কামরুন নাহার রুমা: ফেসবুক ইনবক্সে এক বন্ধুর ম্যাসেজ- “আমাকে একটু একা থাকার মন্ত্রটা বলবেন? আমার নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসে, এতো হাসিখুশি কিভাবে থাকেন, আমাকে একটু বলেন। আমার সব শেষ হয়ে যাচ্ছে“।
আমি ওনাকে আমার ফোন নম্বর দিয়ে বলেছিলাম কল করতে। যথাসময়ে উনি ফোন দিলেন। দেড় ঘণ্টা ওনার সাথে কথা বললাম। সব শুনলাম, কিছু বললাম এবং শেষে যখন ওনাকে বললাম, ‘রাখছি তাহলে‘, উনি বলেছিলেন “আমার অনেক হালকা লাগছে আপা, মাথাটা তিন দিন ধরে উনুনের মতো ফুটছিল, এখন ঠাণ্ডা হয়েছে“।

আমি কোনো মনোবিজ্ঞানী নই। আমার জীবনটা আর আট-দশজনের মতো না, তাই আমার নিজেরও অনেক সমস্যা আছে। আর সেই আট–দশজনের মতো না হবার কারণেই জীবন নিয়ে আমার ব্যক্তিগত কিছু অবজারভেশন আছে, আর আছে তার ভিত্তিতে কিছু সিদ্ধান্তও। আমি আমার অবজারভেশনগুলোই ওনাকে বলেছি, দিয়েছি আমার মতামতও – সিদ্ধান্ত ওনার।
উনি আমায় বলেছিলেন, “আপনি কীভাবে একা থাকেন একটু আমায় বলবেন! আমি তিনদিনেই হাঁপিয়ে উঠেছি। তিনদিন হয় আমি ঘরে আছি, দরজা খুলিনি, মরে যাচ্ছি”। বলা বাহুল্য, ওনার আর আমার জীবনধারা একেবারেই ভিন্ন। ওনার জীবনধারার উপর ভিত্তি করেই বলেছিলাম, “আপনি যার কাছে মূল্যবান না, তার জন্যে অপেক্ষা করে চোখের জল ফেলে জীবনটাকে মূল্যহীন করবেন না। লেখাপড়া জানা, ভাল জব করা, নিজের জীবন নিজে যাপন করার মতো যোগ্যতাসম্পন্ন মানুষ আপনি। আপনার ডিসিশান আপনাকেই নিতে হবে। আপনার এই একটা জীবন শুধুই দুঃখের সাথে বসবাসের জন্য নয়, সুখের সাথে সহবাসেরও“।
আমি বলেছিলাম ‘আপনি দাম্পত্যে জীবনযাপন করেছেন; সেখানে আপনি ১২ বৎসরে সুখ কী জিনিস অনুভব করতে পারেননি। আপনার স্বামী আপনার চোখের সামনে অন্য নারীর সাথে রাত যাপন করেন, তাহলে কী দরকার আপনার এই দাম্পত্যের! শুধুমাত্র একটা নো-অবজেকশান সার্টিফিকেটের জন্য যেখানে বলা থাকবে এই নারী বিবাহিতা, স্বামীর সাথে তার সুখের সংসার আছে, উনি সতী সাবিত্রী এবং সমাজের জানা মতে, ওনার বা ওনার স্বামীর কারও সাথে কোনো অবৈধ সম্পর্ক নেই’!
আপনি, আপনারা এই সার্টিফিকেট দিয়ে কী করবেন আমায় বলতে পারেন যদি আপনার সার্টিফায়েড স্বামী পরনারীর বাহুতে রাত কাটায়, আর আপনি দিনের পর দিন তার একটু দর্শনের জন্য, তার একটু স্পর্শের জন্য, তার মুখে আপনার নামটি শোনার জন্য চাতকের মতো অপেক্ষা করেন! কীসের জন্য এতো ত্যাগ! আপনার এই ত্যাগের কোনো মূল্য আপনার স্বামীর কাছে নেই। পতি পরমেশ্বর ততোক্ষণ, যতক্ষণ সে তার পতিধর্ম পালন করবে।
আপনি তিনদিন হয় দরজা খোলেন না – যে সমাজের ভ্রুকুটির ভয়ে আপনি দাম্পত্য নামের একটা বোঝা বয়ে বেড়াচ্ছেন, সেই সমাজ তো আসেনি এই তিনদিনে আপনি বেঁচে আছেন, না মরে গেছেন জানতে! হ্যাঁ, যদি আপনার ঘর থেকে কোনো পর পুরুষকে বের হয়ে যেতে দেখে, তখন সমাজের লোকজন দলে-বলে আসবে জানতে, ওই পুরুষ আপনার কে হয়! এই ভণ্ড, নিষ্ঠুর সমাজকে কীসের এতো তোয়াক্কা! দুইজন মিলে অনেক চেষ্টা তো করলেন উড়তে!
১২ বছরেও পারেননি। এবার ওই সার্টিফিকেট ছিঁড়ে টুকরো টুকরো করে সমাজের মুখে ছুঁড়ে দিয়ে দরজাটা খুলে আলিঙ্গন করুন ওই অসীম আকাশকে। নিজের ভেতরের মেধাবী, সৎ, আত্মমর্যাদাসম্পন্ন, ব্যক্তিত্বসম্পন্ন, শক্তিশালী নিজেকে, এবং নিজের ভেতরের আলোটাকে ছড়িয়ে দিন চারপাশে, ছড়িয়ে দিন আপনার মতো সবার মাঝে। ফ্লাই সো হাই দ্যাট অনলি দ্য স্কাই বিকামস দ্য লিমিট ফর ইউ, ইটস ইউর টাইম, ফ্লাই গার্ল ফ্লাই।
(প্রাইভেসির স্বার্থে বন্ধুর নামটা বলছি না, আমি জানি উনিও পড়ছেন, বন্ধু এই লেখাটা আপনার এবং আপনার মত সবার জন্য)
জ্যেষ্ঠ প্রভাষক, সাংবাদিকতা ও গণযোগাযোগ বিভাগ
ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি