শারমিন শামস্: বাগেরহাটের মোল্লারহাটে সোবহান মোল্লা নামের যে লোকটা সংখ্যালঘু পরিবারের বৌটিকে ধর্ষণ করেছে, তলোয়ার দিয়ে বৌটির স্বামীর গলা কেটে খুন করার চেষ্টা করেছে, তারপর কোপ দিয়ে মেয়েটার পায়ের গোড়ালি কেটে নিয়েছে এবং সেই আহত মেয়েকে হাসপাতালে যেতে না দিয়ে পুরো পরিবারকে জিম্মি রেখে রক্তাক্ত মেয়েকেই ধর্ষণ করেছে ১৫ দিন ধরে- সেই সোবহান মোল্লার চেয়ে ক্ষমতাধর আর কোনো ব্যক্তি এইদেশে আপাতত আছে বলে আমার মনে হয় না।
রাত আটটায় মোল্লারহাটের ওসিকে ফোন করলাম। জানা গেল তিনি নামাজে বসেছেন। আধাঘণ্টা পর ফোন দিয়ে জানা গেল, নামাজের পর তিনি কোরআন তেলাওয়াতে বসেছেন, কখন উঠবেন ঠিক নেই। অথচ সেটি তার ডিউটি আওয়ার বটে। মোল্লারহাটের ইউপি চেয়ারম্যানকে ফোন করলাম, চেয়ারম্যান মিটিং করছে। সেই মিটিং ইহ জনমে শেষ হয় না। এদিকে মামলা হয়েছে বৃহস্পতিবার, আসামি এখনো গ্রেফতার হয়নি। তবে ‘চেষ্টা চলছে’।
এই ‘চেষ্টা’ কতদিন চলবে, সে কেবল মোল্লারহাটের মোল্লারাই জানেন। টিনের চালা বাঁশের ছাপড়ার একটা ঘরে এতো কাণ্ড ঘটে গেল, তলোয়ার দিয়ে গলায় কোপ দেয়ার চেষ্টা হলো, পা কেটে ফেলা হলো, বাড়ির সবাইকে জিম্মি করা হলো, একদিন নয়, দুদিন নয়, টানা ১৫ দিন ধরে জিম্মি পরিবারের লোকের সামনে আহত রক্তাক্ত মেয়েকে ধর্ষণ করা হলো, তো এই ১৫ দিন ধরে মোল্লারহাটের সচেতন জনসমাজ কি কানে তুলো গুঁজে চলাচল করছিলেন? নাকি মোল্লারহাটের মোল্লারে কেউ কিছু কয় না? নাকি সনাতন ধর্মের হয়েও মোল্লারহাটে বাস করছিল বলে পুরো পরিবারকে একটু শিক্ষা দেয়া হলো? আর তাতে আসলে অখুশি নয় কেউ!
একটু খোলাসা হতে চাইছিলাম ব্যাপারটা। বলতে চাইছিলাম, কাজের সময় এতোক্ষণ সময় নিয়ে প্রার্থনার কথা হাদিসেও নাই। তো ওসি সাহেবের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত লাগবে দেখে আর জানা হলো না। আর জানা হবেও না। তবে আপনারা যারা বিষয়টা জেনেছেন, খবরটা পড়েছেন, কষ্ট পেয়েছেন, উদ্বিগ্ন হয়েছেন, আতংকিত হয়েছেন, বিচার চাইছেন, তাদের জন্য আমি কিছু ভবিষ্যৎবাণী করে দিতে পারি, মানে আপনাদের সুবিধার জন্য আর কি। এতে করে আপনাদের মূল্যবান সময় বেঁচে যাবে। পরে মিলিয়ে নেবেন দয়া করে।
১. এই ঘটনার কোন বিচার হবে না।
২. এই ঘটনায় সোবহান মোল্লার কোন শাস্তি হবে না।
৩. এই ঘটনার শেষ হবে সনাতন ধর্মাবলম্বী পরিবারটির এলাকা ছাড়ার মধ্য দিয়ে।
এবং ৪. দু’একদিনের মধ্যেই বৌটির চরিত্র নিয়ে বেশ কিছু রসালো গল্প বাজারে চলে আসবে, যা শুনে আপনি কিছু রিলিফ পাবেন এই ভেবে যে, যাক, দোষ তবে কিছু ওই বৌয়েরও ছিল!
আমি সোবহান মোল্লা গ্রেফতার কেন হয়নি, তা নিয়ে চিন্তিত নই, কারণ সোবহান মোল্লারা গ্রেফতার হয় না। যে প্রতিবেশিরা দীর্ঘ ১৫ দিন পর আহত মেয়েটার কাতরানি শুনে ঘরে ঢুকে তাকে উদ্ধার করেছে, সেই প্রতিবেশিদের চোখের সামনে দিয়েই তো ডুগডুগি বাজিয়ে চলে গেছে সোবহান মোল্লা। তারপর মেয়েটাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
কোন জাতীয় পত্রিকা বা বড় বড় সংবাদ চ্যানেলে দেখেছেন এই সংবাদ? পাঁচ-পাঁচটা দিন কিন্তু চলে গেছে এরপর। এরকম বর্বর-বিকৃত একটি ঘটনা ঘটে গেছে, কোথাও কোন বাতচিত দেখেছেন? একমাত্র জনকণ্ঠ ও বাংলাদেশ প্রতিদিন ছাড়া আর কোথাও কোন রিপোর্ট দেখলাম না।
তো আর কী জানতে চান আপনি? আর চানই বা কী? গ্রেফতার? বিচার? তবে আমি হতাশ এবার আপনাকে নিয়েই!

ভুলে যান সোবহান মোল্লাকে। ভুলে যান এই ঘটনা। কোথাকার কোন হিন্দু মেয়ে, ধর্ষণ হয়েছে, পা কাটা গেছে, অত্যাচারিত হয়েছে। এইসব ভেবে সময় নষ্ট করা কেন? দেশে ভাবনা চিন্তা করবার জন্য খোরাকের অভাব নেই। দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। বিরাট আকারে নারী উন্নয়ন হচ্ছে। কারণ যোগাযোগ মন্ত্রী মেয়েদের জন্য আলাদা বাস দিয়েছেন, শিক্ষামন্ত্রী মেয়েদের জন্য বিনামূল্যে শিক্ষার ব্যবস্থা করেছেন। আর কী চান? নারী উন্নয়ন এতো লাফিয়ে লাফিয়ে হচ্ছে যে আমরা দিশা পাচ্ছিনে আনন্দে কী করি আর না করি!
ফেসবুকে Bangladesh Minority Watch এর রিপোর্ট দেখলাম। ধর্ষিতা মেয়েটাকে প্রশ্ন করা হচ্ছে। মেয়ের চেহারা উন্মুক্ত। তো কথোপকথনটা শুনুন:
প্রশ্নকর্তা: আপনাকে ধর্ষণ করছে?
মেয়ে শূন্য চোখে তাকিয়ে আছে। কোন জবাব নাই।
প্রশ্নকর্তা: দিদি বলেন, ধর্ষণ করছে?
মেয়ে: হুম
প্রশ্নকর্তা: কতক্ষণ ছিল আপনার উপরে?
মেয়ে: (শূন্য চোখে নিষ্প্রাণ তাকিয়ে) অ্যাঁ?
প্রশ্নকর্তা: মানে কয়বার করছে?
মেয়ে: করছে ৪- ৫- ৬
প্রশ্নকর্তা: আচ্ছা, আচ্ছা ধর্ষণ করছে তাইলে…..
ভালো থাকবেন। একটি সভ্য সুন্দর নারীবান্ধব দেশের নাগরিক হিসেবে আপনাকে অভিনন্দন জানাই। শুভরাত্রি!
ekta e kotha..chiiiiiiiiiii..chiiiiiiiiii bangladesh er manush..tomader manobota bole kichu nei..sasti obossi pabe…
সোবহান মোল্লাদের কোন শাস্তি হয় না, হবেও না…।।
শারমিন শামস কে অকুণ্ঠ ধন্যবাদ।
Apu I want to take this case. Give me her contact number or adress. I will try my best.
Did you get the no. ?Are you helping the family now?