সুরাইয়া আবেদীন:
ইউনির বড় বোন, ধরে নেই তার নাম, সিমিন। তো আমার ফেসবুকের বন্ধু তালিকায় উনি আর উনার হাজব্যান্ড আছেন। একদিন আমি ইলেকট্রিক শক খেলাম যখন দেখলাম সিমিন আপার হাবির ফেসবুকে বন্ধু তালিকায় এমন সব মেয়েরা ‘যুক্ত’, যাদের সমাজ ‘ফোনকন্যা’ নামে ডেকে থাকে। উনার হাবি রুচিশীল একজন মানুষ, ভুল কইরা ফেসবুকের বন্ধু তালিকা গোপন রাখে নাই বিধায় আমার এবং আমার মতো অনেকের সামনে উনার ‘রুচিশীলতা’ র আড়ালে এমন ‘অরুচিশীলতা’ প্রকাশ পেয়ে গেল।
সিমিন আপার সাথে ক্লোজ আমি, তাই এক সন্ধ্যায় আড্ডার ফাঁকে এই ব্যাপার জিজ্ঞেস করে যা জানলাম তাতে আমি মহাকাশ থেকে পড়লাম। তারেক ভাই (ছদ্মনাম) সেক্সুয়ালি পারভার্টেড। সিমিন আপা যেখানে ‘কাব্যিক যৌনতায়’ (এর থেকে ভাল কিছু পাইলাম না) বিশ্বাসী, সেখানে তারেক ভাই ঠিক তার উল্টো। বাঙ্গালী নারীরা যে পর্ণের নারী চরিত্রদের মতো না, তাহা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চ ডিগ্রী ধারী, ব্যাংকে জব করা তারেক ভাই মানতে পারেন নাই, সিমিন আপা তাই ধারণা করেন (আসলে জানেন) তার হাবি বাইরে ফোন-কন্যাদের সহিত লীলাখেলা করিয়া বাড়ি ফেরেন…
আমি-আপনি মেনে নিলেন??
সিমিন আপা- সংসার ভাংতে ইচ্ছা করে না রে… দেখেও না দেখার ভান করি…
আমি-এটাকে আপনি ‘সংসার’ বলেন?
সিমিন আপা উঠে চলে গেলেন…
এক সহপাঠীর খালার কথা জানতাম, মারা গেছেন স্বামী-স্ত্রী দুইজনই। সেই খালামনি অল্প বয়সী কাজের লোক রাখতেন। উনার হাজব্যান্ড একজন সচিব ছিলেন, তিনি বলে দিয়েছিলেন সংসার বাঁচাতে হলে নাকি অল্পবয়সী কাজের লোক রাখতে হবে এবং উপভোগ (!!) করতে দিতে হবে…শুরুতে প্রতিবাদ করলেন, বাইরের লোক, ড্রাইভার, মালী আর কাজের লোকের সামনে চড়-থাপ্পড় খেতে খেতে যখন আর পারলেন না, তখন ‘অল্প বয়সী’ কাজের লোক রেখে নিজেকে অপমানের হাত থেকে বাঁচালেন। তাও ডিভোর্স দেন নাই।
আমার এক বড় বোন হাতে নাতে স্বামীকে অনৈতিক কাজে ধরে ফেলার পরেও সংসার ভাঙেননি। দুইজন দুই রুমে আলাদা থাকেন। তাও ডিভোর্স পেপারে সাইন করার সাহস ঐ আপা অর্জন করতে পারেননি।
ইন্টার্ন করার সময় ঐ প্রতিষ্ঠানের এক বড় আপু বলেছিলেন, তিনি বাবার বাড়ি বেড়াতে গিয়েছিলেন ৭ দিনের জন্য।বাসায় ফিরলেন আনন্দ নিয়ে। সব নরমাল।স্বামী অফিস থেকেই ঠিক মত এসছে কিনা খোঁজ খবর নিলেন এবং জানালেন দুপুরে একসাথে খাবেন বাইরে, এ কয়দিন তিনি অনেক মিস করেছেন তার ওয়াইফকে…আপু নিজেকে খুব লাকি ভাবতে ভাবতে আলমারিতে নিজের ব্যক্তিগত ড্রয়ার খুললেন। স্তব্ধ হয়ে দেখলেন কনডমের প্যাকেটে হিসাবের চাইতে দুইটা কনডম কম। উনি সাথে সাথেই খেয়াল করলেন বাসায় ঢোকার সময় কাজের মেয়েটাও কেমন করে যেন তাকিয়েছিল, সেই আপু পঞ্চম বিবাহ(!) বার্ষিকী পালন করলেন কিছুদিন আগে.. এবং আরও কয়েকশ বছর যেন একসাথে থাকেন সেই উইশ করে কেক কাটলেন!
কিংবা আমার সেই বন্ধুর কথাই বলি না কেন? যে স্বামীর দামি এপার্টমেন্ট, গাড়ি, গহনা আর ব্যাগ ভর্তি ম্যাকের প্রসাধনী নিয়ে আমাদের সামনে সুক্ষ্ম অহং বোধ করে। যদিও স্বামী লাত্থি দিয়ে সিঁড়িতে ফেলে দেয়ার ফলে কেটে যাওয়া কপাল বা ঘুষিতে গালে জমাট বাঁধা কালচে দাগ ঢাকতে মিথ্যাচার করতো এসব বলে যে, ‘আর বলিস না আমার বেড়ালটা আঁচড় দিয়েছে… বা সেদিন অন্ধকারে তোদের ভাইয়া আচমকা জড়িয়ে ধরলো তাল সামলাতে না পেরে সিঁড়িতে গেলাম পরে… তাই এই অবস্থা”’…
‘সংসার’ নিজের এখনো হয় নাই। বিয়ে করবো একদিন। সব মেয়ের মতো আমিও ভাবি আমার ছোট একটা সংসার, গোটা তিনেক তুলতুলে ছানা থাকবে…অফিস থেকে আমার ‘সে’ আর আমি একসাথে বাড়ি ফিরব… সুখে দুখে একসাথে দুজনের পাশে থাকব এবং এভাবেই একসাথে জীবন নামক কণ্টকময় সময় পাড়ি দিয়ে পরকালেও যেন সেই তাকেই পাই এমনই চাইবো সৃষ্টিকর্তার কাছে।
আচ্ছা, এমন তো আমরা অবিবাহিতরা সবাই ভাবি তাই না? উপরিউক্ত সিমিন আপা, বন্ধুর খালামনি, বড় আপা বা আমার ঐ বন্ধু ওরাও তো ভাবতো বিয়ের আগে এমন কিছু… কিন্তু বিয়ের পর এমন পরিস্থিতি হবে তা কি ভেবেছিলেন কখনও?
এক মিনিট, ভাববেন কেন? যা কিছু তাদের জীবনে হয়েছে তা কি তাদের পূর্ববর্তী কারোর জীবনে হয় নাই? ওগুলা কি সমাজে নতুন কিছু? সমাজে যে বহুগামিতার ব্যাপার আছে, পরকীয়া আছে, পুরুষের দ্বারা কাজের লোক ‘উপভোগের’ রেওয়াজ আছে, তা কি এই কাল-পরশু ধরে চালু? তা তো না। হাজার হাজার বছর ধরে এগুলা সমাজের অংশ।
তারপরেও এত অপমান, অসম্মানের পরেও মহামূল্যবান বস্তু ‘সংসার’ থেকে তারা বের হয়ে আসেন না কেন? বের হয়ে আসার মতো মানসিক শক্তি পান না কেন? সমস্যাটা কোথায়? এতো অপমান, অসম্মান, অবহেলা, শারীরিক আঘাতের পরেও কেন সেই সংসারেই তাকে থাকতে হবে? কেন মানসিক জোর হয়ে ওঠে না বের হয়ে আসার? নিজের প্রতি এই চরম অপমান মেনে নেবার যে মানসিকতা তা একজন নারীর মধ্যে কিভাবে শেকড় গাড়ে? আত্মসম্মান নিয়ে, মাথা উঁচু করে বাঁচার প্রতি এত অনীহা কেন নারীর? যুগ যুগ ধরে সমাজে বহমান নারীর এ মানসিক বৈকল্যর জন্য দায়ী কে?
নিজেকে এই হাইপোথেটিক্যাল পরিস্থিতির সম্মুখীন করলাম। আচ্ছা, আল্লাহ না করুক, যদি আমি উপরিউক্ত পরিস্থিতির সম্মুখীন কোনদিন হই, তাহলে আমিও কি এই মহামূল্যবান বস্তু ‘সংসার’ নামক প্রতিষ্ঠানকে টিকিয়ে রাখবো? আমি তো এই ‘সংসার’ নামক প্রাতিষ্ঠানের শুরু করেছিলাম সম্মান, পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ, ভালোবাসা আর একে-অন্যের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতিতে… সম্মান, পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ, ভালোবাসা আর একে অন্যের পাশে থাকা- এই চারই যখন নাই তাহলে কেন এই ‘সংসারে’ থাকা??
এবং ‘কেন’ র যখন কোন গ্রহণযোগ্য সংজ্ঞা আমি পাবো না, তখন আমি ডিভোর্স পেপারে খুব আত্মবিশ্বাসের সাথে সাইন সেই ‘সংসার’ থেকে বের হয়ে আসছি- এই চিত্র আমার মনে ভেসে উঠল…আচ্ছা এভাবে ভাবার শক্তি আমি কই পেলাম? আমিও তো নারী, কিন্তু আমার একবারও কেন মনে হলো না সমাজ কী ভাববে? আত্মীয়রা কী বলবে?
উত্তরে আমার মায়ের মুখ ভেসে উঠলো। আমার ‘মা’ আমাকে এভাবে ভাবতে শিখিয়েছেন। অবশ্য আমাদের এভাবে ভাবতে শেখানোর জন্য নিজ আত্মীয়দের কাছে কম কথা তাকে শুনতে হয়নি, আড়ালে, ইঙ্গিতে অনেক কিছুই অনেকে বলেছে তাকে।
বলেছে ‘আমাদের মেয়েদের বাপু আমরা এভাবে মানুষ করি না, মেয়েদের আবার আত্মসম্মান কী গো? এতো স্বাধীনচেতা ভাব ভালো না। স্বামীর সাত চড়ে রা করবে না- এই জিনিস তো আমাদের মুরুব্বিরাই শিখিয়েছেন। স্বামীরা ঐরকম করেই। এগুলা মেনে নিতে হয় ভাল মেয়েরা স্বামীর ঘর ভাঙ্গে না। কিছুতেই ভাঙ্গে না। স্বামী ছাড়া মেয়ে হলো পতিতা, বেশ্যা… বার জনের সাথে শোয়া মেয়ে হয় ডিভোর্সিরা।”
আমার মা উত্তর দিতেন না। অর্থনৈতিকভাবে স্বামীর উপর যারা চুল থেকে নখ পর্যন্ত নির্ভর করেন, তারা ‘স্বামীর সাতে চড়ে রা করে যে পতিতা, বেশ্যা আর বারজনের সাথে শোয়া মেয়ে হবেন না, তা তো স্বাভাবিকই।
এরা এক স্বামীর সাথে শুয়ে ভাল মেয়ে হবেন, তবে আলাদা বিছানায়…আলাদা ঘরে… যে শোয়া অসম্মানের, যে শোয়ায় তার স্বামী আর তার মাঝে থাকে আরেক নারী, কাজের লোক, কনডমের হিসাব না মেলা প্যাকেট।
অবশ্য আমার খুব জানতে ইচ্ছা করে ডিভোর্সি মানেই যে বারজনের সাথে শোয়, এরা যে বেশ্যা- এই তথ্য তারা কই পেলেন? এতো জোর দিয়ে এগুলো বলে যে নিজেরই অক্ষমতা প্রকাশ করেন, তা কি তারা বোঝেন না? চোখের সামনে নিজের মেয়ে স্বামীর হাতে চড় লাত্থি খাচ্ছে, বের হতে পারছে না, আর আরেকজনের ‘মেয়ে’ এসব থেকে সম্মানের সাথে বের হয়ে আসছে সবকিছু তুচ্ছ করে-এটা মানতে পারে না এসব মায়েরা। তাই মিথ্যাচার করে আক্রোশ মেটায়।
আমার মা সবসময় বলেছেন মাথা উঁচু করে বাঁচতে। কারোর দয়াদাক্ষিণ্য নিয়ে যেন মাথা নিচু করে না বাঁচি সে শিক্ষা আমাকে দিয়েছেন একদম শিশু বেলায়। আমার মনে পড়ে, শৈশবে আমি কক্ষনো বারবি নিয়ে খেলি নাই। পুতুলের বিয়ে দেই নাই। এসব কোমল ব্যাপার আমার শৈশবের অংশ ছিল না, পুতুল নিয়ে খেলা মেয়েরাই নিজেকে ‘পুতুল’ ভাবে সারাজীবন… কখনো এরা সমাজের নিয়মের পুতুল, কখনো বা স্বামীর হাতের… এ কোমলতা জীবনে কেবল কান্নাই আনে… নারীর এ ‘পুতুল’ সুলভ কোমলতাই তাকে ‘ভৃত্য’ করে দেয়, প্রভু ভাবতেই পারে না নিজেকে…
শৈশবে ”…and they lived happily ever after” ধরনের লাইনের গল্পও আমি শুনতে শুনতে ঘুমাই নাই। মেয়েদের জীবন কক্ষনো ”…and they lived happily ever after” হয় না। সিনডারেলারা রূপকথার বইতেই থাকে, এজন্যই পড়তে এতো ভালো লাগে… এই শিক্ষা ছোটবেলাতেই পেয়েছিলাম।
কলেজে থাকতেই বান্ধবীদের দেখতাম ম্যাকের একটা প্রোডাক্ট কেনার সময় বলতো ‘ইস কবে যে বিয়ে হবে… এগুলা তো হাবিরা কিনে দেয়…” বলেই গোমড়া মুখে এত্তগুলা টাকা আলমাসের কাউন্টারে ঢেলে দিত! দুই একজন ছাড়া কাউকেই আমি এভাবে ভাবতে দেখি নাই- আমার নিজের উপার্জনে আমিই কিনবো।
আসলে মেয়েদের ভাবনা গড়ে ওঠে মায়ের সান্নিধ্যে। মেয়েদের আত্মসম্মান গড়ে তোলা এবং নষ্ট করা এই উভয়ের কারণই এই ‘মা’…দামি শাড়ি, গয়না আর গাড়ি-বাড়ি যে পরের ছেলের ঘাড়েতে বসেই আদায় করতে হবে, এই ধারনা একটা মেয়ে কার থেকে পায়? ম্যাকের লিপস্টিক যে হাবিরাই কিনে দিবে, কিভাবে এই ধারণা মেয়ের মধ্যে আসে? হাবি নিজের থেকে যদি গিফট করে সে প্রসঙ্গ ভিন্ন। স্বামী উপহার দিতেই পারেন। কিন্তু সেই দিবে, আর ওয়াইফ হিসেবে সে শুধু নিবে, কে বলেছে?
বিয়ে টিকিয়ে না রাখলে যে সমাজ, আত্মীয়দের কাছে মুখ দেখানো যাবে না -এই কথাটা একটা মেয়ে সর্বপ্রথম কার থেকে শেখে? ‘কই আমাদের মেয়েরা তো ঠিকই স্বামীর ভাত খাচ্ছে, তোমার মেয়ে পারলো না কেন’ এ ধরনের নোংরা উক্তি একটা মেয়ের সামনে কে প্রথম আনে?
কে বলে ‘মা রে লোকেরা এগুলো বলবে। মুখ বুজে মেনে নে মা, সংসার কর!’ কে বলে ‘স্বামীরা ঐরকম গায়ে হাত তোলেই, এগুলা আমরাও মেনে নিয়েছি, তুই নে’- কে এভাবে মেয়েকে মেনে নিতে শেখায়?
উত্তর-মায়েরা।
মায়ের এভাবেই আমাদের আত্মসম্মানবোধটাই নষ্ট করে দেয়। মেয়েকে শেখায় না নিজের পায়ে দাঁড়াও। মাথা উঁচু করে বাঁচো। অন্যায়ের প্রতিবাদ করো। বলে না স্বামীর অন্যায় আচরণ মেনে নিও না। বলে না নিজের খরচ নিজে চালাও, অর্থনৈতিকভাবে নিজের উপর ভরসা করো, স্বামীর উপর না…
কপিলা বলেছিল ‘হায়রে পুরুষ’! আর আমি বলি ‘হায়রে নারী”!
প্রিয় গর্ভধারিণীগণ… কন্যাসন্তানকে আত্মসম্মান নিয়ে বাঁচতে শেখানোর দায়িত্ব আপনার। একমাত্র আপনার। এই দুনিয়া যে কতো নোংরা তা আপনিই তাকে জানাবেন, দুনিয়া তাকে জানানোর আগে। বিয়ে মানেই টিকবে, বিয়ে মানেই ”’…and they lived happily ever after”’ না, এটা মেয়ের মাথায় গেঁথে দেন শৈশবেই। সংসারে অকল্পনীয় অনেক কিছু ঘটে যেতে পারে তা যেন সে সামাল দিতে পারে তাকে তা আগে থেকেই জানিয়ে দেন। মানসিকভাবে প্রস্তুত করে দেন যেন সে স্বামীর কাছ থেকে অপ্রত্যাশিত কোনো ব্যবহারে ভেঙ্গে না পড়ে, বা মেনে না নেয়।
অন্যায় মেনে না নেবার প্রবণতা ভেতরে গেঁথে দেন। তাকে সুশিক্ষিত করে গড়ে তোলেন তার নিজের স্বার্থেই। তাকে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী যে হতেই হবে, এর কোন ছাড় নাই তা শিশুকালেই বুঝিয়ে দেন। ছেলেরাই ইনকাম করে বাবা-মাকে দেখে, তাই তাদেরকেই মাছের মাথা, সবচে বড় টুকরা দিয়ে মানুষ করতে হবে, স্বাবলম্বী করতে হবে- এইদিন শেষ অনেক আগেই।
মেয়েরা অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হলে নিজেকে নিজেই দেখে রাখতে পারবে, সবশেষে দেখে রাখতে পারবে আপনাকে।
কিভাবে?
ছোট একটা ঘটনা দিয়ে শেষ করি।
পরিচিত একজন নারী সারাজীবন শান্তি পান নাই স্বামীর থেকে। স্বামীর তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য, অপমান পেয়ে পেয়ে, কাজের লোকের সাথে সম্পর্ক ইত্যাদি দেখে দেখে তিনি মৃত এক মানুষ হয়ে ছিলেন। স্বামী তাকে কথায় কথায় শোনাতো যে, সে পরগাছা। যাবার জায়গা নেই, ঘাড় ধরে বের করে দিলে রাস্তার কুকুরের পাশে তার জায়গা হবে। একদিন নিজের খরচ নিজে চালাতে পারবে না…এসব।
ওই নারী সারা জীবন এগুলা শুনেছেন। তার ছেলে ছিল না। কিন্তু মেয়েকে তিনি শিক্ষায় করে তুলেছিলেন ঈর্ষণীয়। সে মেয়ের মাসিক ইনকাম যখন দেড় লাখের কাছাকাছি, তখন তিনি একদিন ডিভোর্স পেপার এনে স্বামীর সামনে রাখলেন।
স্বামীকে বললেন ‘নাও। সারাজীবন আজকের দিনটার জন্য অপেক্ষা করেছি আমি। আজ আমার দিন। আমার মেয়ে আমার পায়ের কাছে এনে প্রতি মাসে দেড় লাখ টাকা রাখে। আমার অর্থনৈতিক অক্ষমতাকে পুঁজি করে যা ইচ্ছা করেছো সারাজীবন। মুখ বুজে সহ্য করেছি, কাঁদতে কাঁদতে একসময় আমার চোখের পানি শুকিয়ে গিয়েছিল। তুমি সারা জীবন আমাকে মেরেছ। আজ আমি তোমাকে মারবো। ডিভোর্স দিলাম তোমাকে আমি’।
মাকে নিয়ে মেয়ে আজ আমেরিকাতে আছে। ফেসবুকে সে মায়ের হাসিমুখের ছবি বলে দেয় ডিভোর্সের কয়েক মাস পরেই স্বামীর মৃত্যুর খবরে সে এতোটুকু মন খারাপ করেননি।
মেয়েকে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করে গড়ে তুললেই বোধ হয় এতো ঈর্ষণীয় একটা প্রতিশোধ নেয়া যায়।