জান্নাতুন নাঈম প্রীতি: আমি আমার ইউনিভার্সিটি হলে অন্যায় নির্যাতনের শিকার হচ্ছি। বিষয়টি দেশের মিডিয়া এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে আমি উপস্থাপন করছি।
আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলিতে ঢুকলে বোঝা যায় কত মেরুদণ্ডহীন একটা জাতি তৈরি হয়েছে এদেশে। আমি দেশের একটি অন্যতম নামী পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ি। পড়ালেখার স্বার্থে আমাকে হলে থাকতে হয়। এখানে প্রথম আসার পর একটি অদ্ভুত বিষয়ের মুখোমুখি হয়েছি- যেটির নাম সহজ বাংলায় ‘নির্যাতন’। নির্যাতনটি করা হয় মানসিকভাবে। অন্যদের সামনে হেয় করে, ছোটো করে।
একটা যন্ত্রণাকর অধ্যায় পার করে অবশেষে আমি বিশ্ববিদ্যালয় নির্ধারিত হল কমিটির কাছে সাধারণ সভায় গতকাল বলেছি- নির্যাতনটা এখানে একটি ট্রাডিশান। একটি ব্যাচ অন্য ব্যাচের ওপর করে থাকে। তোমার মুখটি হাসি হাসি হয়ে থাকলে তারা তোমাকে বলে বসবে- আরও কয়েক রকমভাবে ওইটা করে দেখাও। তোমাকে এই অন্যায় আবদার মেনে নিতে হবে, না নিলেই তুমি সম্মিলিতভাবে টিজিং তথা উত্যক্ত হবার শিকার হবে। শুধু আমিই না, আরও অনেকের সাথে এটা ঘটেছে এবং ঘটে চলেছে।
আমি সাধারণ সভায় বলেছি, আমি কেমন কষ্ট পেয়েছি মানসিকভাবে। প্রভোস্ট স্যারসহ অন্যান্য শিক্ষকরা হলের সব ডিপার্টমেন্টের কর্মকর্তারা এবং ছাত্রীরা উপস্থিত ছিলেন তখন। প্রসঙ্গক্রমে জানাচ্ছি- আমি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের ৪৫ তম আবর্তনের একজন শিক্ষার্থী। প্রীতিলতা হলে আমার এলটমেন্ট। এই হলেই নানাভাবে আমার কতিপয় সিনিয়র শিক্ষার্থী দ্বারা আমি অপমানিত হয়েছি, দীর্ঘদিন ধরে ডিপ্রেশানসহ নানা মানসিক সমস্যায় ভুগছি। হল সুপার দুজনেই এই মানসিক সমস্যার দরুন আমার অজ্ঞান হওয়া সহ নানান অসুস্থতার সাক্ষী।
গতকাল সাধারণ সভায় আমি র্যাগিং প্রসঙ্গটি নিয়ে কথা বলার পরে সভা শেষে হলের আওয়ামী লীগ নেত্রী স্বপ্না আপু (৪০ তম ব্যাচ, জিওলজিক্যাল সায়েন্স) তিনতলায় গণরুমের পাশের কক্ষে আমাকে ডাকেন। সেখানে নানারকম ভয়ভীতি প্রদর্শন এবং র্যাগিংয়ের প্রতিবাদ করায় আমাকে নানাভাবে হুমকি দেন। সেসময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন তার বান্ধবী এশা। তিনিও আমাকে নানা কথা বলেছেন, বলেছেন প্রতিবাদ করে কোনো লাভ হবে না। উল্টো আমাকে হল ছেড়ে যেতে হবে। এমনকি আমার হলের সহপাঠীরাও আমাকে তাদের ভয়ে সাহায্য করবে না বলেও আমাকে শাসানো হয়। আমি নিরুপায় হয়ে বিষয়টি কয়েকজন সিনিয়রকে জানাই। তারা নৈতিক সমর্থন দিলেও আমাকে সাহায্য করতে অপারগ বলে জানান। রাত ৫টা নাগাদ আমি আমার একজন পরিচিত সিনিয়রকে বিষয়গুলি খুলে বলি তিনতলার এ ব্লকের সিঁড়িতে বসে।
ওই সময়টুকুতে আমার গণরুমের (৪র্থ তলা) সহপাঠীদেরকেও সম্ভবত ভয়ভীতি প্রদর্শন করা হয়। ৫টায় গণরুমে ফেরার পরে সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর বিষয়টি টের পাই। ৯টা ৪৫ এ আমি হল ত্যাগ করি এবং নিজ ডিপার্টমেন্টে যাই। এরপর বিকেলে গোপনসূত্রে জানতে পারি হলে আজকেও সিটিং নামক র্যাগিংটি ঘটবে। তাই নিজ নিরাপত্তার স্বার্থে আমি হলে ফিরিনি। এমতবস্থায় বিষয়টি বাংলাদেশের মিডিয়া এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে আমি উপস্থাপন করছি।
এতদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্নাম হবে বলে চুপ করে থেকেছি। সয়ে গিয়েছি। প্রতিবাদ করিনি। এর ফলাফলগুলি আমার মানসিক চিকিৎসক এবং পরিবারের মানুষেরা জানেন। বলতে গিয়েও বলিনি- আমার সঙ্গে অন্যায় ঘটছে, অবিচার ঘটছে। পাছে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্নাম হয়! কিন্তু দীর্ঘ প্রায় ছয়মাসের প্রতিবাদহীনতা শেষে মনে হয়েছে- আগামীতে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার যেসব ছোটো ভাইবোন আসবে তাদেরও এটির শিকার হতে হবে, তখন সমস্ত দ্বিধা সংকোচ ঝেড়ে দাঁড়িয়েছি। কারণ আমি চাই না আমার মতন একটি দিনও কারো মানসিক অশান্তিতে কাটুক। কারো একটি দিনও অহেতুক দুশ্চিন্তায়, ভয়ে কাটুক।
জীবনে কখনই অন্যায় মেনে নেইনি, ভবিষ্যতেও নেবো না। তুমি দুনিয়ার যেই-ই হও আমি তোমার অন্যায় মেনে নেবো না। কারণ জীবনটা আমার কাছে দৌড় প্রতিযোগিতা নয়, আমার কাছে ভ্রমণ। অন্য কারোর জন্য আমার মূল্যবান ভ্রমণটি আমি নষ্ট করবো না, করবো না এবং করবো না!
জান্নাতুন নাঈম প্রীতি
প্রীতিলতা হল, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
এই জানোয়ারেরা কি আদৌ ঠিক হবেনা?
It is a regular affair in every public university more or less.
JU is an area of raging and RU is an area of murdering
Didn’t get it completely. What happened?