ধর্ষণেচ্ছু অমানুষ সৃষ্টির কারখানা বন্ধ হোক

রাহাত মুস্তাফিজ: ধর্ষণের শাস্তি হিসেবে লিঙ্গ কর্তনের কথা একসময় বলেছি। কিন্তু ভেবে দেখলাম এটা কোনো সমাধান নয়। লিঙ্গ কর্তন করে পরবর্তী ধর্ষকের উত্থিত শিশ্নের ছোবল থেকে নারী, শিশু (ছেলে-মেয়ে) কে রক্ষা করা সম্ভব নয়। শাস্তি দিয়েও এটা নিবারণ করা যাবে না।

rahat-2
রাহাত মুস্তাফিজ

ধর্ষণের চেয়ে ধর্ষণেচ্ছা মহামারী। এই ইচ্ছে ঘুমিয়ে থাকে মস্তিষ্কে। স্যুট – টাই পরা তথাকথিত ভদ্রলোক থেকে শুরু করে ছেঁড়া লুঙ্গি – শার্ট পরা বিত্তহীন বদমাশের মগজে এই ইচ্ছে সুপ্ত অবস্থায় থাকে। অনুকূল পরিবেশে উভয়ের ঘুমন্ত ইচ্ছেটিকে দানব হয়ে উঠতে দেখা যায়। সুযোগের অভাবে ভাল মানুষ ভদ্রলোকটি চেষ্টা করে ভদ্র মুখোশটি পরে থাকার, তবে সেও ফাঁকে পেলে গৃহসহায়ক নারীটিকে রেইপ করে প্রেগন্যান্ট করে ছেড়ে দেয়। অন্যদিকে লুঙ্গি বদমায়েশের এসবের বালাই নেই, প্রয়োজনীয় আড়াল হলেই পাশবিক ইচ্ছেটিকে সে মিটিয়ে নেয়।

এক্ষেত্রে ধর্ষক বা ধর্ষণেচ্ছুর কাছে নারীটি বা শিশুটির বয়স বা ধর্ম বিবেচ্য নয়। তাহলে উপায়?

এসব বিষয়ে শর্ট-কাট কোনো উপায় নেই। একজন দুজন ব্যক্তির মগজ নষ্ট হয়ে গেলে বলা যেতো এদেরকে খাঁচায় পুরে ফেলা হোক। এটা সামাজিক ব্যধি, মহামারী আকারে এর বিস্তার হচ্ছে। তো আস্ত সমাজটাকে তো খাঁচায় পুরে রাখা সম্ভব নয়। তাছাড়া, অসুখটা তো মস্তিষ্কের, চিন্তার, দর্শনের।

নারীর প্রতি গোটা সমাজের চিন্তাটা কি, দর্শনটাই বা কী? নারীর জন্য নির্ভয়, অনুকূল সমাজ কি একে বলা যায়? ভোগ্য পণ্য, যৌন বস্তু ছাড়া এ সমাজ নারীকে ভিন্ন কিছু ভাবে কি? পরিবারে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে, সমাজে, রাষ্ট্রে নারীর প্রতি কি দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করা হয়?

আমরা জানি সমাজটা নারীর জন্য, শিশুর জন্য কেবল কারাগারই নয়, বিরাট এক কসাইখানা। প্রতিনিয়ত বাংলার বিবিধ প্রান্তে কেটে টুকরো টুকরো করা হচ্ছে নারীকে, শিশুকে। করা হচ্ছে নষ্ট সমাজকে টিকিয়ে রাখার নামে, ধর্মের নামে। 

ইতি ও নেতি’র দ্বন্দ্বে আপাতত নেতি’র জয়জয়কার। ইতিবাচক সমাজের দাফনের উপর দিয়ে সৃষ্টি হচ্ছে নেতিবাচক সমাজ। এবং এ সমাজ শিশ্নপ্রধান। আর শিশ্নপ্রধান সমাজে ক্ষমতাধর নারীটিও চরম অসহায়। নারী পুলিশ অফিসারটি তাঁর অধস্তন পুরুষ পুলিশের কাছে নিরাপত্তাহীন। সুতরাং কেবলমাত্র নারীর ক্ষমতায়ন নারীকে পুরুষের ধর্ষণেচ্ছা বা ধর্ষণের কবল থেকে রক্ষা করতে পারে না। কারণ, পুরুষ পাষণ্ডের কাছে নারী নিছক ‘ সেক্স অবজেক্ট ‘ ছাড়া আর কিছু নয়।

অথচ আমরা নাকি উন্নয়নের মহাসড়কে উঠে গেছি। কর্তৃপক্ষ কি আমাদের মস্তিষ্কের উন্নয়নের জন্য কোনো পদক্ষেপ নিয়েছেন? নেননি। আর তাই দিকে দিকে ধর্ষক সাইফুলদের উৎপাদন হচ্ছে।

ভাবছেন কঠিন আইন করে এদেরকে সাইজ করা যাবে? ভুল। পারবেন না। মানুষই একমাত্র লম্পট, শয়তান প্রাণী, যে বদ্ধ ঘরে বসে এমনকি রাষ্ট্রপ্রধানের নারী আত্মীয়দের নির্বিঘ্নে রেইপ করে আসতে পারে। তবে হ্যাঁ, চিন্তায়। ওই চিন্তাটাই ভয়াবহ। একে শেকল পরিয়ে রাখা যায় না। আইন দিয়েও বেঁধে রাখা যায় না। সুযোগ পেলেই ওই চিন্তা নারীটির কিংবা শিশুটির জীবনকে তছনছ করে দেয়।

নারীর প্রতি পুরুষের দৃষ্টিভঙ্গির সংস্কার ছাড়া সুস্থ সমাজ বিনির্মাণ অসম্ভব। এই সংস্কার কাজে রাষ্ট্র ও সমাজ এখনই মনোনিবেশ করলে আগামী দুই/তিন প্রজন্মের বেড়ে ওঠার মধ্যদিয়ে ইতিবাচক সমাজের দেখা মিলতে পারে। এই ভ্রষ্ট চেতনা ঘরে-বাইরে নারী ও শিশুর জীবনকে সাক্ষাৎ নরক বানিয়েছে। ধর্ষকের শাস্তি হোক, ধর্ষণেচ্ছা নিবারণে রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক। ধর্ষণেচ্ছু অমানুষ সৃষ্টির কারখানা বন্ধ হোক।

শেয়ার করুন: