ধর্ষণের প্রকারভেদ: ট্যাবু থেকে বেরুতে হবে

তানিয়া মোর্শেদ: একজনের লেখা থেকে তথ্যটি পেলাম, “বাংলাদেশে ২০১৫ সালে সাড়ে ৫শরও বেশী শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে। প্রথম ছয় মাসে ২৮০টি শিশু ধর্ষণের শিকার হয়, তার মধ্যে ৩০ জন শিশুর বয়স ৬ এর নীচে। ৭৯ জনের বয়স ৭ থেকে ১২ এর মধ্যে। গ্যাং রেপড হয়েছে ৬১, রেপের পর হত্যা ২০, রেপের পর আত্মহত্যা ৪, গৃহকর্মী ধর্ষণের সংখ্যাও অত্যধিক।”

tania-morshed
তানিয়া মোর্শেদ

কিছুদিন আগে জেনেছিলাম বাংলাদেশে পনের বৎসরের কম বয়সী মেয়েদের বিয়ের সংখ্যা বিশাল। টিভিতে একটি অ্যাডে বলে, পিরিয়ড শুরু হবার দু’তিন বৎসরের মধ্যে অসংখ্য মেয়ের বিয়ে হয়ে যায়। এদের অধিকাংশেরই নিশ্চয় প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষের সাথে বিয়ে হয়!

প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষের অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়ের সাথে শারীরিক সম্পর্ক তো ধর্ষণ। তার অর্থ বাংলাদেশে একটি বিশাল সংখ্যায় ম্যারিটাল রেইপ হয়! আর প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ যখন এসব অল্পবয়স্ক (সত্যিকার অর্থে প্রায় শিশু-বালিকা-কিশোরী) মেয়ের সাথে শারীরিক সম্পর্ক করে তাকে তো পেডোফেলিয়া বলে। অন্য অনেক দেশেও এমন ছিল বা আছে। সময়ের সাথে উন্নত সমাজগুলো এগুলো থেকে বের হয়েছে। বাংলাদেশ উন্নত হচ্ছে, কিন্তু নারী ও শিশুর বিষয়ে এখনো অন্ধকার যুগে পরে রয়েছে।

বাংলাদেশ, ভারতীয় উপমহাদেশ ধর্ষক আর পেডিফেলিয়াকে ভর্তি! হয়ত এইসব পেডিফেলিয়াকরা অল্পবয়স্ক স্ত্রীদের ধর্ষণের মাধ্যমে আরও অসংখ্য পেডিফেলিয়াকের জন্ম দিয়ে চলেছে!

আরেকটি পরিসংখ্যানে দেখা গেছে ৮০% নারী নিজ নিজ স্বামীর যৌন নির্যাতনের শিকার! মানুষ অনেক কিছু জেনেটিক্যালি উত্তরাধিকার সূ্ত্রে পায়। অপরাধ প্রবণতাও পায়। এগুলো নিয়ে অনেক গবেষণাও চলে। বাংলাদেশেও হওয়া উচিৎ। আরেকটি বিষয়, ছেলে শিশু-বালক-কিশোররাও কিন্তু ধর্ষিত হয়। সংখ্যায় মেয়েদের থেকে কিছু কম। ছেলেদেরটা খুব কম জানা যায়। ছেলেরা এবিষয়ে বলে না। কারণ সমাজে ট্যাবু, যে ছেলে ধর্ষিত হয়, সে হয়তো ততোটা “পুরুষ” নয়! প্রতিটা মা-বাবা-অভিভাবকের জীবনের সবচেয়ে বড় কর্তব্যের একটি, শিশুকে গুড টাচ-ব্যাড টাচ সম্পর্কে বলা। মা-বাবা বাদে কাকে এবং কতটা বিশ্বাস করা যাবে, তা শিশু বয়সেই শেখানো অবশ্য কর্তব্য।

বাংলাদেশে এখনও অধিকাংশ মা-বাবা অনেক অসচেতন। বাচ্চাকে নিজের শরীর সম্পর্কে শিক্ষা আর সাঁতার শেখানো বেঁচে থাকার অংশ। ধর্ষণ, পেডোফেলিয়া সম্পর্কে কিছু বললে পাশ্চাত্যের উদাহরণ টানা হয়। তবে কেউ যদি ভেবে থাকেন বাংলাদেশ, ভারতীয় উপমহাদেশে এগুলো অনেক কম, তাহলে বলতে হবে এখনও পুরো সত্য জানা নেই।

পাশ্চাত্যে এগুলো এখন ট্যাবু নয়। তাই প্রায় সবগুলো রিপোর্ট হয়। গোঁড়া, ধর্মান্ধ সমাজ এগুলো অন্ধকারে রাখে। ওহ আরেকটি বিষয়, ধর্মের সাথে এগুলোর সম্পর্ক আছে। ধর্মের যে যে মানুষ অপ্রাপ্তবয়স্ক বা শিশুদের বিয়ে করেছিলেন, তা যে ভুল ছিল তা স্বীকার না করলে সমস্যা থেকে যাবে।

আর রাষ্ট্রের বিচারহীনতার কথা বলে কী হবে? কত শত ধর্ষণের পর মিলবে বিচার?

শেয়ার করুন:

বয়স 18 হলেই আইনত: প্রাপ্ত বয়স্ক বলা হয়। প্রাপ্ত বয়স্করা মাত্রই বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারে। কিন্তু বয়স 18 না হওয়া সত্ত্বেও 18 লিখে কাবিননামায় বিয়ে রেজিষ্ট্রেশন করা হচ্ছে। সেটা বাবা -মা দিলেও যেমন অপরাধ ছেলে মেয়েরা যখন নিজেরা 18 লিখিয়ে বিয়ে নিবন্ধন করছে তখনও শাস্তিযোগ্য অপরাধ কিন্তু বিয়েটা বাতিল হয় না। এটাই বাস্তবতা ।   আইনের ফাঁক ফোকর দিয়ে এসব নিয়মিতভাবেই হচ্ছে। সচেতনতার বিকল্প নাই। লেখাটা ভালো হয়েছে তানিয়া মোর্শেদ আপা।