কানিজ আকলিমা সুলতানা: কত কত সম্পর্ক ভাঙ্গছে। হৃদয়ের আর্তিকে পায়ের তলায় পিষে দিচ্ছে। উদ্বাহু নৃত্য করছে ভাঙ্গার বিকট আনন্দে! তোমরা সব বোকার দল। তোমাদের ভাগ্যে থাকবে দিনশেষে ছিন্ন পাতায় তরণী সাজিয়ে একা একা খেলা করা আর শূন্যতার বোঝা ঘাড়ে টেনে নিয়ে চলা।
অথবা সম্পর্ক ভাঙ্গার নিরব গ্লানিতে আজীবন জ্বলেপুড়ে মরা।
তোমরা লোভী। ছাড় দিতে জানো না। খালি আমি, আমি, আমার, আমার।
অথবা তুমি ভীতু। আহাম্মক তুমি! সম্পর্ক ছেড়ে পালাও। আরও ভালো চাইতে গিয়ে জীবনের মূল সুরের বারোটা বাজিয়ে দাও।
চারদিকে ব্রেকাপের তাণ্ডব। এই তাণ্ডবে স্বপ্ন ভেঙ্গেচুরে আনন্দের পথ রুদ্ধ করে দিচ্ছে। জীবনের বাঁকের জন্য জমছে আবিলতা। চিনে পথে নেমেছো তো পুরুষ অথবা নারীরা? ব্রেকাপের পর পুরুষ তুমি আবারও তো আরেক নারীর সাথেই সম্পর্ক গড়ছো আর নারীও যাচ্ছো আরেক পুরুষের কাছেই।
তবে কেন ভালোবেসে একবার যার হাত ধরেছিলে তাকে ছাড়লে ? সে কি দানব হয়ে গিয়েছিল? তুমি কি মানব ছিলে? ভালোবাসার মানুষ কেন দানব হয়ে যায়? তোমার কোনো ভুল ছিল কি? ভালোবাসায় মমতার মিশেল দিতে ভুলে যাওনি তো? মানব যদি দানব হয়ে যায় সেটা নির্ঘাৎ মানসিক অসুস্থতায়। সে অবস্থায় তার হাত ছেড়ে দিলে কেন?
শারীরিক অসুস্থ প্রেমাস্পদের জন্য তো জান লড়িয়ে হাসপাতাল ডিউটি কর, সবকিছু ছেড়ে দিয়ে গেরুয়া ধর! তাহলে নিজের করে যাকে একবার ভেবেছো তাকে ভালোবাসার পথে ফিরিয়ে আনার দায়িত্ব নিলে না কেন?
আজ যাকে ভালো লাগলো, যাকে দেখে মনে হলো এই সেই যার জন্য পার হতে পারি অন্তবিহীন পথ তার জন্য কেন পারছোনা আর কয়েক কদম ক্লেশ সইতে? কেন তাকে ছেড়ে যাচ্ছো? এতো দুর্বলতা নিয়ে আগামীর কোনো একদিন সন্তানের চোখে চোখ রেখে তাকাতে পারবে তো? তাকে বলতে পারবেতো যে তুমি কখনও অন্যায় করনি, অথবা তুমি ভীতু নও? সন্তানের জন্য কতোটাই না আনন্দের হয় যদি তুমি বলতে পারো যে তুমি সেই মানুষ যে সকল দুঃসময়কে ভালোবাসার শক্তিতে জয় করেছো!
জানি, আরও ভালো থাকার লোভে অথবা খারাপ থাকার ভয়ে ভাঙ্গছে সম্পর্ক! জানি ভালোবাসার সামাজিক সম্পর্কগুলোতে লোভ বা ভয় বাসা বেঁধেছে আদিকাল থেকেই। কিন্তু এর থেকে কি বেরিয়ে আসা যায়না? নিঃশর্ত ভালোবাসা কি বিশাল শক্তি নয়? ভালোবাসার ভারে দূর্বিনীত হৃদয় কি একটুকুও নুয়ে পড়েনা? একটু মমতার উত্তাপ কি শক্ত দড়ি পাকিয়ে যাওয়া মনকে ময়েশ্চারাইজার সাপ্লাই করেনা?
মানুষের থাকে বেহেশত/ স্বর্গ/হেভেনের লোভ বা দোজখ/ নরক/হেলের ভয়। মানুষ এই লোভ বা ভয়কে জয় করতে ধর্মচর্চা করে। যার যত লোভ, যার যত ভয় সে ধর্মে ঢোকে তত বেশি।

আহা! মানুষ যদি সম্পর্কটাকে প্রকৃতির সবচাইতে দামী সম্পদ মনে করতো! যদি লোভ বা ভয়কে আস্তাকূড়ে পাঠাতে ভালোবাসার চর্চা করতো! যদি একদার ভালো মানুষটাকে তার অনুদ্ঘাটিত খারাপটুকুকে নিয়েই ভালোবেসে যেতো!
কি হতো তাহলে?
কি আর হতো! ব্রেকাপের তান্ডবের বদলে জগতে বইতো সুরেরধারা। প্রতিপ্রাতে রবীঠাকুরের এই গানটাই তখন বেশি গাওয়া হতো –
“তোমায় আমায় মিলন হবে ব’লে
আলোয় আকাশ ভ’রা।
তোমায় আমায় মিলন হবে ব’লে
ফুল্ল শ্যামল ধরা।
তোমায় আমায় মিলন হবে বলে
রাত্রি জাগে জগৎ লয়ে কোলে,
ঊষা এসে পূর্বদুয়ার খোলে
কলকণ্ঠস্বরা।”
ভালো থাকো গো মানুষেরা। লোভী হয়ো না, ভয় পেওনা, ভালোবাসার কারখানায় ভেজাল ঢুকতে দিওনা। জানো তো, অর্থকড়ি রূপ প্রাচুর্য্য স্বাস্থ্য ক্ষমতা সবকিছু ক্ষয়ে যায়, শুধু গ্লানিহীন ভালোবাসা আনন্দের ধ্রুবতারা হয়ে প্রজন্মের দিকনির্দেশক হয়ে থাকে!