শিক্ষিত মেয়েরা যখন হেরে যায়

আজমেরী সুলতানা ঊর্মি: পরিচিত একজন আত্মীয়া লেখাপড়ায় বরাবর অসম্ভব মেধাবী। এসএসসি, এইচএসসি দুটোতেই স্ট্যান্ড (জিপিএ ফাইভ এর আগের সময়ে)। অতঃপর ঢাকা মেডিকেলে চান্স এবং দারুণ রেজাল্ট করে এমবিবিএস পাশ করে পরবর্তীতে এফসিপিএস, এমএস করে এখন ঢাকা মেডিকেলে সহকারি অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত আছেন।

উনার বর যদিও ডাক্তার, তবুও উনার চেয়ে পড়াশুনায়, যোগ্যতায়, চাকুরী ক্ষেত্রে কোন বিষয়েই তার ধারে কাছেও নেই। উপরন্তু সে নেশা-টেশা এবং নোংরা রাজনীতির সাথেও জড়িত। দু জনের কর্মক্ষেত্র দু জায়গায়। তারপরও দুজনের সংসার ভালোই চলছিলো।

আজমেরী সুলতানা ঊর্মি

হঠাতই সেই আত্মীয়ার বর বোমা ফাটানোর মতো প্রকাশ করলো যে সে আরেকজন বিবাহিত মেয়ে ডাক্তারের সাথে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে গেছে। সে এখন ওই সম্পর্কে স্থির হতে চায় এবং আত্মীয়ার সাথে সম্পর্ক থেকে বের হতে চায়।
আমার আত্মীয়া ভয়াবহ কষ্ট পেলেন , তার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়লো এবং নিজের বাড়ি, বরের বাড়ির সবাইকে ঘটনার কথা জানালেন।

মূল বিষয়টা এরপরের অংশের।

দুই বাড়ির বাড়ির কেউই ওই পুরুষের অবৈধ সম্পর্কটাকে মেনে নিতে চাইলেন না। সবাই মিলে আত্মীয়াকে বোঝাতে লাগলেন, ছেলেরা এরকম একটু-আধটু করেই, এবং যেমন করেই হোক ওই আত্মীয়াকে তার বরের মন ঘুরিয়ে তার দিকেই ফেরাতে হবে। যেমন করেই হোক সংসার টিকিয়ে রাখার ব্রত পালন করতে হবে। পরকিয়ায় লিপ্ত বরকে ধরে রাখতে হবে!

আর সবচাইতে ভয়ংকর সত্যি হচ্ছে, সেই মেধাবী উচ্চ শিক্ষিতা আত্মীয়া তার শিক্ষা, মেধা, সম্মান, যোগ্যতাকে জলাঞ্জলি দিয়ে গুণধর পরকিয়ায় লিপ্ত স্বামীকে নিজের দিকে ফেরানোর আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যেতে লাগলেন। যারা তাকে এই সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসতে বললেন তাদের সাথে সম্পর্কই ত্যাগ করলেন!

অন্যদিকে অশিক্ষিত, বেকুব ধরনের লোকজনের মতামত নিয়ে নানান ধরনের কুৎসিত কাণ্ড কারখানা করতে লাগলেন!এই যেমন মসজিদের হুজুরের কাছ থেকে স্বামী বশীকরণ “চিনিপরা” এনে সেই চিনি দিয়ে সেমাই রান্না করে স্বামীকে মুখে তুলে খাইয়ে দেন। তাবিজ এনে ঘরের কোনায় রাখেন! এবং চল্লিশ দিন পর বুড়িগঙ্গায় গিয়ে সন্ধ্যাবেলায় তাবিজ ফেলে আসেন!

আমি এরপর থেকে ওই আত্মীয়ার সাথে আর কোন যোগাযোগ রাখিনি। আত্মসম্মান বিবেকবুদ্ধি বিবর্জিত সেই মানুষজনদের সাথে সম্পর্ক রাখার কোন প্রয়োজন মনে করিনি।

আজ আমার বাসার কাছের ছুটা বুয়ারও খুব মন খারাপ ছিলো। বললো, তার জামাই অন্য আরেক নারীর সাথে সম্পর্ক করায়, এক কাপড়ে সে ওই ঘর থেকে বেরিয়ে এসে আরেক জায়গায় ঘর ভাড়া করে এসে উঠেছে। অবশ্য কিছু সময় মন খারাপ ভাব কাটিয়ে দ্বিগুণ উদ্যমে কাজকর্ম শুরু করে দেয়। দুই বাড়ি বাড়িয়ে আরও চার বাড়িতে কাজ নেয়।

বললাম, শীতের সময় এতোগুলা বাসায় কাজ করতে তোমার তো খুব কষ্ট হবে যে! উত্তরে সে দারুণ তেজী গলায় বলল, অপমান সহ্য করার চেয়ে কাজ করার কষ্ট অনেক ভালো গো আফা! আমি পারমু! দেইখেন!
মাথা নেড়ে সায় দিলাম। আমিও জানি সে ঠিক পারবে। তার হাত একহাতে শক্ত করে ধরে আরেক হাতে মাথায় আদর করে বুলিয়ে দিলাম!

আমার সেই বিশাল বিদ্বান, উচ্চশিক্ষিত, কর্মক্ষম, আত্মীয়ার স্বামী বশীকরণ তাবিজ নিয়ে ঘুরে বেড়াবার স্মৃতি মনে করে হঠাতই গা গুলিয়ে এলো!

উচ্চশিক্ষিত হলেই নিজস্ব সম্মান রাখার মতো যোগ্যতা সবার হয় না আসলে। দিনের পর দিন অন্যের দ্বারা এভাবে ইচ্ছাকৃতভাবেই প্রতারিত হয় কেউ কেউ ! আমার সেই পরিচিতাও সেরকম একজন।

তার বিশ্বাস, ভালোবাসার জায়গাটাকে যে নষ্ট করেছে, তাকে আবার নিজের কাছে জোর করে রাখতে চাইছে। এবং যতোদূর জানি রেখেছেও! হয়তো তার অজান্তেই সে বার বার প্রতারিত হচ্ছে! সমাজে সতী সাধ্বী, ভালো বউয়ের তকমা পাচ্ছে। আমরা আমাদের শিক্ষার মাধ্যমে সমাজ পরিবর্তন করার কথা বলি। অথচ নিজের মানসিকতা,আত্মমর্যাদার জায়গায় এখনো অনেক মেধাবী নারী শূন্যের কোঠায় অবস্থান করছে। নিজে থেকেই কেউ পরিবর্তিত না হলে, তাকে পরিবর্তন করা আসলেই কষ্টকর, দু:সাধ্যও বটে!

শেয়ার করুন: