রোকসানা ইয়াসমিন রেশনা: সেদিন আমার এক বন্ধুর ওয়ালে এই জাতীয় একটা পোস্ট দেখলাম, “সেলিব্রিটি, তোমরা শুধু তেল খাবে, সমালোচনা সহ্য করবে না, তা তো হবে না।” আমি পরে ওর কাছে জানতে চাইলাম, কী হয়েছে? উত্তরে যা বললো, তা সবার ক্ষেত্রেই মনে হয় একই রকম।

সেলিব্রিটি বিষয়টা একেকজনের কাছে একেক রকম। অনেকে আছে, এদের সাথে কথা বলতেই লজ্জা পায় বা এতো বেশী গুরুত্বও দেয় না। কিন্তু আমারকাছে বিষয়টা একদম অন্য রকম।
আমি যখন স্টুডেন্ট, তখন পার্থ আমার ক্রাশ ছিল। ক্লোজ আপের এ্যাড দিত এক মেয়ের হাত ধরে স্টেজে নেচে। তা দেখেও আমার রাগ হতো। অনেক বছর পর সেই পার্থই যখন আমার কর্পোরেট পিকনিকে গান গাইতে এলো, আমি গিয়ে তার সাথে গল্প শুরু করলাম। ঐএ্যাডটা নিয়ে কথা বললাম, ছবি তুললাম। জুনিয়ররা পর্যন্ত দেখে হাসলো।
মাশরাফি আমার একদম ছোট ভাই এর ভালো বন্ধু ছিল। আর বড়টা ওর সাথে নড়াইল স্টেডিয়ামে খেলতো। এরা আমার অনেক ছোট বলে আমাকে মাশরাফির চেনার কথা না। আমিও পরিচয় না দিয়েই যেখানে দেখা হয়, সেখানেই ছবি তুলি। এমনকি ওর ছেলেমেয়েদের সাথেও। অথচ আমার ভাইগুলো কিন্তু একদমই এগোয় না। বলে, এখন সেলিব্রিটি। চিনবে কী চিনবে না, কী দরকার? তারপরও আবার ছোট ভাই।
তো, আমার ঐ বন্ধুর প্রিয় চিত্রনায়িকা তার লিস্টে আছে। আমাদের নায়িকাগুলোর অবস্থা তো আমরা দেখতেই পাই। একদিন ঐ বন্ধুর মেয়ে নায়িকার পোস্ট করা একটা ছবি দেখিয়ে বলছে, মা, তোমার নায়িকার অবস্থা দেখো। এদের ড্রেস সেন্স কেন যে এতো খারাপ! যেটা দীপিকাকে মানাবে, সেটাতে উনাকে কুৎসিতও লাগতে পারে, এই ধারণাটাই নেই।
বন্ধুটা খুব মন খারাপ করে জাস্ট লিখেছে, ড্রেস আপ অথবা ওয়েট, দুইটার একটাতে নজর দিলে ছেলেমেয়ের কাছে বিব্রতকর অবস্থায় পড়ি না। ব্যাস, তাকে নাকি মানহানির মামলা পর্যন্ত ভয় দেখিয়েছে।
আমার মেয়ে ক্রিকেটার সাব্বিরের খুব ভক্ত। একদিন বলছে, মা আমি অস্কার খাবো। বললাম, ওটা ভালো জিনিস না।
সাব্বির এ্যাড করেছে। তার মানে সাব্বিরও খায়। ভালো না হলে ও খাবে কেন?
আমি বললাম, মা, সাথে নায়লা নাঈম আছে।
মেয়ে এবার দমে গেল। কিছুক্ষণ ভেবে বললো, তাই তো। সাব্বির এটা ভালো করেনি। ওর ফ্যানপেজে গিয়ে একটু বকে দাও তো। যাতে ভবিষ্যতে এইধরনের এ্যাড না করে।
ওর ঐ এ্যাডের নিচে কয়েকটা কমেন্ট দেখিয়ে বললাম, আমার বকা লাগবে না। তুমি কয়েকটা কমেন্ট দেখো।
মেয়ের তো চোখ কপালে। বললো, না বুঝে কাজ করলে এই রকম বকা তো খেতেই হবে।
জ্বী, ১২/১৩ বছরের ভক্তরা যেটা বোঝে, সেলিব্রিটিরা সেটা বোঝে না। কারণ তাদের ধারণা, তারা যা খুশি তাই করবে। ভক্তরা শুধু, ওয়াও বলবে।
রিসেন্ট একটা প্রসঙ্গ না আনলেই নয়। সাকিব আল হাসানের মেয়ের ছবি পোস্ট হয় নিয়মিত। মেয়েটা কী কিউট! দেখলেই চোখ জুড়িয়ে যায়। কিন্তু যে জিনিসটা ভালো লাগে না, তা হচ্ছে ফিডার খাওয়ানো ছবিগুলো দেখতে। আমি একটা ছবির নিচে কমেন্ট করলাম, ভাই, তুমি তো ব্রেস্ট ফিডিং এর সচেতনতামূলক কোন প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ করতে পারবা না। একটু সচেতন হওয়া যায় না?
ব্যস্, হয়ে গেল। শেষ পর্যন্ত মনে হয় কমেন্টটাও ডিলিট করা হয়েছে। এখন ব্রেস্ট ফিডিং এর কোন ক্যাম্পেইনে যদি সাকিব/শিশির অংশগ্রহণ করে এবং সেই ছবি কোন মিডিয়ায় আসে, পোস্ট এর নিচে কমেন্টে এই ফিডার খাওয়া ছবি দিয়ে কেউ যদি কিছু বলে, খুব কী অন্যায় হবে (আমরা কোনো অবস্থাতেই তা আশা করি না)?
ডিয়ার সেলিব্রিটি, সাধারণ মানুষ ভালোবাসে বলেই কিন্তু আপনারা সেলিব্রিটি। এই মানুষগুলোকে ভালোবাসাও আপনার কর্তব্য। আর এই কর্তব্য থেকেই আপনাদের সচেতন হওয়াটাও প্রয়োজন। তবেই না বজায় থাকবে পারস্পরিক সম্প্রীতি।
নোট: আমাদের ক্রিকেট দল নিউজিল্যান্ড সফরে আছে। তাদের জন্য শুভকামনা।