মুখ বুজেঁ আর কতোদিন!

হিয়া সাঁঝদীপ: ভর দুপুর। ল্যাবএইড থেকে একটা রিকশা নিয়ে ঘরে ফিরছি। পান্থপথ সিগন্যালে আটকে আছি। একটা বাসের দিকে তাকিয়ে চোখ আটকে গেলো। মেয়েটি বাসে উঠছে আর তাকে উঠতে সাহায্য করা হচ্ছে তার শরীরের দুদিকে হাত রেখে। একটি মেয়ের দুই হাতের নীচে ধরে সাহায্য করলে তার স্তনেও একটু স্পর্শ করা যায়। এটুকু ভদ্রলোকের উপরি প্রাপ্তি।

অনেকে যেটা শালীন পোশাক বলেন সালোয়ার কামিজ, মেয়েটি তাই পরেছিল। উপরে ওড়নাও দেখলাম ঠিকঠাক। যারা বলেন পোশাকের দোষ, মেয়েটির পোশাকে কি দোষ ছিলো? মেয়েটি ওঠার পর মুখ কালো করে দাঁড়িয়ে আছেন। কিন্তু আমি আর বসে থাকতে পারলাম না। চলন্ত না, এমন বাসে উঠতে কেন এই সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়া হলো জানতে আমার খুব ইচ্ছে হচ্ছিলো।

নেমে গিয়ে জিজ্ঞ্যেস করাতে আমাকে বলা হলো যাকে ধরে তুলেছি তার যদি অসুবিধে না হয়, আপনার সমস্যা কোথায়? তাইতো আমার সমস্যা কোথায়? যার জন্য আমি নেমে এসেছি, তিনি একদম চুপ। মেয়েটি কেন চুপ? তিনি কেন কথা বললেন না? কেন নেমে এসে আমার পাশে দাঁড়ালেন না? এই শহরে কি একটি মাত্র বাস ছিলো সেদিন?

একজন মহিলা বললেন “আধুনিকতার নামে আমার মতো কিছু মেয়ে নাকি আজকাল রাস্তাঘাটে গলাবাজি করছে”। তা গলা যখন আছেই তখন শুধু অন্যের দুর্নাম না করে আমার মতো গলাবাজি করে দেখুন না একবার। বাসের ভিতর থেকে কয়েকজন ভদ্রলোক মন্তব্য করলেন, যান তো আপা, খামোখা ঝামেলা করবেন না। আমি আর ঝামেলা করতে পারিনি। কিন্তু ভাইয়েরা আমার যেদিন চুপ থাকা আপারাও ঝামেলা করতে শিখবেন সেদিন আপনারা তাদের থামিয়ে দিতে পারবেন কি?

মেয়েটি বললো, আপনি যান আপু, আমি ঠিক আছি। মেয়েটির মুখের দিকে তাকিয়ে নিলাম, চোখ ছলছল করলেও মেয়েটি মুখে হাসি আনার চেষ্টা করে বললেন, তিনি ঠিক আছেন। তখন আবুল হাসানের দুটো লাইন আমার মনে পড়ছিলো খুব,

ঝিনুক নীরবে সহো

ঝিনুক নীরবে সহো,

ঝিনুক নীরবে সহে যাও

ভিতরে বিষের বালি,

মুখ বুঁজে মুক্তা ফলাও!

মেয়ে আর কতদিন মুখ বুঁজে মুক্তা ফলাবে, বলতে পারো?

শেয়ার করুন: