Exile: a memoir এবং একটি কঠিন সত্য

সারিতা আহমেদ: এক্সাইল বইটার এ যাবৎ অনেক রিভিউ পেপারে কলামে বেরিয়েছে। লিঙ্কগুলো তসলিমা নাসরিন দিদির পেজে দেখেছি, কিন্তু একটাও পড়িনি। বই পড়ার আগে রিভিউ পড়ে তার ভালমন্দের প্রতি একটা পূর্বধারণা নিয়ে আমার চিন্তাধারণাকে কন্টামিনেট করতে চাইনি। তাই।
তবে এই পোস্ট আসলে কোনো বোদ্ধার সার্বজনিন রিভিউ নয়। নিছক এক পাঠকের প্রাইভেট অনুভূতি, এক্কেবারে নিজস্ব মনের কথা।

sarita-2
সারিতা আহমেদ

#নির্বাসন, আমরা যারা পড়েছি , তাদের কাছে , এ বইয়ের বিষয় বস্তু নতুন কিছু না । ( ‘নির্বাসিত’ সিনেমার সাথে একে গুলোবেন না , প্লিজ ।)
তসলিমা নাসরিন ও ২০০৭ ,২২শে নভেম্বর বা তার পরবর্তি সময় নিয়ে আমাদের, মানে পশ্চিমবঙ্গের পাঠকদের মনে খুব চাপা একটা ক্ষোভ ও কষ্ট আছে। আর যারা ওনাকে খুব কাছ থেকে জেনেছে, তাঁদের বসবাসই এই যন্ত্রণাকে সঙ্গী করে।
‘এক্সাইল’-এর মোট ১০টা অধ্যায়ই ভীষণ টাচি। তার মাত্রা আরও বেড়েছে লেখক তসলিমার নিজস্ব কলমে অক্টোবর’১৬ লেখা প্রিফেস্ সংযোজনটুকু , যেটার কথা আগেই বলেছিলাম । বইটা অ্যামাজনড করার পরে শুধু ওই দুপাতার প্রিফেস পড়েই আমি স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিলাম ।

taslima-nasrin-3
“If you want to enjoy fiction, read others. When you need hardcore reality, just open a page of Taslima Nasreen .”

মূল বইয়ের কথায় আসি। না জানি কোথায় একটা Italian saying, পড়েছিলাম “traduttore, traditore.” মানে, “translator, is mostly a traitor.”
অনুবাদ সাহিত্যকে মূল সাহিত্যের বিশ্বাসঘাতক বলা হয়। কিন্তু এক্ষেত্রে অনুবাদক ‘মহার্ঘ্য চক্রবর্তী’ ইটালীয় প্রবাদকে গুনে গুনে দশ গোলে হারিয়েছেন।
‘নির্বাসন’ এর অনুভূতির সাথে এক্সাইলের অনুভূতির লেশমাত্র তফাৎ পাইনি।
হাভার্ডের দিন গুলো থেকে দিল্লীর সেফ হাউজ নির্বাসন অবধি প্রতিটা লাইন অনবদ্য স্মৃতিমেদুরতা আর চাপা কষ্টের প্রলেপে মাখামাখি হয়েছে।
“Authors prohibiting authors, filing lawsuits against authors — these things are perhaps unheard of anywhere else in the world…. the more I see the scholars of WB and Bangladesh , the more it amazes me to realise how selfish and opportunistic most of them are .”

“They haven’t noticed my pain, my tears – the only thing they have noticed is the number of men I have been with and my audacity in having spoken about something as dark, hideous and primal as sex. “

“In the history of the world , when ever a woman has dared to stand up to patriarchy , whenever she has tried to stake a claim to her own freedom , she has been labelled a Whore .”
এই সব অমূল্য লাইন বাংলা থেকে ইংরেজীতে এতোটুকুও ম্লান হয়নি। বরং দৃপ্তভাবে বাঙময় হয়েছে প্রান্তিক এক বাক্যে” I have risen from the dead. I am resurrected.”

‘Conversation ‘ পার্টে অনেক বেশি স্পষ্ট হয়েছে সেই নাম গুলি যেগুলো মূল গদ্যে কোথাও হয়তো একটু অস্পষ্ট ছিল ।
তবে যে জায়গাটা ভাল লাগে নি তা হল , নির্বাসিত কবিতাগুলো। ‘Poems from a Safe House ‘ কবিতা যখন গদ্যের ফর্মাটে লেখা হয় তখন তা মূল চার্ম হারায়। জানি না, অনুবাদকের ভুল নাকি ছাপাখানার। কিন্তু এটার প্রতি যত্ন নেওয়া উচিৎ ছিল। কারণ, Those are Poems, not Prose. পাশাপাশি গদ্যের মত সাজিয়ে কবিতার মাধুর্যকে টুকে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছে।

আমি পাঠক হিসেবে, এই জায়গায় হতাশ। লেখিকার ‘বন্দিনী’ বইয়ে সেই কবিতাগুলো এতো সুন্দর সাজানো, যে এই পার্টটা বরং সেখান থেকে পড়লে বাঙালি কবিতাপ্রেমীদের মন ভালো হবে।

taslima-nasrin-4‘Death Waits past the Window’ অধ্যায়ে ভীষণভাবে ছুঁতে চেষ্টা করেছি দিদির তখনকার সেই হতাশা ভরা চরম আশঙ্কার চমকে ওঠা ভয়গুলোকে। খুব ইচ্ছে করছিল, দিদিকে জড়িয়ে ধরে চুপ করে বসে থাকতে। দিল্লীর সেফ হাউজ থেকে দাদা ঢাকা চলে যাওয়ার পর ঠিক কেমন, ঠিক কতোটা অসহায় বোধ করছিলে তুমি, সেই বিষন্নতার গায়ে আঙুল বুলাতে ভীষণ ইচ্ছে করছিল। তোমার মতো প্রাণবন্ত জীবনমুখী মানুষ ঠিক কতোটা অসহায় হলে মৃত্যুর প্রতি ভালবাসা জানিয়ে একের পর এক কবিতা লিখতে পারে, তার জ্বলজ্যান্ত প্রমাণ এই অধ্যায়। এ জিনিস পড়ার নয়। উপলব্ধি করার।

‘No not Here ! Elsewhere ! In Another land !’ ‘হেথা নয় হোথা নয় , অন্য কোথাও অন্য কোনোখানে !’ পড়ে ঠিক যেমনভাবে কেঁদেছিলাম, Exile এর শেষ চ্যাপ্টার আমায় সেভাবেই আমূল নাড়িয়েছে, কাঁদিয়েছে। ভিসা নিয়ে তোমার উৎকণ্ঠা, প্রধানমন্ত্রী থেকে পরিচিত-অপরিচিত ডেলিগেটদের মেইল করা, নিজের একটাই আর্জি জানিয়ে ” ফিরতে চাই , থাকতে চাই ” … এ যে কী অসম্ভব কষ্ট, পাঠক হয়তো তার আন্দাজও করতে পারবে না।

তবু … “Except for a couple of very close people, everyone forget about me. It was almost as if I had died . .. A Bengali writer’s enforced exile from Bengal could very simply be wiped away from the pages of history” না , দিদি, না। এই একটা লাইন আমি কিছুতেই মেনে নিতে পারিনি। ভুলে যাওয়া? তোমাকে তো নয়ই, তোমার লড়াইকেও না। You know why? Because…উত্তর তুমি নিজেই দিয়েছ. ‘I am still swimming against the surge.’

Francis Bacon বলেছিলেন , “Some books are to be swallowed , others are to be tasted and some others are to be chewed and digested “
‘Exile: a memoir ‘ belongs to the last group of books . The more you read , the more you chewed the pangs and agony of an exiled humanist writer , but its too difficult to digest her nemesis and our ‘Shame’ !
#এক্সাইল কোনো ফিকশান নয়, সাহিত্যের ইতিহাসে ঘটে যাওয়া এক ঐতিহাসিক লজ্জার জীবন্ত দলিল। অন্য পাঠক -বোদ্ধাদের প্রতিক্রিয়া কেমন জানি না। কতদিন এই বই পাঠক-মন জয় করবে, বা বেস্ট সেলার হওয়ার দৌড়ে বিজয়ী হবে কিনা তাও জানি না।
তবে আমার লেখকের একনিষ্ঠ পাঠক হিসেবে, এই বই সম্পর্কে শুধু শেক্সপিয়ারের এক অবিস্মরণীয় লাইন দিয়েই ইতি টানবো …
‘ So long as man can breath or eyes can see /
so long lives this and / this gives life to thee ‘

শেয়ার করুন: