আত্মকেন্দ্রিক ও বিকৃত রুচির নষ্ট মানুষ আমরা

আসমা আক্তার সাথী: জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে থাকা সিলেটের মেয়ে খাদিজা বেগম নার্গিসকে নিয়ে কিছু লেখার অধিকারই হয়তো আমাদের নেইতব্ওু লিখে প্রাণটা জুড়ানোর চেষ্টা আরকি, এর বেশি ক্ষমতা নেই যে আর

আসলে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে না বলে বলা উচিত মৃত্যুর দুয়ারে আছে খাদিজা। পৌঁছে দিল কে? পাষণ্ড বদরুলকাদের সহায়তায়? আমাদের সহায়তায়আমরা যারা নীরব এবং অসভ্য দর্শকমোটর সাইকেলে করে বদমাশটি যখন পালিয়ে যাচ্ছিল, তখন তাকে ধরা গেল, তার আগে কি আঙ্গুল চুষছিলেন আপনারা? কই নাতো, আমরা তো তামাশা দেখছিলাম আর প্রমাণ সংগ্রহ করছিলামকারণ একজন মানুষের জীবন বাঁচানোর চেয়ে একজন ঘৃণ্য অপরাধীর ছবি তুলে রাখা কি বেশী জরুরি? নইলে লোকে কেমন করে চিনবে তাকে? খাঁটি কথা

khadiza-4কারণ মানুষের জীবনের কোন দামই যে আর নেই এখনএকদলা থুতু দিলাম তোদের গায়ে, যারা খাদিজাকে বাঁচাতে না এসে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ছবি তুলেছিসকতটা আত্মকেন্দ্রিক আর বিকৃত রুচির মানুষ হলে এমনটা করা যায়! দুটি হাত, দুটি পা সৃষ্টিকর্তা তাদেরকে কেন দিয়েছে, বুঝতে পারছি না

আহা দর্শকদেরকে কেন গাল দিচ্ছি, গালাগাল তো পাওনা বদরুলেরআমি এমন বেহিসাবি হলাম কবে? মানুষরুপী জানোয়ারদের পদচারণায় মুখরিত আজ আমাদের সমাজ, আমি কি বেহিসাবি না হয়ে পারি? শুধু বেহিসাবি না, আমি আজ বড় বেসামালওকনিকা, রিশা ও নিতু মণ্ডলের পর খাদিজার ওপর একই ধরনের হামলায় আমি বড় বেসামাল হয়ে পড়েছি

তাই আজ যা খুশি তাই লিখবএর কোন দায় আমার নেইএর দায় রাষ্ট্রের, এর দায় সমাজের, এর দায় কোন কোন মায়ের

বদরুলরা তো রক্ত মাংসের নেশায় রক্তখেকো পাগল হয়ে গেছে, তাইতো রিশা, খাদিজারা এভাবে রক্তাক্ত হয়ে মৃত্যু যন্ত্রণায় ছটফট করতে করতে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছেআচ্ছা এদের খতম করার কোন কায়দা কি নেই? কি আছে একটি মেয়ের শরীরে?

রক্ত-মাংস এইতো! মাংস না বলে বরং বলি উঁচু উঁচু নরম নরম মাংসযার জন্য আমাদের সমাজের পথে-ঘাটে লালায়িত জন্তুগুলো ওৎ পেতে থাকে আমার বোন বা আমার সন্তানের জন্যআমি শুনেছি একজন মা তার সন্তানের সব ধরনের রূপ সব সময়ই চিনতে পারেএমনকি সন্তানের মুখ দেখে বলে দিতে পারে সে কী করতে যাচ্ছে

এ সমাজের মায়েরা এতো আলাভোলা এতো বেকুব তো নয়নিজের বখে যাওয়া নষ্ট সন্তানদের কেন চিনতে পারছেন না তারা? কেন বখে যাওয়া সন্তানকে আগে থেকেই আইনের হাতে তুলে দিচ্ছেন না মা? আপনাদের মত অসচেতন মায়েদের কারণে কী নির্মমভাবেই না কতো শত মায়েদের বুক খালি হয়ে যাচ্ছে

অথচ ইতিহাস বলে ১৯৭১ সালে এই জননীরাই বাঁচিয়েছে আমাদের জন্মভূমি মাকেনিজের সন্তানকে নির্দ্বিধায় উৎসর্গ করেছেন দেশের জন্য, দেশের মানুষের জন্যসাহসী ভূমিকা পালন করেছেনপাকবাহিনীর হাতে ঘরের জোয়ান ছেলেকে তুলে দিয়ে লুকিয়ে রেখেছে সোমত্ত মেয়েকেশুধু নিজের মেয়েই নয়, পাড়া-প্রতিবেশীর মেয়েদেরকেও

sathi-2
আসমা আক্তার সাথী

শহীদ জননী জাহানারা ইমাম, শহীদ আজাদের মায়েরা জীবনে যে ত্যাগ স্বীকার করেছেন, সেই পথে আবার যে হাঁটতে হবে মা। নইলে সব খাদিজারা হারিয়ে যাবে যে। মায়েরা, দয়া করে একটু জেগে উঠুন। নইলে আপনার সন্তানতো যাবে যাবেই, সাথে যাবে আমাদের বোনেরা, কন্যারা। শৈশব থেকে সন্তানের মধ্যে সাহায্য করার মানসিকতা, অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের মানসিকতা গড়ে তুলুন। বখে যাওয়া সন্তানকে সেরে তুলুন পরম মমতায়।

এদেশে সবই সম্ভববদরুল ছাত্রলীগ নেতাকিন্তু এখন কেন্দ্র থেকে বলা হচ্ছে বদরুলের পদ অনেক আগেই বাতিল হয়ে গেছেবদরুল ছাত্রলীগ না ছাত্রদল না ছাত্র শিবির সেটা মুখ্য নয়এখন মুখ্য বিষয় একটাই, খাদিজার জীবন সংকটমুক্ত হবে কী হবে না জানিনা, জানি শুধু বদরুলের ফাঁসিতাও ২৪ ঘন্টার মধ্যেগণপিটুনিতে মারা গেলে খাদিজা শুনে যেতে পারতো, বদমায়েশ, লুচ্চা, বদরুলের নিহত হবার কথামনে শান্তি পেত মেয়েটা

লাইফ সাপোর্টে থাকা আমার বোন খাদিজার বেঁচে থাকার  সম্ভাবনা মাত্র ৫ শতাংশখাদিজা আমাদের মাঝে ফিরে আসুক এটা আমি শতভাগ চাইযদি ফিরে না আসে তবে তার বেঁচে থাকা সময়টুকুর মধ্যে নরপিশাচকে ঝুলিয়ে দেয়ার জোর দাবী জানাচ্ছিরিশা যেটা দেখে যেতে পারেনি, খাদিজা সেটা দেখুকএরপর খাদিজা যদি অলৌকিকভাবে আমাদের মাঝে ফিরে আসে, তবে যেন সে বদরুলমুক্ত একটি সমাজ পায়

লেখক: সাংবাদিক ও শিক্ষক

শেয়ার করুন: