স্তন ক্যান্সার শুধুই মেয়েলি বিষয় নয়

মারজিয়া প্রভা: আমার একটা জিনিস আসলেই দুঃখ লাগে যে স্তন ক্যান্সার নিয়ে সেমিনারগুলোতে সবসময় নারীদেরই কথা বলা হয়। এমনভাবে জিনিসটা রিপ্রেজেন্ট করা হয় যেন এটা কেবল নারীদের রোগ।

হলিক্রস কলেজের ফার্স্ট ইয়ারে থাকতে প্রথম স্তন ক্যান্সার নিয়ে সেমিনারে উপস্থিত ছিলাম। ওই বয়সে কোনো ছেলেদের কলেজে এই সেমিনার করা হয়েছে বলে জানি না! তার মানে কী দাঁড়ায়? ছেলেদের ব্রেস্ট ক্যান্সার হয় না? তাদের ব্রেস্ট নাই?

breast-cancerদুটো কারণে এই পোস্ট লিখছি। প্রথম কারণ হচ্ছে আমার এক আপু। যে ১৯৯৭ সালে আমার চোখের সামনে মারা গিয়েছিল ব্রেস্ট ক্যান্সারের কারণে। ক্যান্সার ধরা পড়ার পরেও তার ব্রেস্ট অপারেশন করা হয়নি। কারণ একটাই, “স্তন ছাড়া তার বিয়ে হবে কী করে?” এমন একটা ব্যাপার আমার জ্যাঠা-জেঠীর মধ্যে ছিল।

আর একটা কারণ, ব্রেস্ট ক্যান্সার নিয়ে একটা কাজ করতে চেয়েছিলাম বলে একজন পুরুষ বন্ধুর কাছে শুনতে হয়েছিল, ব্রেস্ট পরীক্ষা বিষয়ক সেশনে কোনো ছেলে থাকলে ব্যাপারটা ভালো হবে না? আমি আপাদমস্তক তার দিকে তাকিয়ে ছিলাম অনেকক্ষণ। পরে অবশ্য কাজ করা হয়নি।

যাই হোক, এই দুইটা ঘটনা আমাকে জানালো যে. ব্রেস্ট ক্যান্সার নিয়ে পুরুষদের মাথাব্যাথা কম। তারা এটা নারীদের প্রাইভেট পার্টসের রোগ বলে মনে করে। কিন্তু এটা সত্য যে, পুরুষদের ব্রেস্ট ক্যান্সার হয়। নারীদের তুলনায় এতো বেশি না হলেও হয়।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক সমীক্ষা থেকে দেখা গেছে, এ বছর প্রায় ২৬০০ জন পুরুষের ব্রেস্টে আক্রমণকারী ক্যান্সার পাওয়া গেছে। একজন পুরুষের জীবনে ব্রেস্ট ক্যান্সার হবার সম্ভাবনা ১০০০ এ ১ ভাগ, কিন্তু উড়িয়ে দেওয়ার মতন নয়। এটা অবশ্যই নারীদের তুলনায় কম। কিন্তু তাহলেও উদ্বেগের বিষয়টি উড়িয়ে দেয়া যায় না। ইউএসএ তে প্রতি ৮ জন নারীর একজন ব্রেস্ট ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়।

breast-cancerএকজন পূর্ণাঙ্গ পুরুষের ব্রেস্টের টিস্যু কম থাকে। একজন অপ্রাপ্তবয়স্ক বালিকার যেরকম থাকে, অনেকটা সেরকম। মেয়েদের পরবর্তিতে টিস্যু গ্রোথ হয়। পুরুষের ক্ষেত্রে তা হয় না। তাই বালিকার স্তনের বেশি টিস্যু থাকার কারণে এবং দুধ সংরক্ষণ করা ঘরে যে ক্যান্সারটা হতে পারে, সেটা পুরুষের ক্ষেত্রে হয় না।

তবে ভ্যানগার্ড ব্লগে আজ প্রকাশিত এক তথ্যে বলা হয়েছে, যে কয়টা ব্রেস্ট ক্যান্সার নিয়ে গবেষণা করা হয়েছে, তার ৫% পুরুষ। মানে টিস্যু কম মানেই, ঝুঁকি কম নয়।

সবচেয়ে বড় কথা, একজন পুরুষের ব্রেস্ট ক্যান্সার একজন নারীর চাইতেও বেশি ভয়ানক। এটার আরেকটা কারণ হচ্ছে পুরুষরা ভাবতেই চায় না তাদের স্তন ক্যান্সার হতে পারে। তাই চাক চাক দেখা গেলে বা সেখানে কোনরকম ব্যথা অনুভব হলে তারা চুপ করে বসে থাকে। ডাক্তারের কাছে যায় না। তাই দেরীতে ধরা পড়ে। আর এর মূল কারণ ওই একটাই, “স্তন ক্যান্সার নারীদের জিনিস। পুরুষের কেন হবে”?

কাছের কোনো নারীর ব্রেস্ট ক্যান্সার হলে পুরুষের ব্রেস্ট ক্যান্সারের ঝুঁকি বেড়ে যায়। ব্রেস্ট ক্যান্সারে আক্রান্ত মায়ের ছেলের ক্ষেত্রে এই ঝুঁকি থাকে। তাছাড়া অত্যধিক ইস্ট্রোজেন হরমোন গ্রহণ করলেও ঝুঁকি বেড়ে যায় স্তন ক্যান্সারের।

৩৫ এর পরে নারীদের জন্য স্তন ক্যান্সারের সময় হলেও ৬০ থেকে ৭০ বয়সের পুরুষদের ডেঞ্জার পিরিয়ড হচ্ছে স্তন ক্যান্সারের। লক্ষণ কিন্তু একই। চাক চাক অনুভব করা, অস্বস্তি বা ব্যথা, নিপল দিয়ে রস নির্গত হওয়া।

অতএব পুরুষেরা আপনারাও সচেতন হন নিজেদের স্তন নিয়ে। নারীদের স্তন ক্যান্সার নিয়ে সচেতন হোন! নিজেও সেমিনারগুলোতে যোগ দিন। নিজের স্তন নিজেও পরীক্ষা করতে শিখুন।

অক্টোবর মাস স্তন ক্যান্সার নিয়ে সচেতনতার মাস। নিজেদের নিয়ে সচেতন হবার সময় এখনই।

শেয়ার করুন:
Copy Protected by Chetan's WP-Copyprotect.