শামীম আরা শিউলী: পাঁচ বছরের অবুঝ শিশু পূজা যখন যৌন নির্যাতনের শিকার হয়ে জীবন-মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছে, তখন উত্তরার পাকুরিয়ায় বৃহস্পতিবার সাড়ে তিন বছরের একটি শিশুর উপর যৌন নির্যাতন চালিয়েছে প্রতিবেশী।
দুর্বৃত্তের নাম আনোয়ার ওরফে সাইফুল্লাহ (১৯)। পেশায় গার্মেন্টস কর্মী। তুরাগ থানায় মামলা হয়েছে। পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে সাইফুল্লাহকে। তবে মামলা করার জন্য ভূক্তভোগী পরিবারটিকে অপেক্ষা করতে হয়েছে দুইদিন। ঘটনার পর শিশুটির মা পারভীন তুরাগ থানায় অভিযোগ করতে গেলে পুলিশ মামলা না নিয়ে বাড়ীওয়ালার বিচারের জন্য অপেক্ষা করতে বলে। হতভাগ্য মা আশঙ্কায় আছেন তার মেয়ের নির্যাতনকারী শেষ পর্যন্ত শাস্তি পাবে কীনা!
শিশুটির পিতা লাল মিঞা পেশায় দিনমজুর, মানসিকভাবে কিছুটা অপ্রকৃতস্থও। পরিবার নিয়ে থাকেন উত্তরার ১৪ নম্বর সেক্টরের পেছনে পাকুরিয়ার আজিজ মোল্লার বস্তিতে। মা বাসা বাড়ীতে কাজ করেন।
দুপুরে মেয়েকে গোসল করাতে গিয়ে লক্ষ্য করেন মেয়ে ব্যথায় বসতে পারছে না, এমনকি তাকে স্পর্শও করতে দিচ্ছে না। মেয়ে শুধু এটুকুই বলতে পেরেছে রুপার ভাই (সাইফুল্লাহ) তাকে ব্যথা দিয়েছে। মা তখন মেয়ের যৌনাঙ্গে খুঁজে পান জখমের চিহ্ন। তিনি সাইফুল্লাহকে জিজ্ঞেস করলে সে অভিযোগ উড়িয়ে দেয়।
পারভীন জানান মেয়ে যেটুকু বলতে পেরেছে তাতে বোঝা গেছে, মেয়ে বস্তির মাঝখানে খোলা যায়গায় খেলছিল। স্নো দিয়ে সাজিয়ে দেবার কথা বলে ঘরে ডেকে নিয়ে নির্যাতন করে সাইফুল্লাহ।
পারভীন লেখাপড়া জানেন না। তেমন চালাক চতুরও নন। কী করবেন বুঝতে না পেরে কয়েকজন প্রতিবেশি এবং বাড়ীওয়ালাকে জানান। বাড়ীওয়ালা তাকে বিচারের আশ্বাস দিয়ে থামিয়ে রাখে। এসময় এক প্রতিবেশী তাকে থানায় অভিযোগ করার পরামর্শ দেয়। থানায় গেলে কর্তব্যরত পুলিশ কর্মকর্তা তাকে মামলা না করে বাড়ীওয়ালার বিচারের জন্য অপেক্ষা করতে বলে। অথচ তারা জানেন, এই ধরনের অভিযোগের ক্ষেত্রে দেরি মানেই আলামত নষ্ট হওয়া। পারভীন অপেক্ষা করেছেন। কিন্তু বাড়ীওয়ালা কিছুই করেনি। এসময় তার এক প্রতিবেশী যে বাড়ীতে কাজ করেন তাদের জানালে তারা তাকে আইনী প্রক্রিয়ায় বিচার চাওয়ার জন্য উদ্বুদ্ধ করেন। তাদেরই সহায়তায় রোববার মামলা নেয় পুলিশ। গ্রেপ্তার হয় সাইফুল্লাহ। শিশুটিকে মেডিকেল পরীক্ষার জন্য নেয়া হয়। ঘটনার তিনদিন পরও মেয়েটির শরীরে গভীর ক্ষতের চিহ্ন খুঁজে পেয়েছেন চিকিৎসকরা।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা তুরাগ থানার এসআই মিজান জানিয়েছেন এখন তাদের দায়িত্ব ঘটনা তদন্ত করে চার্জশিট দেয়া। পুলিশ হয়তো চার্জশিট দেবে, কিন্তু পারভীনের দুশ্চিন্তার শেষ নেই। দিন আনে দিন খায় পরিবারটিকে নিজ খরচেই মেয়েকে মেডিকেল পরীক্ষার জন্য নিয়ে যেতে হয়েছে। জবানবন্দির জন্য আদালতে নিতে হয়েছে। এরপর আর কোন খরচ চালানোর সামর্থ্য নেই তার। অর্থের বিনিময়ে আপোসের প্রস্তাব পাচ্ছেন। কতক্ষণ তা এড়াতে পারবেন সেটাই এখন প্রশ্ন।
দরিদ্র পরিবারগুলোতে যখন এধরনের ঘটনাগুলো ঘটে তখন পুলিশ ও প্রশাসনের ত্বরিৎ এবং আন্তরিক সহযোগিতা দরকার। শিশুটির এখন উপযুক্ত চিকিৎসা দরকার। দরকার মা ও শিশু দুজনেরই কাউন্সেলিং। কোথায় যাবেন পারভীন? পুলিশের একটি ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টার আছে। সেটি আসলে কাদের সাপোর্ট দেয় তা জানে না ভূক্তভোগীরা।