ভাঁড়ামির প্রতিবাদ এবং মিডিয়াগোষ্ঠীর গাত্রদাহ

আরিফুর রহমান: Taslima Nasreen এর পোষা বেড়ালের নাম মিনু। বেড়ালকে পশ্চিমে আদর করে ‘কিটি’ বলে অনেকে।তসলিমা নাসরিন বিশ্বের নারীবাদী এবং নাস্তিক্যবাদী সুপরিচিত ব্যক্তিত্বদের মাঝে একজন। স্বাভাবিকভাবেই বাংলাদেশে ওনার স্থান হয়নি।

আরিফুর রহমান

বহু দশক প্রবাসে নির্বাসিত জীবন কাটালেও ইন্টারনেটের মাধ্যমে তাঁর লেখা পড়া যায়। তাঁর মতো সাহসের সাথে নারী নিগ্রহের প্রতিবাদ করে যাচ্ছেন অনেকেই বাংলাদেশে। এদের মাঝে একটি ব্লগ পোর্টাল… উইমেন চ্যাপ্টার, Womenchapter নির্ভীক, সোচ্চার। বেশ পাঠক জনপ্রিয়তাও পেয়েছে এর লেখাগুলি। পরিচিত পর্ব আপাততঃ এটুকু।

এবার চোখ ফেরাই বাংলাদেশ (পড়ুন বাঙালী মুসলমানের নিজস্ব ভূমি) এখানে রাজত্ব করে ইসলাম, পুরুষতন্ত্র। আর পূর্ণাঙ্গ জীবনবিধান ইসলাম যেখানে গমন করে, সাথে করে নিয়ে আসে সকল প্রকার প্রাগৈতিহাসিক বর্বরতাও। ইসলাম বাংলাদেশের রাজনীতি এবং ব্যবসা দুইটাই নিয়ন্ত্রণ করে। সবার ওপরে ছড়ি ঘোরায় ইসলামবাদ।

পুরুষতন্ত্রের ধারক-বাহক ইসলাম ঐতিহাসিকভাবেই নারী-দমন এবং নিগ্রহে লিপ্ত। এটা ইসলামের মৌলিক একটা স্তম্ভ। নারীকে খণ্ডিত করে রেখে তাকে যৌন, গার্হস্থ্য, আলংকারিক আসবাবে পরিণত করে পুরুষ রাজত্ব করে চলে পরিবারে, সমাজে। তাই প্রতিবাদী কোন নারীর ওপর অহরহ চলে অপমান, নির্যাতন, দমন। নানা রূপে। রাস্তাঘাটে কটুক্তি, প্রেমের প্রস্তাবে অ-রাজি? তাহলে এসিড। দেখতে আকর্ষণীয়? তাহলে ধর্ষণ, হত্যা। গৃহবধু, অথচ মেরুদণ্ড আছে? নিন ঘরে অপমান, নির্যাতন। প্রায় সবই চলে পুরুষতন্ত্রের হাতে, ধর্মের ছুতো ধরে।

আধুনিক অনলাইন যুগেও তাই ‘অই ছেড়ি ওড়না গলায় না দিয়ে বুকে দে, কামে দিবো’ জাতীয় পুরুষালী বাণী অবিশ্বাস্য জনপ্রিয়তা পায়। আমরা হতবাক হয়ে এই বাংলাদেশ চিনতে থাকি প্রতিনিয়ত। কিন্তু পুরুষতন্ত্র সেখানেই থেমে থাকে না। বর্তমান বিশ্বে নিয়ন্ত্রণের একটা বড় হাতিয়ার ‘মিডিয়া’/ গণমাধ্যম। সেখানে নিয়োগ পায় কুৎসিত ভাঁড় মানসিকতার ব্যক্তিরা। হাসির নামে কাতুকুতু, এবং বেশিরভাগ সময় রসিকতা শব্দটিকে কবরে পাঠিয়ে ‘রস-বোধ’ ব্যাপারটিকেই অতীতের বিষয়ে পরিণত করে।

এমনই একটি চরিত্র অত্যন্ত নিম্নবর্গীয় রসিকতা করেছে নারীর শরীর নিয়ে। উইমেন চ্যাপ্টারে একজন নারী তার প্রতিবাদ করায় আঁতে ঘা লেগেছে পুরো মিডিয়া গোষ্ঠীর। মিডিয়ার সাথে জড়িত পুরুষতান্ত্রিকেরা গোষ্ঠীবদ্ধতা থেকে এই ‘কুৎসিত’ রসিকতার সাথে ‘আদি-রস’ বিষয়টি গুলিয়ে ফেলে ওই নিম্নবর্গীয় ভাঁড়টিকে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছেন।

সাথে যুক্ত হয়েছে নারীবাদের প্রতি ইতোমধ্যেই ঘৃণা পোষণকারী কতিপয় নাস্তিক নামের কলঙ্ক। এদের কয়েকজন সরকারের আজ্ঞাবাহী। নারীবাদকে ‘কিটিবাদ’ ট্যাগ দিচ্ছে এরা কয়েকজন মিলে। তসলিমা নাসরিন বিষয়ক অবোধ্য পুরুষতান্ত্রিক ঘৃণাকে পুঁজি করে উইমেন চ্যাপ্টারকে ‘কিটিবাদী’ বলে যে চর্চা তারা করছে, না জেনেই ইসলামের হাতিয়ারে আজ পরিণত। আমি নিজে নাস্তিক হওয়ায়, এদের আচরণে লজ্জিত।

বাংলাদেশে ইসলামের হাতে অনেক কিছুই ধ্বংস হয়েছে। সোজাসুজি ধর্ম নিজে গোল বাঁধিয়েছে প্রথম-আলোর ‘আলপিন’ পত্রিকা নিয়ে। এখন ভায়া মিডিয়া দিয়ে শুধুমাত্র কাতুকুতুরই জয় জয়কার। যে দেশে স্থূলতা রাজত্ব করে, সে দেশে রসবোধের মতো সুক্ষ্ম বিষয় যে কোপানলে পড়বে, এবং তার স্থান দখল করে নেবে অপদার্থেরা, এবং বাকিরা মিলে সেই অপদার্থের অ-পদার্থ রসিকতাকে নিছক আড্ডাবাজী হিসেবে প্রতীয়মান করতে চাইবে, এই দৃশ্য দেখে আমি পুরোই হতবাক।

যৌনতা নিয়ে রস করতে হলে তা অত্যন্ত সুক্ষ্ম হতে হয়। যৌনতা এখানে প্রচ্ছন্ন কনটেক্স, বাকিটা উইট এবং স্থাপন। নারীদের সামনে, নারীদের উদ্দেশ্য করে এই ধরনের গাধামি আর যাই হৌক, রসিকতা নয়। তবে যে দেশে ইসলাম চলে, সেই দেশে সুক্ষ্মতা আশা করাও সময়ের অপচয়।

শেয়ার করুন: