নিকুন্তিলাদের জন্য…

সাদিয়া নাসরিন:

প্রিয় নিকুন্তিলা,

গত একটা বছর ধরেই একটু একটু করে তোকে এই চিঠি লিখেছি আমি। এই বছরেই তুই কৈশোর আর তারুণ্যের মাঝামাঝি সময় অতিক্রম করবি। তাই তোকে লিখতে বসেছি। এই কথাগুলো তোকে লেখা। কিন্তু শুধু তোর জন্য নয়। আমি তোর জন্য যা যা চাই, তার সবটুকুই চাই এই পৃথিবীর সব নিকুন্তিলার জন্যও। আমি তোর মা এটি যেমন সত্যি, আমি এই বিশ্বের সব মেয়ের মা এটিও ধ্রুব। জানি তুই এখনই তেমন করে সব বুঝে উঠতে পারবি না। যখন তুই আকাশের মতো একলা হবি একদিন, সেদিন বুঝতে পারবি, আমি তোকে কী বলতে চেয়েছিলাম।

যেদিন তুই এলি আমাদের গোলাপ বাগান তৈরি করে, সেদিন এক উড়নচণ্ডি মেয়ে ‘মা’ হয়ে গিয়েছিলো। এক বাউণ্ডেলে-নাটক পাগল তরুণের “বাবা” হয়ে গৃহবাসী হবার দিনও ছিলো সেদিন। মেয়েদের এমনই ক্ষমতা, এমনই বদলে দিতে পারে সব। তুই জন্মের অনেক আগেই আমি জানতাম তুই আসবি আমার কাছে, তোকে আসতে হবেই। আমি যেদিন প্রথম জানতে পারলাম আমি মা হবো, স্পষ্ট মনে আছে, এক ঝলক সোনার আলো ছড়িয়ে আমার চোখের সামনে এসে দাঁড়িয়েছিলি তুই। তারপর তুই এলি সেই সন্ধ্যা রাতে, আকাশে তখন একঝাঁক তারার ঝিকিমিকি। সন্ধ্যাতারা হয়ে বাবার কোলে চড়লি তুই। কিন্তু আমাদের দেখা হলো মধ্যরাতে।

সবাই সন্ধ্যা রাতের তারা দেখেছে, আমি দেখলাম মধ্যরাতের চাঁদ। আমরা দুজন পূর্ণ চোখে দুজনকে দেখলাম। আমরা দুজন দুজনের হাত ধরলাম। গভীর রাতের নিয়ন আলোয় আমরা পেলাম আমাদের। পেয়েছি, কিন্তু এ পাওয়া তৃপ্ত করতে পারে না। আরো চাই, আরো কাছে; আরো দিতে চাই, আরো কিছু। আমার সারাটা দিন, একলা সময়ের কবিতা, সব তোকে দিয়ে ও মনে হয় দেয়া হয়নি কিছুই। তোকে দিতে ইচ্ছে করে আমার যা আছে স-ব, যা নেই তার ও সবটুকু। তোর নাম আমি ঠিক করে রেখছিলাম। পোষাকি যে নামেই যারা তোকে ডাকুক না কেন, আমি তোকে নিকুন্তিলা ডাকি। কেন ডাকি সে শুধু তুই জানিস, আর আমি জানি। তোর আমার অনেক একান্ত গোপন কিছুর এটা ও একটা।

নিকুন্তিলা মা আমার, তোরা খুব জটিল আর অনিশ্চিত একটা সময়ে এ পৃথিবীতে এসেছিস। এটা এমন এক সময়, যখন সবাই পেছনে হাঁটছে। আজকের এই দুনিয়া ধর্মব্যবসা, অস্ত্রব্যবসা, পুঁজিবাদী যৌনতা, আগ্রাসন, ধর্ষন, নিপীড়নে আক্রান্ত। জরাগ্রস্ত এই সময়ে তোরা হয়তো জানতে পারবি না আমাদের পূর্বনারীদের কথা, যাঁরা আরো দু’শ বছর আগে পুরুষতান্ত্রিকতার অন্ধ বদ্ধ ঘরে বসেই তোর–আমার মুক্তির গান গেয়েছিলেন। তোরা অবাক হবি জেনে, সেই কোন অন্ধকার যুগে পুরুষের তৈরী অচলায়তন বসেই রাসসুন্দরী দেবী, কৈলাশবাসিনী দেবীরা লিখে গিয়েছিলেন নিজের জীবনকাহিনী।

এই অতি আধুনিক যুগে তোরা চিনতে পারবি না, সেই উনিশ শতকে এই দেশেরই এক অজপাড়াগাঁয়ে জন্ম নিয়ে বিশ্বের প্রথম আধুনিক শিক্ষিত নারী হয়ে উঠেছিলেন জ্ঞানদানন্দিনী দেবী। তোরা জানিস না পুরুষতন্ত্রের বুক চিরে বের হয়ে আসা প্রথম নারীবাদী বেগম রোকেয়াকে; তোদের পরিচয় করিয়ে দেয়া হয়নি সংগ্রামী কৃষক নেতা ইলা মিত্রকে, মহান বিপ্লবী প্রীতিলতাকে, শহীদ জননী জাহানারা ইমামের সাথে। সেই পুরুষ শাসিত সমাজের অচলায়তন ভেঙ্গে আলো নিয়ে আসা বামা সুন্দরী, ব্রাহ্মময়ী দেবী, রাধারানী, মনোরমা, ফয়জুন্নেসা এবং আরো অসংখ্য মহান নারীদের গল্পও তোদের শোনানো হয়নি।

আমার নিকুন্তিলা, সেই অন্ধকার এখন আর নেই। এখন আলোর যুগ, প্রযুক্তি নিয়ে খেলা করে জীবনের পথ হাঁটিস তোরা। তবু তোদের নিয়ে শঙ্কার শেষ নেই আমার। বিশ্বজুড়ে প্রতিমুহূর্তে ষড়যন্ত্র চলছে তোদের আরো একশ বছর পিছিয়ে দেবার। আমাদের পূর্বনারীদের ঐতিহ্যের পথ ভুলে আজ ভুল পথে তোরা ফিরে যাচ্ছিস এক অদ্ভুত অন্ধকারে। বিশ্বব্যাপী পর্ন বাজারের আগ্রাসন, তোদের চারপাশে লাল-নীল নেশার হাতছানি, বিকারগ্রস্ত পুরুষের ফাঁদ, যৌনপণ্যের পসরা আর রঙ্গীন হিজাবে ঢেকে সম্ভ্রম রক্ষা করার শিক্ষা। সুজ্যান গ্রিফিন এর মতো তোরা সবাই কেবল ধর্ষণের ভয় নিয়ে বেঁচে থাকছিস। গ্রাম, শহর, রাস্তা, খেলার মাঠ, ফসলের মাঠ, হলুদের খেত, যানবাহন, হাসপাতাল, কর্মক্ষেত্র, সেনানিবাস, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, থানা, নিজের ঘর…এক ইঞ্চি জায়গা আর বাকি নেই যেখানে তোদের একটু নিরাপত্তা দিতে পারি আমরা।

মা আমার, তোদের সামনে কঠিন লড়াইয়ের পথ। ধর্ম ব্যবসা, পুরুষতন্ত্র, আর পুঁজিবাদ এই তিন পরাশক্তি যেখানে জোট বেঁধেছে, সেই লড়াইয়ের ময়দানে একা দাঁড়াতে হবে তোদের। সেই শক্তি তোদের অর্জন করতে হবে। তোদের সতর্ক থাকতে হবে। তোদের চারপাশে পাতা হয়েছে এক ভয়ঙ্কর রাজনীতির চিকন জাল যেখানে তোদের আত্মবিশ্বাস ধংস করে দিয়ে এই পুঁজিবাদী পুরুষতন্ত্র তোকে পণ্য বানিয়ে বাজারে তুলবে। সৌন্দর্যের জাল পেতে ওয়েক্সিং, ফেসিয়াল, জিরো ফিগার, ট্রেডমিল, সিলিকন ব্রেস্ট এ ব্যস্ত রেখে তোদের ভুলিয়ে রাখা হবে। যেন তোরা নিজের উপর বিশ্বাস হারিয়ে সৌন্দর্য চর্চার আয়নার সামনেই পার করে না দিস তোরা জীবনের মুল্যবান সময়গুলো।

সব সময় মনে রাখবি, পুরুষতন্ত্রের নিয়মই হলো যে কোন কৌশলে মেয়েদের অধিকার বোধটুকু দুমড়ে-মুচড়ে নষ্ট করা। মেয়েরা যখনই নিজের মুল্য বোঝার চেষ্টা করে, তখনই যেকোনো মূল্যে সেই লক্ষ্য থেকে সরিয়ে দেওয়া। কখনো অলঙ্কারের নামে শেকল পরিয়ে, কখনো কর্পোরেট হিজাবে মুড়িয়ে, কখনো সুন্দরী প্রতিযোগিতায় ব্যস্ত রেখে দূরে রাখা হবে স্বনির্ভরতার চিন্তা থেকে। খেয়াল রাখবি যেন এই ভয়ঙ্কর রাজনীতির ফাঁদে পড়ে বডি শেপিং আর বিউটিফিকেশনের পেছনেই অর্থ, সময়, মাথা, সব ব্যয় করে জীবন ধারনের জন্য পুরুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরতে না হয়। উপরে নকল বা বাড়তি কিছু চাপিয়ে বোঝা বাড়াসনে। না বাড়তি রঙ, না বাড়তি পোষাক। মনে রাখিস, পাথর চাপা ঘাস বিবর্ণ হয়ে যায়। বিবর্ণ মেয়েদের পক্ষে প্রতিবাদ তো দূরের কথা, অধিকার বোধও আশা করা যায় না। তাই আমি বারবার তোকে আত্মবিশ্বাস রাখার কথা বলি। নিজের উপর বিশ্বাস না থাকলে বৈষম্য আর অনিয়মকে চ্যালেঞ্জ করার সাহস ও প্রতিবাদের ভাষা হারাবি।   

মা, আমার! তোদের খুব সাবধান থাকতে হবে। এমন একটা সময় বিভ্রান্ত সময় তোদের অতিক্রম করতে হচ্ছে যখন মেয়েরা নিজেরাই বলছে তারা স্বাধীনতা চায় না!! জীবনের সম্ভাবনা আর যোগ্যতাকে তুচ্ছ করে কর্পোরেট বিয়ের রোশনাই, ক্যামেরার ফ্লাশলাইট আর সামজিকতার আগ্রাসনে তলিয়ে যাচ্ছে দাসপ্রথার নতুন ফর্মে। মেয়েরা শিক্ষিত হচ্ছে, কিন্তু স্বনির্ভর হচ্ছে না; রোজগার করছে, কিন্তু স্বাধীন হচ্ছে না। শিক্ষিত স্ত্রী হয়ে কেবল বাচ্চাদের স্কুল, পরীক্ষা, বাজারঘাট, ব্যাঙ্কিং-বিলিং-ট্যাক্স ঝামেলার চাপ সামলাতে শেষ হয়ে যাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী মেয়েরা। এসব দেখে আমার ভয় হয়, তোদের মধ্য থেকে বের হয়ে আসবে না আর একজন ভার্জিনিয়া উলফ, বেভোয়ার, এড্রিয়েন, কমলা ভাসিন বা তসলিমা নাসরিন।

তবু লড়াই করে যেতে হবে মেয়ে আমার, কখনোই যুদ্ধ বন্ধ করা যাবে না। মনে রাখবি, লড়াই ছাড়া মুক্তি মেলে না, সমতা আসে না। ‘মুক্তি’ নিরাপদ আরামে স্নান করার চৌবাচ্চা নয়। মুক্তি মানে অপার সমুদ্র। আছে হাঙ্গর, কুমির আর উত্তাল ঢেউ। সবার আগে তোকে লড়াই করতে হবে নিজের সাথে। নিজেকে মুক্ত করতে হবে নিজের ভয় থেকে। সেই শক্তি তোদের অর্জন করতে হবে। মনে রাখবি তুই নারী, এই বিশ্বে সভ্যতার উত্তরাধিকার ধারণ করিস তুই। নারী বলে নিজেকে নিয়ে অহঙ্কার করতে শিখবি। নারী বলে তোদের রক্তের প্রতি কণাকে পবিত্র ভাবতে শিখবি। এই জীবন তোর। এর চালক তুই হবি। তোর জায়গা তোকেই করে নিতে হবে।

ভার্জিনিয়া উলফ নামে একজন লেখক ছিলেন, যাঁর কথাগুলো সব সময় মনে রাখবি “ মেয়েদের অক্ষমতার জন্য দায়ী সামাজিক ও অর্থনৈতিক বাঁধা। মেয়েরা যখন কিছু লিখতে চায় তখন তার একটি ঘর আর টাকা খুব প্রয়োজন হয়। এবং স্বীকৃতি পেতে হলে অবশ্যই পুরুষশাসিত সমাজের শোষণ, কুসংস্কার, ও অর্থনৈতিক স্বার্থপরতার মতো প্রবল বাঁধাগুলো অতিক্রম করতে হবে। ন্যুনতম একটা নিজস্ব ঘর শুধুমাত্র ওই অবস্থা থেকে মেয়েদের মুক্ত করতে পারবে। এই ঘরের চাবিটা তার হাতেই থাকবে এবং চার দেয়ালের তার নিজস্ব স্বাধীনতা থাকবে।”

ভার্জিনিয়ার মতো তোদের লড়াই করতে হবে নিজের জীবন, নিজের ঘর আর নিজের পৃথিবীর জন্য। মনে রাখবি, শুধু মানিব্যাগ এর জোর থাকলে হবে না। মানিব্যাগ এর মালিকানা নিজের হাতে রাখার জন্য মনের জোরও খুব জরুরি। তুই জানিস, আমি সেই নারী, যে সারাজীবন লড়াই করেছি মন আর মানিব্যাগ এর জোর একসাথে তৈরি করার জন্য।

আমার নিকুন্তিলা, সম্পর্ককে অতিক্রম করার চেষ্টা করবি। জেনে রাখিস, প্রতিটা সম্পর্কই নিয়ন্ত্রণকামী এবং কোনো না কোনো ভাবে আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করে। তাই সম্পর্কে সমতার কথা উচ্চারণ করবি দৃপ্ত কন্ঠে। নিজের  স্বাধীনতা অক্ষত রাখতে চাইলে, অন্যজনের স্বাধীনতাটুকুও যেন কোন অসতর্ক মুহুর্তে তোর দ্বারা নষ্ট না হয় সে খেয়াল রাখবি। সমান অধিকার চাইলে সবার আগে দায়িত্বটাও সমানভাবেই নিতে হবে। এখানে মায়া-মমতা-আবেগের কোন জায়গা নেই। যখনই অন্যায় দেখবি, প্রতিরোধ করবি। অন্যায়, সে আয়তনে ওজনে যতোই ছোট হোক না কেন, তা থামাতে দেরি করবি না। চোখে চোখ রেখে কথা বলবি। অন্যজনকেও বলতে দিবি। যদি বিরোধ হয়, হবে। তর্ক-বিরোধ মিমাংসার পর যে পথ তৈরী হবে সে পথ বোঝাপড়ার। সে পথেই হাঁটবি। নিজের মনের কথা মন দিয়ে শুনবি, মাথার কথা মাথা দিয়েই বিবেচনা করবি। অনেক সময় মন আর মাথার সংঘর্ষ হবে। সেই সংঘর্ষকে মোকাবেলা করেই সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা অর্জন করবি।

নিকুন্তিলা মা আমার! ভুলে যাবি না, স্বাধীনতা একজন মানুষের প্রথম অধিকার। কোন মূল্যেই, কোন লোভেই, কোন শেকলেই যেন সে স্বাধীনতা হাতছাড়া না হয়। ওই স্বাধীনতাটুকু কেড়ে নেওয়ার জন্য অনেক চক্রান্ত হবে। তোদের ভালো-মন্দ বোঝাবে, সতীত্ব শেখাবে, সৌন্দর্যের হাতছানি দিবে, নারীত্ব বোঝাবে, মাতৃত্বের মহিমার কথা বলবে, নত হতে শেখাবে। এসব ভুল শিক্ষা, এসব পাতা ফাঁদে পা দিবি না। তোরা শেকল ছিঁড়বি, কারণ তোরা মানুষ হবি। প্রতি মুহূর্তে পাপের ভয় আর পূণ্যের লোভ মানুষের জীবনবোধ ধ্বংস করে দেয়। ভয় আর লোভ দিয়ে জীবন গড়া যায় না, জীবনকে জীবন দিয়েই গড়তে হয়। অনুচিত বা ভুল বলে কিছু নেই। পরিস্থিতিকে রেসপন্স করাটাই “উচিত”, নিজের মনের কথা শোনাটাই ‘ঠিক’; সময়কে সময় মতো কাজে লাগানোই জীবন।

মনে রাখবি, জীবনটা একটা রেইস। কখনো হেরে যাবি, হোঁচট খেয়ে টালমাটাল হবি। কিন্তু উঠে দাঁড়াতে হবে। যারা দৌডায় তাদেরই তো পড়ে যাবার ভয় থাকে। যে দৌড়াতেই জানে না, সে পড়েও না, হারেও না। তাই জেতার আনন্দও সে জানেনা। জীবনে দুঃখ জরা আসবে বারবার। কিন্তু সকল দুঃখ ঝেড়ে উঠে দাঁড়াবি তোরা। আমি জানি তোরা পারবি। কারন, নিকুন্তিলারা সব পারে। এই আমরা নিরন্তর কাজ করে যাচ্ছি যেন গন্তব্যে পৌঁছানোর জন্য রক্তাক্ত কাঁটাতার পেরুতে না হয় তোদের। আমরা সবখানে তোদের জন্য, তোদের হয়ে লড়াই করবো। আমরা লড়াই করে যাচ্ছি যেন বুনো পুরুষের তাড়া খেয়ে ছুটে না বেড়াতে হয় কোন মেয়েকে;  একটি মেয়েকেও যেন আর ছিন্নভিন্ন না করতে পারে, রক্তাক্ত করতে না পারে ওই মানুষখেকো পুরুষের পাল।  

এই পৃথিবীর নিকুন্তিলারা জেনে রাখিস, তোরা সুন্দর, সম্মানীত, অপার, অশেষ ও অমূল্য। মনে রাখবি এই পৃথিবী তোদের, তোরা যেমন ইচ্ছে তেমন করে চমৎকার বেঁচে থাকবি। জীবনের নিয়ন্ত্রণ নিজের হাতে নিবি তোরা, আমরা যা পারিনি। তোরা সাহসী, তোরা শক্তিশালী। এই শক্তি কেউ ছিনিয়ে নিতে পারবে না। তোরা বিশ্বজগত প্লাবিত করবি হাসি গানে। তোরা আকাশ-পাতাল জয় করবি। তোরা ঘুরে ঘুরে বেড়াবি এক নির্ভয় কাঁটাতারবিহীন পৃথিবীতে। তোরা সুন্দর থাকবি, সুন্দর জন্ম দিবি। স্বপ্নের হাত ধরে আমার অযুত কোটি নিকুন্তিলা হেঁটে যাবে আগামীর ঠিকানায়।

মা আমার, জীবন জয় করার ক্ষমতা হোক, জীবনকে যাপন করার সাহস তোদের হোক। আমি তোদের সঙ্গেই আছি। আলোর জীবন হবে তোদের। আঁধার এলে জানবি, আলোর দুয়ারে দাঁড়িয়ে আমি আছি তোদের জন্য। রাতের বেলা যখন তোদের একা লাগবে, আমি তোদের সঙ্গে থাকবো। যখন অন্যরা তোদের সন্দেহ করবে, প্রশ্নবিদ্ধ করবে, হেসে উড়িয়ে দেবে, তখনো আমি তোদের সঙ্গেই থাকবো। বাতিঘর কোথাও যায় না। একা দাঁড়িয়ে আলো দিয়ে যায়। আমি জানি, আমি সব নৌকা বাঁচাতে পারবো না এই আঁধার কালো থেকে। কিন্তু ঘরের শেষ বাতিটুকু ও জ্বেলে আলো দিয়ে যাবো আমি আমার নিকুন্তিলার জন্য, এই পৃথিবীর সব নিকুন্তিলাদের জন্য।

শেয়ার করুন: