জীবনের টুকরো গল্প- ৩

সাকিনা হুদা: অবশেষে কুসুমের লাশ পাওয়া গেল। পচা ডোবার মধ্যে লুকোনো ছিল। কী খোঁজাটাই না খুঁজলো গ্রামবাসী। সেইসাথে পুলিশও।

পরনে নীল ডোরাকাটা শাড়ি, কাদাময়। মুখখানাকে কেউ যেন বিকৃত করে দিয়েছে। তবুও চেনা যাচ্ছে। মুখের গড়ন আর পরনে নীল শাড়ি। হতভাগ্য মা বাপ সনাক্ত করেছে। এ আর কেউ নয়, তাদেরি কুসুম। কুসুমের মৃত্যু তাদের কাছে বিস্ময়ের নয়, গ্রামবাসীর কাছেও।

child-abuse-2স্বামী পরিত্যক্ত কুসুম, রোজ যেত কারখানায় খুব সকালে। পোশাকশ্রমিক তার পরিচয়। ফিরত রাত আটটা নয়টায়। একা পথ চলত। অনেকেরই কুৎসিত মন্তব্য কুৎসিত দৃষ্টি এড়িয়ে চলত। এই ছিল তার অপরাধ। তাই তাকে জীবন দিতে হল। ওর মূল্যহীন জীবনের কোন পোষ্টমর্টেম হল কী না জানা গেল না। কে খুন করলো, তাও নয়।

ওর বৃদ্ধ অশিক্ষিত দরিদ্র পিতামাতা ছাড়া আপনজন বলতে কেউ নেই। আছে শুধু ফুলের মত বারো বছরের মেয়ে পুষ্প। কুসুম স্বামী পরিত্যক্ত একটি নারী মাত্র। ওর কোন মূল্যবান পরিচয় নেই।

পুষ্প এসে দাঁড়ায় পুকুর পাড়ে। একটু দূরে ওই যে ডোবাটা। পচা ডালপালা ময়লায় ঢাকা। চতুর্দিকে দূর্গন্ধ। ওখানেই ওর মায়ের লাশটা পাওয়া গেছে। কী যেন ভাবে পুষ্প। উদাস দৃষ্টি। হয়তো ভাবে, এভাবেই তার লাশও পাওয়া যাবে একদিন ওই পচা ডোবাটার মধ্যে। হয়তো সেও একদিন মায়ের মতই হারিয়ে যাবে এ্ই পৃথিবী থেকে।

শেয়ার করুন:
Copy Protected by Chetan's WP-Copyprotect.