একটু ভিন্ন আঙ্গিকে ‘অপু’কে দেখা

ফারাহ রুম্মানী:
“গত দুই দিন ধরে অপুর টেলিভিশনে দেয়া সাক্ষাতকারের বিভিন্ন লিংক এ গিয়ে আমি শুধু  কমেন্টগুলোই পড়ছিলাম। পরিশেষে আমার যা মনে হলো আমাদের সমাজের পুরুষগুলো আসলে বসে আছে বেশ্যা মাপার মানদণ্ড নিয়ে। কে দোষী বা নির্দোষ সেটা নিয়ে তাদের বিলক্ষণ মাথাব্যথা নাই, আছে শুধু নির্ধারণ করতে কে বেশ্যা বা নয়। 
আমি লেখাটা লিখলাম, কারণ দৃশ্যপটটা একটু ভিন্নরকম মনে হয়েছে আমার। এর আগেও অনেক ঘটনা ঘটেছে, তা দেখেছি, মনে মনে মন্তব্য করেছি; কিন্তু এবার দেখলাম, অপু যে একজন মা। আমিও তো মা। সেই উপলব্ধি থেকে আজকের এই লেখা। 
আমি অপুর বলা কথাগুলো মনোযোগ দিয়ে শোনার চেষ্টা করেছি। সাংবাদিকরা একটা কথাই জোর দিয়ে বার বার বলছিলো, কেন এতোদিন পর এইসব কথা? অপু বলছিল “আমি পারছিলাম না। বাচ্চাকে ফিডার খাওয়াচছিলাম আবার এসে ফোন ধরছি; আমি এইসব নিতে পারছিলাম না।
কথাটা আসলে সে ঠিক বোঝাতে পারছিল না। কিন্তু আমি নিজেকে তার অবস্থানে রেখে চিন্তা করেছি, একজন মেয়ে যখন মা হয় এটা তার বিরাট প্রাপ্তি। এই প্রাপ্তিটা পৃথিবীকে জানিয়ে দেবার ইচ্ছে হয়। হয়তো অপুর বেবিটা না হলে ঘটনাটা আরও দিন চাপা থাকতো, বা কেউ জানতোই না কোনদিন।
মা হবার সময় শরীরে অনেক হরমোনাল পরিবর্তন আসে। আবার হবার পরও অনেকেই মানসিক ট্রমাতে ভোগেন।
সবাইকে অনুরোধ করি জাস্ট একবার চিন্তা করেন অপুর অবস্থান থেকে। তিনি দেশের একজন জনপ্রিয় নায়িকা ছিলেন, যখন কনসিভ করলেন, সবার অন্তরালে চলে গেলেন। নিজের ক্যারিয়ার, স্বামীর ক্যারিয়ার আর তাদের ভবিষ্যত চিন্তা করে। ফিল্ম ছিল তার প্যাশন, প্রফেশন; এ অবস্থায় কতোটা কঠিন সবকিছু থেকে নিজেকে এই গুটিয়ে নেয়া।
শাকিব বলেছেন, “অপু নায়িকা হতে চায়, বউ নয়।” শাকিবও কিন্তু শুধু নায়ক হতে চান; বাবা বা স্বামী নয়। অপু কিন্তু মা হয়েছেন। তার সন্তানকে নিয়ে ক্যামেরার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে প্রমাণ করেছেন সবকিছুর ঊর্দ্ধে তার মাতৃত্ব। 
অপুর ওই সময়গুলোতে শাকিব তার পাশে ছিলেন না। শাকিব তার ক্যারিয়ার নিয়ে ব্যস্ত এবং ছবিগুলো হিট করছিলো। যদি শাকিব তাকে মেন্টালি সাপোর্ট করতেন, হয়তো অপুর ততোখানি খারাপ লাগতো না। অপু বলছিলেন, শাকিব বেশ কয়েকবার ভারতে শুটিংয়ে গেলেও অপুর সাথে দেখা হয়নি। এ পরিস্থিতিতে অপুর মানসিক অবস্থাটি শুধু একবার ভাবার চেষ্টা করুন।
প্রেগন্যান্সির সময় মানসিক সাপোর্ট অনেক বিশাল ভূমিকা পালন করে। তারপর তার বাচ্চা হলো, তার ফিগার তো স্বভাবতই একটু মোটা হবেই এটাই ন্যাচারাল। হয়তো এইসব কিছু নিয়ে পোস্টপারটাম ডিপ্রেশান এ ভুগছিলেন। ডিপ্রেশনের জন্য যে কারণগুলো কাজ করে তার সবগুলোই অপুর জীবনে বিদ্যমান। অপু কী ভয়ংকর সময় পার করে এসেছেন বা করছেন, এখন অবধি তা আমাদের তথাকথিত সমাজের বোধগম্যের বাইরে। 
উন্নত দেশ গুলোতে এই ধরনের ডিপ্রেশন এর জন্য অনেক হেল্পলাইন কাজ করে। অনেক ধরনের সাপোর্ট পাওয়া যায়, যার কথা আমাদের দেশে স্বাভাবিক পরিস্থিতিতেও শোনা যায় না। আর সেক্ষেত্রে অপুর পরিস্থিতি যথেষ্ট নাজুক। যার ফলশ্রুতিতে এই পদক্ষেপ। হয়তো একটু রিলিফ পাওয়ার জন্য। 
শাকিব না হয় নায়ক বলে অনুধাবন করতে পারছে না। কিন্তু আমাদের তথাকথিত সমাজে তো অনেক শিক্ষিত মানুষ আছে, যারা হয়তো এই বিষয়গুলো নিয়ে জানেন, ভাবেন এবং কাজ করেন!। তারা কীভাবে বসে আছেন চুপচাপ! 
সমালোচনা করা অত্যন্ত সহজ, ততোটাই কঠিন সমাজে একটা সাপোর্ট সিস্টেম তৈরি করা। অপুকে গালি দেবার আগে এই বিষয়গুলো ভেবে দেখবেন আশা করি।”
শেয়ার করুন: