ফারিহা ফাইরুজ: ব্রেস্ট ক্যান্সার প্রতিরোধে সচেতনতা নিয়ে দেখলাম অনেক বেশি পরিমাণ মাতামাতি হচ্ছে… সাথে নায়লা নাঈম নামক মস্তিষ্কহীন মডেলটিরও আলোচনা সমালোচনা করতে করতে তাকেও আরো বেশি ফেমাস বানিয়ে দিচ্ছে সবাই…. বাহ বেশ ভালো… এব্যাপারে যেহেতু অনেকেই আলোচনা করে তর্ক-বিতর্ক যুদ্ধে চলে গিয়েছে, তাই তার ব্যাপারটা এখানে না টেনে বরং একটা মেয়ের গল্প শুনে আসি….

মেয়েটির বয়স ২০ বছর … গত বছর দুয়েক ধরেই হঠাৎ হঠাৎ তার ব্রেস্টে তীব্র ব্যথা এবং শক্ত বলের ন্যায় মাংসপিণ্ড অনুভূত হতো… লাজুক মেয়েটির লজ্জার আড়ালে বিষয়টি ঢাকা পড়ে ছিল এতোদিন..গত দুমাস আগে যখন ব্যাথা অসহনীয় পর্যায়ে গেলে ডাক্তারের শরণাপন্ন হয় … ডাক্তার সব দেখে-শুনে নিশ্চিত করে যে তার ব্রেস্ট টিউমার হয়েছে এবং সময়মতো অপারেশন না করালে এটি ব্রেস্ট ক্যান্সারে রূপ নিতে পারে। তাই অপারেশনের পূর্ববর্তী যে সকল টেস্ট দিয়েছে তা খুব দ্রুত করিয়ে রিপোর্ট নিয়ে ডাক্তারের সাথে দেখা করার নির্দেশ দিয়েছে।
মেয়েটি জীবনের প্রথমবারের মতো ম্যামোগ্রাফির সম্মুখীন হলো.. (ম্যামোগ্রাফি হলো এক ধরনের এক্সরের মাধ্যমে স্তনের সমস্ত কোষকলা খুঁটিয়ে দেখা, ম্যামোগ্রামের সময় দুটি প্লাস্টিক প্লেটের মধ্যে স্তন যুগলকে রেখে সামান্য চাপ দিয়ে অ্যাডজাস্ট করে এক্স-রে করা হয়) যদিও ম্যামোগ্রাম অভিজ্ঞ রেডিওলজিস্টের তত্ত্বাবধানে করানোর নিয়ম, তবুও দেখা যায় মেয়েটিকে ছয়বারের মতো কাপড় খুলতে এবং পড়তে হয়েছে তাদের অদক্ষতার কারণে।
সকাল আটটা হতে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে অবশেষে ব্রেস্ট আলট্রাসনোগ্রাফি টেস্টের সিরিয়াল নাম্বার পায় মেয়েটি। হেলেদুলে ডাক্তার আসে দু ঘন্টা লেইট করে..সব প্রেগনেন্ট নারীর সিরিয়ালে মেয়েটিই ছিল একমাত্র প্রাণী যে ব্রেস্ট আল্ট্রাসোনোগ্রাম করাবে ..সবাই এমন দৃষ্টিতে তাকাচ্ছে যেন সে ভিনগ্রহের প্রাণী।
অবশেষে ডাক পড়লো তার। খ্যাতনামা ডাক্তার বাম হাতে মোবাইল কানে দিয়ে কাজের বুয়া, বাচ্চার সাথে বাক্যবিনিময় করে আর ডান হাত দিয়ে আলট্রা সনোগ্রাম করে… কাজের বুয়ার সাথে কথা বলা শেষ হতে না হতেই তাকে তার ড্রাইভার কল দিয়ে বলে গাড়ি নিয়ে সে নিচে দাঁড়িয়ে আছে, আর তার পরক্ষণেই ডাক্তার আপা ব্যাগ নিয়া উধাও।
এরপর মেয়েটি সম্মুখিন হয় FNAC (ফাইন নিডল অ্যাসপিরেশন সাইটোলজি) টেস্টের…..(FNAC’র মাধ্যমে স্তনের বেড়ে ওঠা অংশটির চরিত্র বোঝা যায়); এই টেস্টে ডাক্তার মেয়েটির সাথে গল্প করতে করতেই একটি নিডলের সাহায্যে টিউমারের সন্দেহজনক অংশে খোঁচাতে থাকে আর মেয়েটি বাচ্চাদের মতো হাউমাউ করে কাঁদতে কাঁদতে বাসায় আসে।
অতঃপর সব টেস্টের রিপোর্ট নিয়ে মেয়েটি তার প্রথম ডাক্তারের সাথে দেখা করে….ডাক্তার রিপোর্ট দেখে চোখ-মুখ কুঁচকিয়ে বলে, রিপোর্টে তো কিছুই ধরা পড়েনি.. এটা তো হওয়ার কথা নয়.. পাশের রুমে চলো তো আরেকটু চেক করি।চেক করার পর দেখা যায় ঠিকই বলের মতো শক্ত মাংসপিণ্ড ধরা যাচ্ছে, কিন্তু রিপোর্টে কিচ্ছু আসেনি বলে ডাক্তার অপারেশন করতে পারছে না……ছয় মাসের ওষুধ দিয়েছে……ছয় মাস পর আবার দেখা করার নির্দেশ দিয়েছে।
এখন আমার কথা হলো, এই দেশের প্রায় বেশিরভাগ মেয়ে এমনিতেই চক্ষুলজ্জার ভয়ে এই বিষয়গুলোকে গোপন করে রাখে, তার উপর সাহস করে কেউ ডাক্তারের নির্দেশমতো টেস্টগুলো যখন ডায়াগনস্টিক সেন্টারে করতে যায়, তখন যদি বিভিন্নভাবে হয়রানি এবং অবহেলার শিকার হয়, তাহলে অবশ্যই সচেতনতার চাইতে তাদের মাঝে অসচেতনতাই বেশী বৃদ্ধি পাবে বলে আমি মনে করি।
আমার মতে, সাধারণ মানুষের আগে ডায়াগনস্টিক সেন্টারে কর্মরত মানুষজন এবং কর্মরত ডাক্তারদেরই প্রথমে সচেতন হওয়া উচিত এই ব্যাপারে…….।
#breastcancerawareness#