লোপা তাসনিম:
আমরা অপু বিশ্বাসের মতো শক্তিশালী নায়িকাকেও ‘অবলা নারী’ বানিয়ে ফেললাম রাতারাতি। শাবানা, ববিতা আপারাই অবলা ছিলেন না কখনও, আর এ যুগের অপুদের অবলা ভাবার তো প্রশ্নই ওঠে না। অপুর “আমি শুধু একটু সম্মান চাই”, “আমিও তো একটা মেয়েমানুষ”, “ওরও তো মা-বোন আছে” কথাগুলা খুবই বিরক্তিকর। যেসব কর্মজীবী, স্বনির্ভর, আধুনিক নারী স্বয়ম্বরা হোন, ভালবেসে বিয়ে করেন, এক সময় ভালবাসা জানালা দিয়ে পালালেও তাদের দায়িত্ব পুরুষদেরকে বয়ে বেড়াতে হবে বাকি জীবন? কেন?
এই ভাবনাটাই মেয়েদের জন্যে চূড়ান্ত রকমের অপমানজনক। শাকিব বলেছে যে বাচ্চার দায়িত্ব নেবে, কিন্তু অপুর নয়। অপু একজন শীর্ষ স্থানের নায়িকা ছিল। ইচ্ছা করলে আর একটু পরিশ্রমী হলে সে আবার ফিরে আসতে পারে তার আগের জায়গাটিতে। তার মতো একজন সামাজিক আইকনের দায়িত্ব কোনো পুরুষকে নিতেই বা হবে কেন?
তারা একদিন ভালবাসার বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে বিয়ে করেছিল। যদি ভালবাসা আর না-ই থাকে, আর নারী পুরুষ উভয়েই সক্ষম ও সচ্ছল হয়, তাহলে কেন মেয়েটাকে পুরুষের “দায়িত্ব” হয়ে দিন কাটাতে হবে। কই অপু শাকিবের দায়িত্ব নেবে কী নেবে না, সে নিয়ে তো কারও মাথা ব্যথা নেই। তাহলে শাকিবেরই বা অপুর দায়িত্ব নিতে হবে কেন?
আমরা সব সময় মেয়েটাকেই ভিক্টিম ভাবতে ভালবাসি। কে জানে, বিয়ের ও অন্তঃসত্ত্বা হবার খবর লুকিয়ে রাখার পেছনে অপু বিশ্বাসেরও কোন স্বার্থ কাজ করে থাকতে পারে। হয়তো সে ভেবেছিল তারও অভিনয় জীবন শেষ হয়ে যাবে সত্যি কথা জানাজানি হলে, যেমন হয় বলিউডে। নায়িকার বিয়ে হলো তো অভিনয়ের ক্যারিয়ার মোটামুটি শেষ তার। অথচ নায়করা নায়ক চরিত্রে দাপিয়ে বেড়ায় বহুদিন।
তারপর খবরে দেখলাম, অপু বিশ্বাসকে নিয়ে সিনেমা বানাবার পরিকল্পনা হয়ে গেছে এর মধ্যেই সত্যজিৎ রায়ের বিখ্যাত ছবির অনুকরণে ‘অপুর সংসার’ নামে। খ্যাতি, অর্থ, জনপ্রিয়তার মোহ তার মধ্যেও কাজ করে থাকতে পারে। কেন সে শাকিবের কথায় রাজী হয়ে এতো বছর বিয়ের খবর লুকিয়ে রেখেছে, এ নিয়ে আমরা জল্পনা কল্পনা করতে পারি, কিন্তু আসল কথা শুধু তারাই জানে।