- তবুও তো আমরা সামাজিক, ‘মাইনষে বলবে কী?’ কিন্তু হতাশ, কোথাও নেই। বুয়াকে কাল বদলে দেবেন বলে ভাগালাম, খোঁজ চলছেই। হুট করে জিজ্ঞেস করলাম, ‘আচ্ছা, কনডম আমার ভিতরে চলে যায়নি তো?’ বাচ্চাদের উদ্ভট প্রশ্নে বড়রা যেমন তাকায়, বিরক্ত হয়ে তেমন দৃষ্টিতে তাকিয়ে অামার স্বামী বলে, ‘ধূর, গাধা। এমন হয় নাকি! সম্ভব না।’

স্বামীর প্রতি এবং তার অভিজ্ঞতার প্রতি আমার অগাধ শ্রদ্ধা- বিশ্বাস করলাম। কিন্তু কনডম বাবাজি গেল কই? এসি অফ করে জানালা দরজা খুলে দিয়ে কম্বলের ইঞ্চি ইঞ্চি, খাটের চিপা চুপা, বালিশের কভারে এমনকি কার্পেটের তলায়ও খুঁজলাম- হতাশ। ততক্ষণে কেটে গেছে প্রায় তিন ঘন্টা।

‘আর ইউ সিওর, আমার ভিতরে থাকার পসিবিলিটি নেই?’ এবার আমার প্রশ্নে স্বামী মহাশয় দ্বিধায় পড়ে গেল। ‘না, কিন্তু তা কী করে হয়। কখনো তো শুনিনি।’ তার ইতস্তত উত্তরে আমার কলিজা ঠাণ্ডা, সত্যিই যদি এটা আমার ভিতরে থাকে!

খুঁজে তো পাওয়া গেল না, আমার যোনীতে থাকতেও তো পারে! কিন্তু কাকে জিজ্ঞেস করা যায়? আর এই প্রশ্ন জিজ্ঞাসাই বা করবো কিভাবে? শেষমেশ স্বামী আমার জিজ্ঞেস করলো গুগল ভাইয়াকে, সার্চ দিতেই গুগল ভাইয়ার উত্তর- সম্ভব। এমন অসংখ্য ঘটনা আছে যেখানে যৌন মিলনের সময় কনডম ঢুকে যায় নারীর যোনীতে এবং এটা কোনো ভয়াবহ ব্যাপারও না। ভয়াবহ হয় তখন, যখন চার পাঁচ ঘন্টা ওটা যোনীর ভিতর আটকে থাকবে। ইনফেকশন হয়ে যেতে পারে, আর ইনফেকশন থেকেই হতে পারে ক্ষতিকর কিছু।

ব্যস, গুগল ভাইয়ার উত্তরে তো আমার হাত পা ঠাণ্ডা। শ্বাস নিতে পর্যন্ত ভয় পাচ্ছি, রীতিমতো মাথা ঘুরছে।

যাইহোক, সার্চ দিয়েই জানা গেল কী করে ওটা বের করতে হবে। দুটো আঙুল ভ্যাজাইনায় ঢুকিয়ে টেনে আনতে হবে, সেটা সম্ভব না হলে ডাক্তারের দ্বারস্থ হওয়া ছাড়া গতি নেই। একে ভয়ে আমার দুনিয়া গোল, তার উপর দুই দুই বার চেষ্টা করেও যখন ফলাফল শূণ্য- আমার প্রায় অজ্ঞান দশা। আমার স্বামী যে খুব সুস্থির, তা নয়। আমি পারছি না দেখে সে বলে, ‘আমি একবার ট্রাই করি?’ ‘নো ওয়ে’ বলেই ঢুকে গেলাম বাথরুমে। ‘ডু অর ডাই’ সিচুয়েশন। দুই আঙুল নয়, এক আঙুল দিয়েই আমার যোনীতে টের পেলাম কনডমের অস্তিত্ব। কিন্তু ততক্ষণে ভেঙে পড়েছি আমি, খুব কষ্টে টেনে বের করে ফ্লোরে ফেলেই চিৎকার দিলাম, ‘বাবু!’।

বাথরুমের মেঝেতে পড়ে আছে জবজবে রক্তমাখা এক কনডম, আমিও পড়ে আছি ত্যানার মতো। আমার স্বামী খুব সাবধানে আমাকে ধরে বিছানায় নিয়ে এলো- ব্লিডিং হচ্ছে, আমার অবস্থা কেরোসিন। বেচারা আমাকে জড়িয়ে ধরে বললো, ‘নো মোর সেক্স, আই ওয়ান্ট মাই ওয়াইফ অ্যালাইভ’।

পুরো ঘটনাটা নিয়ে আমরা প্রায়ই বেদম হাসি, কারণ ততটা ক্ষতিকর কিছু হয়নি আমার। কিন্তু সবার ক্ষেত্রে এমন নাও হতে পারে-  হতবুদ্ধি হয়ে যাওয়া, ভয়, অবহেলা, অনুভূতি শূণ্যতা- নানা কারণে নারীর বিপদ ডেকে আনতে পারে কনডম। বন্ধুর মতো আমার স্বামী- পাশেই ছিলো, যন্ত্রণাটা ভাগ করে নিয়েছে। তবুও তো ভয়, আতঙ্ক, লজ্জা, ব্যথা আর যন্ত্রণাটা আমার।

অভিজ্ঞতা থেকে আমি জানি, তাই আপনাকে প্রশ্ন করি ‘নিরাপদ’ যৌন মিলন নারীর জন্য কতটুকু নিরাপদ?

শেয়ার করুন: