র‌্যাগিং প্রশ্নে সবার এতো জ্বলছে কেন?

তির্থক আহসান রুবেল: উইমেন চ্যাপ্টার এ আসাদুজ্জামান আসাদ নামের এক ভাইয়ের লেখা পড়লাম। শুরু থেকেই লেখাটা পছন্দ হচ্ছিল। কিন্তু শেষে এসে একি কথা দেখলাম! র‌্যাগের সীমা ছাড়িয়ে যাওয়াটাই নাকি শুধু অন্যায়! এটা নাকি একটা স্রেফ আনন্দদানের একটা উপলক্ষ! অথচ উনার বলা অভিজ্ঞতার জায়গাটাতে তো একটাও আনন্দদায়ক উদাহরণ নেই!

উনি আরো বলেছেন, মাথা ব্যথায় যেমন মাথা কাটাটা সমাধান না… অর্থাৎ সীমা না ছড়ালে র‌্যাগিংটা হালাল! উনি এটাও বলেছেন, র‌্যাগিং এর মাধ্যমে অনেক বড় ভাইয়ের সান্নিধ্যও পেয়েছেন, স্নেহ পেয়েছেন পরবর্তীতে।

tirthok
তির্থক আহসান রুবেল

হতাশার চূড়ান্ত জায়গায় চলে গেলাম! জুনিয়রকে আপন করতে ডেকে নিয়ে তাকে চা-সিগারেটের আড্ডায় সাথে রাখলেই হয়! র‌্যাগিং কেন! আর সেই র‌্যাগিং যদি হয় শারীরিক বা মানসিক টর্চারের অপর নাম, তবে তো তা অবশ্যই ফৌজদারি আইনের আওতায় পরার মতোই অপরাধ। র‌্যাগিংটাকে সহ্য করতে না পেরে কোন শিক্ষার্থী যদি তার শিক্ষা জীবনটাকে বলী দিয়ে বাড়ি ফিরে যায় বা ফলাফল খারাপ করে বা ভয়ে ক্লাসে আসতে না পারে, তার দায়ভার কে নেবে!

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সস্তায় যে পড়ালেখা, সেটা কিভাবে হচ্ছে? আমার মতো সারাদেশের অসংখ্য শ্রমজীবী মানুষের ঘামঝরা টাকায়! কৃষকের ফসলের ন্যায্য মূল্য না পেলেও সে ট্যাক্স  দিচ্ছে, রিক্সাওয়ালা ট্যাক্স দিচ্ছে, একজন ফকিরও ট্যাক্স  দিচ্ছে সেই খরচ মেটাতে! দেশের ধনী শ্রেণী তো নানাভাবে কালো টাকা আর ঋণখেলাপির তালিকায়! তাদের টাকায় সরকার চলে না, অর্থাৎ একটা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সেই সস্তা শিক্ষা কার্যক্রম চলে না। তাহলে সেই বিকৃত, লোভী, বাটপার, ফটকা, দু-নম্বরীদের মতো অমানবিক, বিকৃত সংস্কৃতির পেছনে কেন রক্ত-ঘাম এক করা মানুষগুলো টাকা ঢালবে?

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় এমন একটা ক্যাম্পাস, যেখানে শুধু প্রগতি নয়, প্রকৃতি পরিবেশ মুক্ত জীবনের অবাধ বিচরণ। সেখানে এই বিকৃতপনা কেন! ১৯০ বছর ব্রিটিশের গোলামী থেকে কি পাকিস্তানের জন্ম হয়নি? ২৩ বছর পাকিস্তানী শোষণ থেকে কি লড়াই করে বাংলাদেশের জন্ম হয়নি? তাহলে কেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের এতো বছরের ইতিহাসের কলঙ্কিত অধ্যায় থেকে বের হয়ে আসতে চাইবে না আজকের শিক্ষার্থীরা!

কিংবা আরো কোন কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ে যদি গুমোট কান্না হিসেবে ভাল সম্পর্ক গড়তে নবীনদের ভাই-বোন-বন্ধু হয়ে সিনিয়ররা সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিন। র‌্যাগিং আবার অধিকারের পর্যায়ে পড়ে কিভাবে! কে আপনাদের সে অধিকার দিল!

অবাক হয়ে দেখতে হচ্ছে, র‌্যাগিং নিয়ে কথা ওঠায় নাকি বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানহানি ঘটেছে! এটা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এবং বর্তমান কিছু শিক্ষার্থীর কথা! অথচ যে বিষফোঁড়া লালন করছেন, তা যে অনেকের অগোচরে ক্যান্সারে রূপ নিয়েছে সেটা কি কখনো ভেবেছেন! অপসংস্কৃতি বা বিকৃতপনা বজায় থাকায় কিভাবে সম্মানবোধে বসবাস করছেন!

বরং প্রতিবাদটা তো সিনিয়রদের কাছ থেকেই আসার কথা যে, ‘আমরা সিনিয়র হিসেবে ঘোষণা করছি যে, আর কখনো আমাদের ক্যম্পাসে র‌্যাগিং হবে না। যদি কেউ সেটা করে আমরা সবাই তার বিরুদ্ধে অবস্থান নেবো’! তাতে কি আপনারা সারাদেশে সম্মানীত হতেন, না কি অপমানিত! প্রায়শঃই সংবাদ হচ্ছে বিভিন্ন জায়গায় নারী-শিশু (বালক-বালিকা) ধর্ষিত হচ্ছে সেটা গোপন রাখলে পরিবারের সম্মান নাকি প্রকাশ করে সেটা বন্ধ এবং তাকে দমন করতে পারাটা সম্মান!

সাম্প্রতিক সময় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ম বর্ষের শিক্ষার্থী এবং জাতীয়-আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত শুধু নয়, বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে উজ্জীবিত করে এবং যুদ্ধাপরাধের বিরুদ্ধে নিজের শক্ত অবস্থানের জন্য সারাদেশ এবং বিশ্বব্যপী সম্মান পাওয়া জান্নাতুল নাঈম প্রীতি তার ক্যাম্পাসে চলমান এই বিকৃত র‌্যাগিং সংস্কৃতি নিয়ে প্রতিবাদ করার পর সারাদেশে তোলপাড় পড়ে গেছে। কোটি কোটি লোক যেমন তার সমর্থনে দাঁড়িয়েছে, তেমনি বিপরীতে দাঁড়িয়ে নিজেদের বিকৃতপনার বা গোপন করার চেষ্টায় আছেন অনেকেই।

আবার তাদের সমর্থন দিয়ে অনলাইন দুনিয়াতে জামাত শিবির বা যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষশক্তি দাঁড়িয়ে গেছে। কারণ প্রীতির উপর তাদের ক্ষোভ বহু পুরানো। যুদ্ধাপরাধী মুজাহিদ যখন মন্ত্রী হিসেবে রাজশাহী যায়, তখন মেধাবী ছাত্রী হিসেবে প্রীতিকে আনা হয় তাকে ফুল দিয়ে বরণ করতে। কিন্তু প্রীতি মুজাহিদকে দেখে তাকে ফুল দিতে অস্বীকৃতি জানায়। এই ইতিহাসটা যখন রচিত হয়, তখন প্রীতি স্কুল পড়ুয়া। আর সেই প্রীতিকে অনেকে বলছেন, ফেসবুকে নাকি সে সেলিব্রেটি হবার চেষ্টা করছে! এটাকে আপনাদের মুর্খতা বলবো, নাকি জামাতী ভাবধারার সহযোগিতা বলবো!

কারণ প্রীতি এতো বড়ই সেলিব্রেটি যে, তার আশেপাশে সেই ক্যম্পাসের আর কেউ আছে কিনা সন্দেহ। আর সেটা নিজের আজন্ম কর্ম দিয়ে!

ঢেকে আড়াল না করে এবার এই অপসংস্কৃতির ভাইরাসটা তাড়ানোর সময় হয়েছে সম্মানীত সাবেক এবং বর্তমান শিক্ষার্থীবৃন্দ। আপনাদের সামনে সেই সুযোগ যা দিয়ে আপনারা ইতিহাস রচনা করে সুন্দরের সাক্ষী হতে পারেন! বাকিটা আপনাদের বোধ এবং বিবেকের বিষয়।

সর্বশেষে আমার দেখা প্রীতির শেষ স্ট্যাটাসটাই জানাই, জানি না এতে আপনারা কতটা গর্বিত হবেন! তবে লড়াইটা মানুষই করে যারা বঙ্গবন্ধুর উত্তরসুরী, গরু-ছাগলের জন্য লড়াই নয় কখনই।

‘একটা গোপন কথা ফাঁস করে দিচ্ছি- যে আশ্রয়ে এই কয়দিন আমি পলাতক ছিলাম আমার দুর্দিনের সেই আশ্রয়দাতারা বরাবর হুমকি পেয়ে এসেছে যে আমাকে মেরে ফেললে মিডিয়া আমাকে নিয়ে নিউজ করবে আমি র‍্যাগিং বিরোধী প্রতিবাদী লেখক বলে, কিন্তু তাদের মেরে ফেললে তাদের শুধু কবর হবে! নিউজ- টিউজও হবে না! কাজেই তারা যেন আমাকে সেই আশ্রয় থেকে বের করে দেয়!

এইসব হুমকিদাতারা জেনে রাখুন, আপনারা প্রত্যেকে নজরদারিতে রয়েছেন। একটা হাঁচি দিলেও প্লিজ ভয় পেয়ে দেবেন! আমাকে বিশ্ববিদ্যালয় আর হল থেকে বের করে দেবার, মেরে ফেলার হুমকি দেন ভালো কথা, কিন্তু তাদের হুমকি দিয়ে র‍্যাগিংসহ অ্যাটেম টু মার্ডারের তাকমা নিজের দায়িত্বে নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছেন!

যদিও আমার হল প্রভোস্ট স্যার আমার সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা নিশ্চিত না করতে পারলেও যতদূর সম্ভব নিরপত্তা নিশ্চিত করবেন বলে কথা দিয়েছেন। তবুও প্রশাসনের কাছে, মিডিয়া এবং আমার পাঠকদের কাছে আকুল আবেদন- আমার যাইই ঘটুক না কেন, আমি সংবাদপত্রের কাছে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর বরাবর অভিযোগপত্রে যাদের নাম উল্লেখ করেছি তাদের এবং অনলাইনে আমার এই র‍্যাগিং বিরোধী প্রতিবাদের বিরুদ্ধের উস্কানি দাতাদের কাউকে ছাড়বেন না। প্রত্যেকটিকে ধরিয়ে দেবেন!

জাহাঙ্গীরনগর ক্যাম্পাসে কোনো ফাঁপর নামধারী র‍্যাগিং চলবে না, সে আমি এখানে থাকি বা না থাকি’!

বিদেশের সত্য ঘটনা: ‘দীর্ঘ ১৭ বছর আপন মেয়েকে গোপন কোঠরে আটকে রেখে বাবা নিয়মিত ধর্ষণ করেছিল। গত বছরের ঘটনা এটা। ইতিমধ্যে মেয়েটির একাধিক সন্তান হয়েছে। তারপর একদিন সব প্রকাশ পায়। সেই বাবাকে গ্রেফতার করা হয়’। তা আপনি কি সম্মান বাঁচাতে সেই বাবার পক্ষে দাঁড়াবেন? নাকি মেয়েটির?… জবাব দিন প্রকৃতির স্বর্গে বসবাস করা প্রিয় এবং সম্মানীত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়বাসী….

শেয়ার করুন: