ও-তে ওড়না, ওড়না চাই!

আফরিন শরীফ বিথী: এ বছর প্রথম শ্রেণীর বাংলা পাঠ্যবইয়ে অক্ষর জ্ঞান সূচিতে “ও” অক্ষর চেনানোর উপকরণ হিসেবে ও-তে “ওড়না ” ব্যবহার করা হয়েছে। ওড়না শব্দটির জন্য বাক্য তৈরি করা হয়েছে “ওড়না চাই”। অার ঔ -এর জন্য ঔষধ, বাক্য তৈরি করা হয়েছে, ঔষধ খাই। অর্থাৎ বাচ্চারা ছড়ার মতো মাথা দুলিয়ে দুলিয়ে পড়বে ও-তে ওড়না, ওড়না চাই; ঔ-তে ঔষধ, ঔষধ খাই। আর তাদের কোমলমতি শিশু মস্তিষ্কে আজীবনের জন্য গেঁথে যাবে ওড়না সংস্কৃতি।
আহ্ কী বুদ্ধি! কী সুচতুর সুদূরপ্রসারী নীলনকশা!
এর প্রতিক্রিয়া হিসেবে আসলে কী লিখবো ভেবে কূল পাচ্ছি না! আমরা কী সভ্যতার এই পর্যায়ে এসে পিছনে হাঁটতে শুরু করলাম! পাঠ্যপুস্তক বোর্ড কর্তৃপক্ষ কী কারো খোঁচা খেয়ে এই বোধোদয়ে সচকিত হয়ে উঠলো যে, হায়, হায় আমরা কী করছি, অনেক দূর চলে এসেছি তো, পিছনের দিকে যেতে হবে?
এছাড়া আর কোনো কারণ আমার মাথায় ঢুকছে না।
আচ্ছা ছেলে বাচ্চারাও তো পড়বে এই একই বই, তাই না? ওরাও তো পড়বে ও-তে ওড়না, ওড়না চাই। নাকি ছেলে বাচ্চা আর মেয়ে বাচ্চাদের জন্য আলাদা পুস্তক তৈরি করা হয়েছে? কিছুই তো বুঝতে পারছি না। ছেলে বাচ্চাগুলোও তো আদুরে কন্ঠে আবদার করে বসবে, আম্মু ওড়না চাই আমি! তখন কী বলবে আম্মু? ভেবে কূল পাচ্ছি না তো! বলবেন যে, ওড়না তো মেয়েরা পরে, ছেলেরা না। তখন ছেলে যদি আরও প্রশ্ন করে, কেন? তখন মা এর কী জবাব দেবেন?
ছোটবেলায় যা পড়বে মনে তো তাই গেঁথে যাবে, তাই না? হাসবো না কাঁদবো বুঝতে পারছি না।
আসলে হয়েছে কী, আমরা মারাত্মক ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে পড়েছি। ব্যাধির কারণে আমাদের ঘুম হচ্ছে না। তাই ঘুমানোর চেষ্টায় ভেড়া গোনার পদ্ধতি অবলম্বন করছি- 99,98,97,96,95……..! অর্থাৎ আমরা পিছন দিকে যাচ্ছি অন্ধের মত চোখ বন্ধ করে শান্তিতে ঘুমানোর জন্য।
কিন্তু হে ব্যাধিগ্রস্ত সমাজ, যদি আর ঘুম থেকে না জাগতে পারো, তাহলে কী হবে ভেবে দেখেছো? রাক্ষস-খোক্কস এসে খেয়ে ফেলবে ঘুমন্ত অবস্থায়। সভ্যতার অগ্রগতিতে তোমরা আর অবদান রাখা তো দূরের কথা,সুফলও ভোগ করতে পারবে না।
 
পাঠ্যপুস্তক বোর্ডকে একটা ফ্রি পরামর্শ দেই। আপনারা ধ-তে “ধর্ষক ” যুক্ত করে দিন। বাক্য হবে -“ধর্ষককে ঘৃণা করি”।পরের অক্ষর ন-তে হবে “নাটক”। বাক্য হবে -“আইনের নাটক করি”। বাচ্চারা ছড়া মিলিয়ে পড়বে -ধ-তে ধর্ষক, ধর্ষককে ঘৃণা করি; ন-তে নাটক, আইনের নাটক করি। ভাল হবে কিন্তু!
 
ছোটবেলা থেকেই বাচ্চারা প্রশাসনের বাইরের ভণ্ডামি এবং আইনের মারপ্যাঁচ বুঝতে পারবে। তাহলে বড় হয়ে তাদের আর মানসিক কষ্ট হবে না।
 
আরেকটা পরামর্শ দিয়ে যাই, ফ্রি-এর সাথে ফ্রি। যদি সংশোধন করার মতো শুভবুদ্ধির উদয় হয় আপনাদের তবে এটা করতে পারেন- ও- তে ওড়না আছে থাকুক, বাক্য তৈরি করেন ” ওড়না ব্যাধি চাই না, তিতা ঔষধ খাই না”।
 
বাচ্চারা ছড়া মিলিয়ে খুব আরাম করে ঔষধ খাওয়ার ভঙ্গি করে। কিন্তু যখন সত্যি ঔষধ খায় তখন বোঝে ঔষধ কত তিতা! তখন কিন্তু আর ঔষধ খেতে চায় না। কিন্তু ব্যাধি হলে তো ঔষধ খেতেই হবে। তখন তাকে জোর করে ঔষধ খাওয়ানো হয়। ঠিক তেমনি ওড়না দিয়ে বৌ সাজার মজা বাচ্চারা উপভোগ করবে ঠিকই, কিন্তু যখন বুঝবে ওড়না সংস্কৃতির স্বাদ কত তিতা, তখন আর ওড়না পড়তে চাইবে না। কিন্তু সামাজিক ব্যাধির কারণে তখনও তাকে জোর করেই ওড়না পরানো হবে, বস্তুত সে নিজেই পরতে বাধ্য হবে।
এই ব্যাধি প্রসঙ্গে একটি ইংরেজি প্রবাদ বলে যাই,অন্তর্নিহিত অর্থটা বুঝে নিয়েন-
“Prevention is better than cure.”
 
তাই ঠাট্টা- মশকরা যাই যা করি না কেন, সিরিয়াসলি প্রতিবাদ করে যাই, অবিলম্বে প্রথম শ্রেণীর বাংলা বইয়ের এই ওড়না শব্দের প্রয়োগ পরিবর্তন করা হোক।
শেয়ার করুন: