ফেরদৌস কান্তা: ঘৃণা প্রকাশ করার মত ভাষার স্বল্পতা অনুভব করছি। আমরা শুধু শুধু এই পুরুষ নামের অমানুষগুলিকে জানোয়ার নামে অভিহিত করি। কখনও প্রকৃতিতে কেউ দেখেছে এভাবে নিজের গোত্রের মধ্যে জানোয়ারেরা তাদের মেয়ে জানোয়ারদের ছিবলে খুবলে খায়? নাহ! কেউ দেখেনি। দেখবেও না কখনো। এটি প্রকৃতি বিরুদ্ধ কাজ।
সম্মান করাটা বরং আমরা ওদের কাছ থেকে শিখতে পারি। অনেকগুলি কুকুরও যখন একটা কুকুরীর পিছনে লাগে, কুকুরীর পছন্দ বুঝে বাকীগুলি পথ ছেড়ে দেয়, সরে যায় এবং চলে যায়। কম বেশি সব প্রাণীদের ক্ষেত্রেই এই নিয়ম প্রযোজ্য। সুতরাং আমরা নিজেরা নিজেদের কিভাবে জানোয়ারদের সাথে তুলনা করি? ধিক!

ছয় বছরের মেয়েটাকে ঘেঁটে কী সুখ পেয়েছে মানুষরূপী অমানুষদুটি সেটা তারাই ভাল বলতে পারবে। তবে এই ধরনের অমানুষগুলি যেন দিন দিন বাড়ছে। আর বাড়বেই তারা কারণ, আমরা আমাদের শিশুদের জন্য সুন্দর সমাজের কথা বলতে বলতে মুখ শুকিয়ে ফেলেছি, কিন্তু পরিবেশ নিশ্চিত করতে পারিনি।
আমরা পারি না একবারের জন্যও এই অমানুষগুলির ভয়াবহ আর শিক্ষণীয় শাস্তি নিশ্চিত করতে। যাতে করে অন্যরা আবার এই ধরনের অপরাধ করার আগে একশবার চিন্তা করে। এই দুই অমানুষের একটার নাকি আবার চারটা সন্তানও আছে! সেগুলির মাঝে তার মেয়েসন্তানটি তার কাছে নিরাপদ ছিল তো? এরা তো মনে হয় সুযোগ পেলে নিজেদের মাকেও ছাড়বে না। গতকাল থেকেই মনটা অনেক খারাপ হয়ে আছে। আর কত কন্যাশিশু বলি হবে এই নরপিশাচদের লালসার জন্য? কেন এদের যথোপযুক্ত বিচার আমরা নিশ্চিত করতে পারি না? আমাদের কীসের ভয়? কেন বারে বারে এরা বেঁচে যায়?
ব্যক্তিগতভাবে আমার অনেক মেয়ে বাচ্চা পছন্দ। আমার একটা ছেলেসন্তান আছে। ও বেশি দুষ্টামি করলে আমি ওকে মজা করে রাগানোর জন্য বলি, আমার আব্বুটা আম্মু হলো না কেন? কিন্তু আজ থেকে শপথ নিয়েছি আর কক্ষনও এই কথা আমি বলবো না আমার ছেলেকে। মেয়ে হয়নি ভালই হয়েছে। আমি কীভাবে ওকে রক্ষা করতাম! হায়! আমরা আর কতকাল এইরকম অসহায়ভাবে সব মুখ বুঁজে সহ্য করে যাবো?
কেন একটার পর একটা মেয়ের বীভৎস মৃত্যু আর তাদের লাশের মিছিল আমাদের দেখতে হবে! আমাদের বোধ, বিবেক, মানবিকতা কিছুই আর বাকি নেই আজ। আমরা খবর শুনি বা পড়ি, তারপর এক বা দুইদিন একটু আলাপ করি, আবার ভুলে যাই। অথবা নতুন কোন খবর আমাদের মনে জায়গা করে নেয়। আমাদের নৈতিকতা লোপ পেয়েছে বহু আগেই। কোনকিছুই আর যেন ছোঁয়না আমাদের। আর কত রক্তে হাত ধুলে পরে আমাদের অস্তিত্ব জাগ্রত হবে কেউ কি বলতে পারেন?
সবসময় আমরা মেয়েদের উপদেশ দিই আর দিতেই থাকি। ঠিক করে বসো, সোজা হয়ে বসো, সোজা হয়ে শোও, কাপড় ঠিক করো, ওড়না টানো ইত্যাদি ইত্যাদি। তবে এবার সময় এসেছে মেয়ে বাচ্চাটিকে নয়, আপনার ছেলে বাচ্চাটাকে শিখান, কিভাবে মেয়েদের সম্মান করতে হবে, কিভাবে মেয়েদের শরীর সর্বস্ব না ভেবে মানুষ ভাবতে হবে, কিভাবে দৃষ্টি সংযত করে চলতে হবে, কিভাবে মেয়েদের মতামত মুল্যায়ন করতে হবে।
যেসব মা ছেলে সন্তানের গর্বিত মাতা হিসেবে মাটিতে পা ফেলতে কষ্ট পান, তারাও দয়া করে মাটির পৃথিবীতে নেমে আসুন। আপনার ছেলে শিশুটি যেমন আপনার আদরের ধন, ঠিক তেমনি অন্যর মেয়েশিশুটিও তার মায়ের বুকের মানিক। আপনার ছেলের কিছু হলে যেমন আপনার রাতের ঘুম হারাম হয়ে যায়, সেই মায়ের মুখটা ভাবার চেষ্টা করুন, আপনার অমানুষ পুত্রটি যার সর্ব্নাশ করতে গিয়ে তাকে জীবন-মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছে। একবার চেষ্টা করে দেখুন, পারবেন তারপর শান্তিতে ঘুমাতে? তারপরও নিজেকে পুত্রসন্তানের গর্বিত মাতা হিসাবে ভাবতে আপনার লজ্জা হবেনা?

আমরা খুব সাধারণ মানুষ। সমাজ বা রাষ্ট্রের কাছে আমাদের খুব বেশি চাওয়া আগেও কখনো ছিল না, এখনও নাই। আমরা একটু নিরাপত্তা চাই, একটু শান্তি চাই। আমরা চাই আমাদের বাচ্চাগুলি নিরাপদ পরিবেশে হেসে-খেলে বেড়ে উঠুক। আমরা চাই আমাদের মেয়েটি নিশিন্তে নিজেকে মানুষ ভেবে তার স্বপ্নগুলি অকুতোভয়ে মেলে ধরুক। জীবনে যদি বাঁধা আসে তার, সেটি হোক প্রতিযোগিতার, যাতে সে মেধা আর মননে ছাড়িয়ে যেতে পারে প্রতিনিয়ত। যেন এমন বাঁধা না আসে যাতে তার জীবনটাই সংকটে পড়ে যায়, বেঁচে থাকা হয়ে যায় হুমকির সম্মুখীন।
আর কতকাল সইবো আমরা? আমরা জেগে উঠবো কবে? আমাদের বোধোদয় হোক এটা খুব বেশি আশা নয়। জানি, অনেক অমানুষের ভিড়েও কিছু মানুষ আছে। তারাই হোক আমাদের এই যাত্রায় সহযাত্রী। আশা করতে দোষ নেই, যেমন দোষ নেই অপেক্ষায়।
জানি একদিন আলো ফুটবেই। হয়তো সেটি আমার ছেলে সন্তানটি বা আপনার ছেলে সন্তানটি জ্বালাবে। আসুন শুরু করি নতুন দিনের পথে যাত্রা। আপনাকে বা আমাকে কাউকে না কাউকে তো শুরু করতেই হবে।
”পুরুষ নামের অমানুষ বনাম নারী নামের মানুষ” বিপ্লব দীর্ঘজীবী হোক ।
চমৎকার লেখা। আমাদের অনেকের মনের কথাগুলোই লেখিকা দারুণভাবে প্রকাশ করেছেন। “আমরা খবর শুনি বা পড়ি, তারপর এক বা দুইদিন একটু আলাপ করি, আবার ভুলে যাই। …কোনকিছুই আর যেন ছোঁয়না আমাদের।” এটা ঠিক যে, চারপাশে এত এত অপরাধ দেখেশুনে আমাদের অনুভূতি ভোঁতা হয়ে গেছে। কিন্তু শিশুদের ধর্ষণ বা যৌন-নিগ্রহের মতো চরম অসভ্য ও অস্বাভাবিক অপরাধ অন্য অপরাধগুলোর সাথে মিলিয়ে ফেলা ঠিক হবে না। কারণ এই অপরাধটা অনেক ভাবেই ক্ষতি করে আমাদের, এটা ফুলের মতো শিশুদের আনন্দময় শৈশবের পরিবর্তে বিভীষিকা ও আতঙ্ক উপহার দেয়, আর তাবৎ পুরুষকে ফেলে দেয় লজ্জা ও সন্দেহের মধ্যে । তাই এই অপরাধ যারা করে, সেই অমানুষ (জানোয়ার নয়!) দের শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ডও আমার কাছে হালকা শাস্তি মনে হয়। আমার যদি ক্ষমতা থাকত, তবে আমি এই নরপিশাচদের জনসম্মুখে চাবকে যন্ত্রণা দিয়ে মেরে ফেলার শাস্তি দিতাম, আর এই শাস্তির ব্যাপারটা সর্বত্র প্রচার করার ব্যবস্থা করতাম। যদিও অবাস্তব চিন্তা, তবু এ ধরণের কোন শাস্তির মাধ্যমেই হয়তো অমানুষদের জন্য ভীতি ও উদাহরণ সৃষ্টি করা সম্ভব। “আমরা পারি না একবারের জন্যও এই অমানুষগুলির ভয়াবহ আর শিক্ষণীয় শাস্তি নিশ্চিত করতে। যাতে করে অন্যরা আবার এই ধরনের অপরাধ করার আগে একশবার চিন্তা করে।”যদিও যে কোন অপরাধ বা যে কোন নারী নির্যাতনই নিন্দনীয়, তবু গুরুত্ব বিবেচনায় শিশুদের যন্ত্রণা দেয়ার এই অপরাধটাকে অগ্রাধিকার দিয়ে এর বিরুদ্ধে রাষ্ট্র, সমাজ, পরিবার সবাইকেই কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। কিন্তু সেরকম দৃশ্যমান কোন পদক্ষেপ কোথাও চোখে পড়ে না, তবু লেখিকার মতো আমরাও আশা করি… একদিন আলো ফুটবেই।
This is a very good article. But you have given a wrong scientific data. And so I think It somehow lessen the message. You said that no animal attacks their female counterpart for sexual purpose, which is wrong. Territorial alpha males actually sexually aggressive in many species.
But you should not compare humans with beasts. Because though human beings are also belongs to animal kind, but we are living in a society which provides us education to raise our moral values. So we should focus on improving the moral value of human beings rather than bring a comparison to animals.