শিল্পী জলি: এক ব্রিটিশ ছেলের গল্প শুনেছিলাম। তার বয়স পঁচিশ/ ছাব্বিশ হয়ে গিয়েছে, তবুও মেয়েসঙ্গ ভোগের উপায় হয়নি। দিনরাত ঐ চিন্তাই তার মাথা খায়– যদি একটি মেয়ে পাওয়া যেতো তাহলে…।
তার এলাকার ষোল বছরের একটি মেয়ে তখন নতুন নতুন প্রস্টিটিউশনে নেমেছে। একদিন মেয়েটি মাত্র বিশ পাউন্ডে তাকে থাকতে অফার করে। কিন্তু মন চাইলেও ছেলেটি রাজী হয় না। বলে, তুমি মাত্র ষোল বছরের একটি মেয়ে, আমারই এলাকার। যদি তোমার সাথে আজ থাকি, তাহলে যতবার তোমায় দেখবো ততবার মনে হবে, ছিঃ এক নাবালিকার সাথে আমি থেকেছি–নিজেকে আর ক্ষমা করতে পারবো না।
কিছুদিন আগে পড়লাম, দেশে পূজা নামে চার বছরের এক বাচ্চাকে ধর্ষণ করা হয়েছে। তার বডি উপযুক্ত না হওয়ায় ব্লেড দিয়ে তার যোনি কাটা হয়েছিল–তবুও ধর্ষণ করবেই। অবাক হয়ে ভেবেছিলাম–এরা কারা? এরাও মানুষ?
দেশে এখন বিশেষ অবস্হায় মেয়েদের ১৮ বছরের নীচে বিয়ে বৈধ করা হলো। যেমন ধর্ষণের পর গর্ভবতী হলে, অথবা প্রতিবন্ধী মেয়ে ধর্ষণের শিকার হলে বাবা-মা এবং আইনের ইচ্ছেয় বিয়ে দেয়া হবে। অতঃপর বৈধ পন্হায় উক্ত কর্ম নিত্য সম্পাদনে লেগে যাওয়া।
যদি কোনো মেয়ে প্রেমে পড়ে এক আধ-বার শুয়ে পড়ে, অথবা ধর্ষিতা হয়ে গর্ভবতী হয়ে যায়, তাহলে তৎক্ষণাৎ বিয়ে দিয়ে সমস্যার কার্যকরি সমাধান হলো এই আঠারো বছরের নিচের বিয়ে। তবে কত নিচের বিয়ে (বয়স) সেটার কোনো উল্লেখ নেই। অনুমানে বুঝি ঐ যুগের–দেশে মানুষ এখন যে যুগে হাঁটতে শুরু করেছে।
বড়ই উত্তম ব্যবস্হা –বহু আগে এই ব্যবস্হাতেই ধর্ষকের সাথে মেয়েদেরকে ধরে ধরে বিয়ে দিয়ে সমাজ রক্ষা করা হতো। অতঃপর ধর্ষক বৈধ উপায়েই দিন-রাত ধর্ষণ কর্ম করতেন। এখন আবার তেমনই হবে– পূজার বয়সী মেয়েরা ধর্ষিতা হতেই দাদার বয়সী লোকের সাথে আইন মোতাবেক তাদের বিয়ে দেয়া হবে এবং দাদাভাই বাচ্চাকে কোলে নিয়ে বৈধ পন্হায় যোনি কেটে ধর্ষণ কর্ম চালিয়ে যাবেন। মামলা খারিজ।
বলা হয়েছে, যদি বাবা-মা বা আইন মনে করে তাহলেই……। অল্প শিক্ষিত, ক্ষমতাহীন, উপায়হীন, বা লোভী বাবামা এবং আইন যদি তাই মনে করে, তাহলে শোবার কর্মটিও তাদের উপরই চাপানো উচিত নয় কি?
আর প্রতিবন্ধী মেয়ে ধর্ষণের শিকার হলেও বিয়ের বৈধতা আসে কোন যুক্তিতে?
দেশ ধীরে ধীরে কোন যুগের আইনকে আঁকড়ে ধরতে চাইছে?
বয়ো:সন্ধিতেই বিয়ে সেই যুগকেই নয়তো?
দেশে বিগত দশ বছরে জনতার মাঝে যতো ধর্মীয় উন্মাদনা লক্ষ্য করা যায়, তার প্রভাব মূলত মেয়ে মহলের উপরই বেশী পড়েছে। আমাদের মেয়ে সমাজই হিজাবে আটকা পড়েছেন।

ওদিকে মিথ্যাচার, ঘুষ, ধর্ষণ, হারাম উপার্জন, সুদ, ভেজাল, চুরি… ইত্যাদি বিষয়ে তেমন কোনো পরিবর্তনই পরিলক্ষিত হয়নি। অথচ ধর্মীয় বিষয়ে এসব সব কিছুরই স্হান পাবার কথা ছিল, যদি যথার্থ অর্থেই ধর্ম পালন তাদের উদ্দেশ্য হয়ে থাকতো। মনে হয়, আপাতত তাদের উদ্দেশ্য হলো ধর্মের নামে মেয়ে দমন।
সেই দিন আর বেশি দূরে নেই যখন ঘরে ঘরে পুরুষ লোক চার বউ রাখবে আর উচ্চবাচ্য দেখলেই তিন তালাকে মেয়েদের ঘাড় ধরে ঘর থেকে বের করে দেবে।
দেশজুড়ে মহা সমারোহে বৈধভাবে সাবালক দ্বারা নাবালিকা ধর্ষণ কর্ম চালু হবার পথে।
ভবিষ্যত ফলাফল, প্রসূতি মায়ের মৃত্যুহার বৃদ্ধি, গণহারে মা-শিশুর পুষ্টিহীনতা, জনসংখ্যা বৃদ্ধি, অশিক্ষা, তালাকের হার বৃদ্ধি, পরনির্ভরশীলতা, স্বাস্হ্যহীন দুর্বল বাঙালী জাতি,…এবং অর্থনৈতিক বিপর্যয়।
অল্প বয়সে নারী ভালোবেসে প্রেমিকের সাথে কখনও-সখনও শুয়ে পড়া আর তাকে ধর্ষকের সাথে জোর করে বেঁধে দেয়া কখনও এক কথা নয়। অমন সামাজিক বা রাষ্ট্রীয় বৈধতা কোনো নারীর জীবনের জন্যেই জরুরি নয়।
যে ধর্ষক সে আজীবনই ধর্ষক। এই জাতীয় জনতাকে বিচারের আওতায় না আনা মানে দেশটাকেই বাসের অযোগ্য করে গড়ে তোলা।
দিনের পর দিন দেশের প্রশাসন তেমন কাজই করে চলেছে। আর এখন আইন করে এই পাপের পথ আরও সুগম করা হলো। এই আইনে কোনো মেয়েকে মনে ধরলে একটিবার ধর্ষণ করতে পারলেই বিয়ে কনফার্ম হয়ে যাবে– অতঃপর ধর্ষণই ধর্ষণ।
জয় বাংলা ! আলহামদুল্লিলাহ্!!