সঞ্চয়িতা এক মুসলমানের প্রেমে পড়েছিল

জাহান রিমা: সঞ্চয়িতার সাথে আমার সম্পর্ক ছিলো। আমরা বই দেয়া-নেয়া করতাম। সঞ্চয়িতা আমাকে ‘শেষের কবিতা’ দিয়েছিলো আমি দিয়েছিলাম ‘শ্রীকান্ত’। শ্রীকান্ত’কে ফেরত দিতে এসে ও’ আমাকে বলেছিলো আচ্ছা; তোদের কোরআনে কী লেখা আছে রে? আমাকে একদিন পড়তে দিবি? আমি ও’কে দিতে পারিনি।

আমাদের কোরআন এতো উপরে রাখা থাকতো আমি নামাতে পারতাম না। সপ্তম শ্রেণীর হাত কতোই আর লম্বা হয়!

জাহান রিমা

সঞ্চয়িতাদের বাড়ির তুলসী গাছ তলায় রক্ত জবা ফুটতো।
একদিন গোপনে ও’ আমাকে পূজার ঘর থেকে ফুল নিয়ে দিয়েছিলো। বলেছিলো, ধর এগুলো তুই নে। মানুষের কাছে মানুষ থাকতে পদার্থরে ফুল দেয় কেন? আমি বুঝি না। তুই বুঝোছ?

বোঝা না বোঝাটা গোধূলির মতো। বুঝে উঠতেই অন্ধকার।
সাঁঝের বেলায় মসজিদে আজান। ঠাকুর বাড়িতে উলুধ্বনি। আমার দিকবেদিক শূন্য লাগে। আমি ত’ বুঝি না। হঠাৎ মা’কে বলে বসি, মা, যে আমারে গড়লো,তারে গড়লো কে? মায়ের থাপ্পর মারা চোখ প্রশ্নটাকে হত্যা করে। মা বলে- ‘চুপ থাক। বেশি বুঝোছ!’ তাইতো! ছোট বেলার আমি বেশিই বুঝতাম!

এভাবে আমার বড় বেলা এসে যায়; প্রশ্নরা কমে যায়। বড় হলে আমরা বুঝে যাই অনেক কিছুই বুঝতে নেই! অপরদিকে সঞ্চয়িতার সাথে আমার দেয়া-নেয়া বাড়তে থাকে। মাঝে সঞ্চয়িতার কী যেন হয়। কার সাথে যেন জলের কসম খেলে। কিন্তু জলের খেলা যে সমাজের আগুনে হয় না।

সঞ্চয়িতা তাই সে আগুনে বাঁচেনি, কিংবা ও’কে বাঁচতে দেয়া হয়নি। কূল আর জাতের যাঁতাকলে পড়ে সঞ্চয়িতা প্রতি মুহুর্তে কুলভাঙ্গা নদীতেই ভাসান দিয়েছিলো। সঞ্চয়িতা এক মুসলমানের প্রেমে পড়েছিলো।

জলে ডুবে জীবন দিয়ে জানিয়ে গিয়েছিলো ভালোবাসাই সত্য। জীবিতের সব ইচ্ছে গলা টিপে হত্যা করলেও নিষ্প্রাণের একটা ইচ্ছে জীবিত রাখে এই নিয়ম মানা জগৎ সংসার। সঞ্চয়িতার এপিটাফে লেখা ছিলো ‘জাত গেলো জাত গেলো বলে এ কী আজব কারখানা..গোপনে যে বেশ্যার ভাত খায়, তাতে ধর্মের কী ক্ষতি হয়?’

ভ্যালেন্সিয়া কলেজ, যুক্তরাষ্ট্র।

শেয়ার করুন: