পেডোফাইলদের চিহ্নিত করুন, সাবধান থাকুন

মোহছেনা ঝর্ণা: “পেডোফিলিয়া” একটি রোগের নাম। এটা নাকি মানসিক রোগ। যারা পেডোফিলিয়া রোগে আক্রান্ত তাদের বলা হয় ‘পেডোফিল’ বা ‘পেডোফাইল’। পেডোফাইলরা শিশুদের প্রতি যৌনাসক্ত থাকে। শিশু বলতে সব শিশু, ছেলে, মেয়ে কেউ বাদ যায় না পেডোফাইলদের বিকৃত লালসা থেকে। পেডোফাইলদের বিকৃত মানসিকতার শিকার হয়ে এক একটি নিষ্পাপ শিশু যে কী পরিমাণ ভয়ংকর কষ্ট, ক্ষত, আতংক নিয়ে বেড়ে ওঠে তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

ছোট্ট যে সন্তানটি আমাদের এখনো দু’চোখ মেলে পৃথিবীই দেখেনি, আমাদের সামান্য অসাবধানতায়, অসতর্কতায়, অসচেতনতায় সে আক্রান্ত হয়ে যেতে পারে মানসিক বিকারগ্রস্ত কোনো পেডোফিলের হাতে। কেননা, পেডোফেলিয়া রোগী হতে পারে আমাদের খুব কাছের মানুষটিও। নির্মম হলেও সত্যি নানা, দাদা, চাচা, মামা, খালু, ফুফা থেকে শুরু করে কাজিন যে কারো হাতেই যৌন নির্যাতনের শিকার হতে পারে ছোট্ট ফুলের মতো শিশুটি।

এখবরটা যখন পড়লাম, কিছুক্ষণের জন্য মনে হচ্ছিল নি:শ্বাস বন্ধ বোধ হয়ে মারা যাচ্ছি। কাউকে বিশ্বাস করতে পারবো না? কী অদ্ভুত কথা? তাহলে এই অবিশ্বস্ত পৃথিবীতে কেন আমরা আমাদের ভালোবাসার সন্তানটিকে নিয়ে আসি? কেন?

ঘরের আপনজনদের পরেই যাদের হাতে আমাদের কোমলমতি শিশুটি যৌন নির্যাতনের শিকার হতে পারে তারা হলো স্কুল শিক্ষক, গৃহ শিক্ষক, গাড়ির ড্রাইভার, বাড়ির দারোয়ান, প্রতিবেশী, বাড়ির সামনের দোকানদার, খেলাধুলার ক্ষেত্রে প্রশিক্ষক।

Stop Violence Collageশিশুদের যৌন নির্যাতনের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য বাবা- মাকেই উদ্যোগী ভূমিকা পালন করতে হবে। বুঝতে শেখার বয়স হলেই শিশুকে বোঝাতে হবে গুড টাচ (ভালো স্পর্শ) এবং ব্যাড টাচ (মন্দ স্পর্শ) সম্পর্কে।

এই পেডোফিলিয়া রোগটা সম্পর্কে একটু বিশদ আকারে জানতে গিয়ে গুগলে সার্চ দিয়ে দেখি নানা রকমের ভয়ংকর সব তথ্য। যারা ভিকটিম তারাও বিভিন্ন সময় শেয়ার করেছে তার প্রতিদিনকার দিনলিপিতে যোগ হওয়া কষ্টের, যাতনার অভিজ্ঞতা। অনেকে তো বুঝে না বুঝেই বেড়ে উঠেছে এই ফোবিয়ার ভেতর দিয়ে।
পেডোফাইলদের নির্দিষ্ট কোনো বয়স না থাকলেও পঁয়ত্রিশোর্ধ্বদের মধ্যেই এই প্রবণতা বেশি।
পরিবারের বয়স্ক ব্যক্তিদের হাতে শিশু যৌন নির্যাতনের ঘটনা ঘটলে সেগুলোকে বলা হয় ইনসেস্ট।

পেডোফাইলের হাতে আক্রান্ত হওয়ার সময় অনেক শিশু অস্বস্তি বোধ করলেও সব সময় তারা বুঝে উঠতে পারে না কী ঘটছে ব্যাপারটা। তাই অনেক সময় সে এ বিষয়ে কারো কাছে কিছু বলে না। কিন্তু যার দ্বারা সে আক্রান্ত তার উপস্থিতিতে সবসময় অস্বস্তিবোধ করে।

এখন কথা হচ্ছে যারা পেডোফাইল শিশুদের প্রতি যৌন আসক্ত হয়, বা শিশুদের প্রতি যৌন হয়রানির মানসিকতা রাখে, তাদের চিহ্নিত করাই হচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ কাজ। যেসব বয়স্ক ব্যক্তি নিজেরা টের পাচ্ছে তাদের ভেতরের এই নোংরা মানসিকতার কথা তারা এ ব্যাপারে মনোরোগ বিশেষজ্ঞদের শরণাপন্ন হয়ে কোমলমতি শিশুদের রক্ষা করার পাশাপাশি নিজেকেও রক্ষা করুন।

আর যারা নিজের রোগ সম্পর্কে জেনেও উদাসীন কিংবা জানেনই না তাদের হাত থেকে আমাদের শিশুদের বাঁচাতে হলে প্রয়োজন তাদের সনাক্ত করা এবং তাদের সচেতন করে তুলতে এই মনোরোগ সম্পর্কে ব্যাপক আকারে প্রচার করা।
সেই প্রচারটা প্রত্যকের পরিবার থেকে শুরু হলেই ভালো হয়।
পেডোফাইলদের সনাক্ত এবং সচেতন করার পাশাপাশি আমাদের শিশুদের এবং পরিবারের সদস্যদের সচেতন করে তোলাও জরুরী।

jharna-mohsena
মোহছেনা ঝর্ণা

যে শিশু একেবারেই অবুঝ তাকে তো আর তার সচেতনতার কথা বলা যাবে না, এক্ষেত্রে পরিবারের সদস্যদেরই বোঝাতে হবে একটা শিশুকে কতটুকু আদর করা যাবে, কতটুকু কাছে ঘেঁষা যাবে। অনেকে বাচ্চা দেখলেই জোর করে টেনে কোলে নিয়ে চেপে ধরেন, চুমু দেন, এ জাতীয় আদরের সময় অনেক বাচ্চাই অস্বস্তি বোধ করে। সুতরাং তাদের ক্ষেত্রে এ ধরনের আদর থেকে বিরত থাকাই ভালো।

যৌন নির্যাতন বলতে যে শুধু শিশুর স্পর্শকাতর অংগ স্পর্শ করা, ধর্ষণ করা, তা নয়, অনেক সময় অনেক পেডোফাইলরা নিজেদের গোপন অংগ শিশুদের দেখাতে এবং শিশুদের হাত দিয়ে গোপন অংগে স্পর্শ অনুভূতি পেতে পছন্দ করে। কিন্তু এটা যে শিশু মনে কি ভয়ংকর প্রভাব ফেলে তা শুধু ভুক্তভোগীই মাত্র জানে।

যারা শিশুদের যৌন নির্যাতন করে তারা অনেক সময় শিশুদের ভয় দেখায় এসব কথা যেন কাউকে না বলে, কাউকে বললে মারবে,তাকে খারাপ বলবে, শিশুরাও দেখা যায় ভয়ে আর কাউকে কিছু বলে না।
এক্ষেত্রে শিশুরা যখন একটু একটু করে বুঝতে শিখে তখন থেকেই তাদেরকে তাদের শরীরের প্রতিটা অংগের নাম শেখাতে হবে এবং কোন কোন অংগগুলো বেশি স্পর্শ কাতর সেগুলো সম্পর্কে তাদের ধারণা দিতে হবে।

স্পর্শকাতর অংগগুলো যেন কেউ ধরতে পারে, যদি কেউ জোর করে ধরতে চায় তাহলে যেন চিৎকার করে এবং যা কিছুই ঘটুক না কেন সব যেন সে নির্ভয়ে আমাদেরকে জানায় সে শিক্ষাটা দিতে হবে।
যে কোনো অবস্থাতেই আমাদেরকে আমাদের শিশুর কথা বিশ্বাস করতে হবে। সে যেন আমাদের কাছে কিছু না লুকায়, বলতে সংকোচ না করে এবং আমাদেরকে ভয় না পায় সেজন্য দরকার নিজেকে সন্তানের সবচেয়ে প্রিয় মানুষ হিসেবে গড়ে তোলা।

শিশুর প্রতি নির্যাতনকারীদের কঠিন শাস্তি প্রয়োগ এবং অপরাধ সংঘটিত হওয়ার আগেই যদি আমরা সচেতন হয়ে উঠি, আমাদের সচেতনতাই হয়তো রুখে দিবে পেডোফিলদের। আর তখনই আমাদের শিশুরাও মনের আনন্দ প্রজাপতি হয়ে উড়বে, নাচবে, গান করবে………..দৌড়ঝাঁপ করবে,ছোটাছুটি করবে,মাঠে খেলবে নির্ভয়ে, নিশ্চিন্তে, নির্বিঘ্নে…..

শেয়ার করুন: