সাগুফতা শারমীন তানিয়া: তরুণ এক লেখক ‘মাস্টারবেশন, অর্গাজম এবং নারীর শরীর’ শীর্ষক একটি লেখায় ‘বিশ্ব অর্গাজম দিবস’ এর বাংলা করেছেন ‘বিশ্ব রেতঃপাত দিবস’।
রেতঃ অর্থ যদ্দুর জানি শুক্র, পুরুষদেহের সন্তানোৎপাদনক্ষম বীর্য, যা দিয়ে মুনি-ঋষিদের কালে এমনকি নদীকেও গর্ভবতী করে তোলা যেত। এক্ষেত্রে তাহলে বিশ্ব অর্গাজম দিবসের নাম হয়ে গেল ‘বিশ্ব বীর্যস্খলন দিবস’ এবং লেখকের বাকি লেখাটুকু অবতারণার অবকাশ রইলো না।
আমি ধরে নিচ্ছি, এই ভুলটুকু নিবার্য হলেও অনিচ্ছাকৃত। অনেককাল আগে ‘দেশ’এ জন্মনিরোধকের অ্যাড এ অর্গাজমের একটা বাংলা দেখেছিলাম ‘বানভাসি’, সেটা কাব্যিক বটে, তাতে এক্তিয়ার আলাদা করে দেয়া নেই (আলাদা না করবারই কথা, এ তো ‘গোঁফের আমি, গোঁফের তুমি’র মতো ‘দেহের আমি, দেহের তুমি’ নয়)। অর্গাজমের একটি বাংলা করেছিলেন তসলিমা নাসরিন, ‘শীর্ষসুখ’, শুনে আমার মনে হয়েছিল পৌরুষের সকল ধ্বজা অতিক্রম করে লিঙ্গনির্বিশেষে এর নাম আসলে হতে পারে ‘সুখশীর্ষ’।
আমাদের এক বিবাহিত বন্ধু অর্গাজমের বর্ণনা জানতে চেয়েছিল বিষন্ন মুখে, আমরা ওকে প্লেনের ‘টেক-অফ’এর মুহূর্ত বোঝানো ছাড়া আর কিছুই করতে পারিনি। আরেক আপা বিবাহপরবর্তী অভিজ্ঞতার আলোকে বলেছিল, মেয়েদের কিছু হয় না, একটা খালি নলের মতো জায়গা তো, ছেলেদেরই শুধু হয়… আমরা অবাক হয়ে তাকে জিজ্ঞেস করতাম, “তাহলে বুঝবি কী করে কখন তোর শেষ হলো?” (জ্যাকসন পলোককে যেমন লোকে জিজ্ঞেস করতো, বুঝবে কী করে কখন তোমার ছবি শেষ হলো?)।
বাংলায় এই ‘অর্গাজম’ শব্দটির প্রতিশব্দ রীতিমতো খুঁজতে হচ্ছে- তার মানে কি আমাদের ব্যক্তিগত জীবনে জাতীয়ভাবে এই বস্তু অনুপস্থিত? আশা করি তা নয়। হয়তো ‘সুখশীর্ষ’কে স্বীকার করে নিতে আমাদের প্রাণের বাধা নেই, যতটা আছে মুখের বাধা। হয়তো!
লেখাটিতে মাস্টারবেশনের প্রসঙ্গ এসেছে, স্বমেহন- আত্মরতি- হস্তমৈথুন যাই ডাকা হোক না কেন, বিষয়টি পুরুষের চর্চ্চা হিসেবে অনেককাল ধরেই ধরা হয়, ঋষি অরবিন্দের ভাইয়েরাও দিনে শারীরিক উদ্যমচর্চা করে রাতে বীর্যক্ষয়ের অপরাধকে ভুলে থাকবার চেষ্টার কথা আত্মজীবনীতে উল্লেখ করেছেন, অনায়াসে। একজন নারী পারবেন সে কথা লিখতে? সম্মানিতা- পূজনীয়া- স্বনামধন্যা একজন বাঙালি নারী পারবেন তাঁর আত্মকথায় এ’রকম স্বীকৃতি দিতে? আত্মরতি দূরে থাক, প্রিয়পুরুষকে দেখে বা ভেবে তাঁর শারীরিকভাবে জেগে উঠবার কথা লিখতে পারবেন?
লিখতে পারবেন ঠিকই, কিন্তু তারপর সেই সম্মান- সেই পূজা সেই ধন্য নাম আর স্বস্থানে থাকবে না। অথচ নারীর শরীরও ভীষণভাবে একটি শরীর। তার জেগে ওঠা আছে, তার বুঁজে যাওয়া আছে, তার স্খলন আছে। পুরুষের অবদান ঐ অতটুকু শুক্লতরলকে বাদ দিয়ে তার আর কোনো অমুখাপেক্ষী রতিতৃষ্ণা নেই?
লিলিথের নাম শুনলেই একদা আমরা চোখে-চোখে হাসতাম, বেচারী মেয়েটি সুখশীর্ষ চেয়েছিলেন বলে, আদমশয়ানের ওপর সুখের সৌধশীর্ষ রচনা করতে চেয়েছিলেন বলে আদম আর ঈশ্বর মিলে ওঁকে কী হেনস্থাটাই না করলেন। আদিমাতা হিসেবে তাঁর পরিচিতি রইলো না। রইলো না স্বর্গোদ্যানের অধিকার।
নারীর যৌনসুখ প্রসঙ্গে নিখিল-ভারত শুধু নয়, বিশ্ব-নিখিল এক। কেউ তার যৌনাঙ্গ পুঁচিয়ে কেটে ঠুঁটো করে রেখে ভাবে- লিলিথের ওপর শোধ নেয়া গেল, ভাগ্যিস যৌনতায় মস্তিষ্কের বিশাল ভূমিকার কথা এরা ঠিকমতো জানে না, তাহলে মাথাও কেটে নিতে পারতো (পারিবারিক/সামাজিক সম্মান ধরে টান দিলে তাকে ‘অনার কিলিং’এর নাম ধরে অবশ্য কতল করা যায়।)। কেউ তাকে যৌনাঙ্গে লোহার বর্ম পরিয়ে যুদ্ধে গেছে এই ভেবে যে খুব জোর বাঁচা গেল। কেউ তার অসামান্য যৌনাবেদনকে রাজায়-রাজায় কলহ বাঁধবার ক্যাটালিস্ট হিসেবে সন্দেহ করে বিধান দিয়েছে নগর-গণিকা কিংবা রুদ্রগণিকা হবার, সে সবাকার।
হায় নারী শরীর, শরীরের মালিকানা পেতে মনুর বিধান থেকে শুরু করে কত না পথ পাড়ি দিতে হয়েছে তাকে- কত ক্রুসেডে যৌনসামগ্রী হিসেবে ব্যবহৃত হতে হয়েছে, আজো সে যাত্রা ফুরালো না। স্বামীর মৃত্যুর সাথে সাথে তার যৌনজীবনকে গুঁড়িয়ে দেবার জন্য পেঁয়াজ-রসুন- মুগ না মুশুরডাল ইত্যাদি কী কী খেলে শরীর গরম হতে পারে তা নিয়ে বাঙালি যত মাথা ঘামিয়েছে তত অশালীনতা আর কোনো জাত সেকালে দেখিয়েছে কিনা আমার সন্দেহ আছে।
শিশু কন্যাকে (আট বছরের সহমৃতাও আছে) চিতায় সহমরণে চড়িয়েছে, মেয়েশিশুকে বৈধব্যের ওজর তুলে আমৃত্যু আমিষের অধিকার থেকে বঞ্চিত করেছে। শরীর যেন উত্তপ্ত না হয়, কেননা শরীরের মালিকের শরীর জুড়িয়েছে- তিনি স্বর্গে গেছেন, শরীরের ঠিকাদার সমাজ শতচক্ষু হয়ে পাহারায় আছে।
ইংরেজরা যখন এসেছে তখন এতদঞ্চল সতীদাহের ধোঁয়ায় সমাচ্ছন্ন, শত শত নারী আহুতি দিচ্ছে বা দিতে বাধ্য হচ্ছে বা তাকে দিতে বাধ্য করা হচ্ছে জ্বলন্ত চিতায়। প্রায়ই এমন এক পুরুষের জন্য, বিবাহিত স্বামী হলেও যাকে সে জীবনে দেখেছে হয়তো দু’বার বা একবার। যে তাকে সঙ্গমের সুখ দেয়নি, সন্তানধারণের অভিনবত্ব দেয়নি তার নারীত্বকে, অধিকার দেয়নি পাশে থাকবার- ‘সংকটে-সম্পদে-কঠিনব্রতে সহায় হতে’, সেই পুরুষের প্রয়াণে তার জীব হিসেবে সর্বপ্রথম মৌলিক অধিকার (প্রাণের অধিকার) খোয়াতে হবে। সে মরলে জ্ঞাতিদের লাভ, তারা সম্পদের পরিপূর্ণ অধিকার পাবে। সে মরলে সমাজের লাভ, গণিকালয়ে ভিড় বাড়িয়ে সে সমাজকে হেঁটমস্তক করতে পারবে না।
কুলোকে বলে, নারীরা যেন স্বামীহন্তা না হতে চেষ্টা করে সেই ভয়ে এই সতীদাহ প্রথা নানা দেশে চালু ছিল, যা হোক! জহরব্রতের গুণগান গেয়ে রচিত হচ্ছে পালা- গাঁথা। মহাভারত ঘেঁটে মাদ্রীকে পাওয়া যাচ্ছে সহমৃতা হয়েছিলেন স্বামীর। এদিকে রাজা রামমোহন রায় হেঁকে বলছেন, মাদ্রীর মতো সহমরণে দিতে চাও দাও, মাদ্রীর মতো তাহলে স্বেচ্ছায় দেবপুরুষ আহ্বান করে দেবসঙ্গমে পুত্রলাভের অধিকারটিও দাও। এইসব বলে-কয়ে লাভ হচ্ছে না, রামমোহনকে জোব্বার নীচে কিরিচ নিয়ে ঘুরতে হচ্ছে আত্মরক্ষার জন্য। বিদ্যাসাগর আবার সেই বিধবার বিবাহের অধিকারের কথা বলেছেন, নদীয়ার তাঁতীরা ওঁর নাম করে শাড়ির পাড় বুনেছে ‘বেঁচে থাকুক বিদ্যাসাগর চিরজীবী হয়ে’ ইত্যাদি, জীবনভর যে অসম্মান এবং নিগ্রহ তাঁকে সইতে হয়েছে তা তুলনারহিত।
যে নারীশিশু বাল্যবিবাহের কারণে শৈশবের শুরুতেই বিধবার জীবন কাটাতে বাধ্য হলো, খাদ্যের অধিকার- পরিধেয়ের অধিকার- সামাজিক অনুষ্ঠান ও উৎসবের অধিকার- শারীরিক সুখভোগ এবং সন্তানধারণের অধিকার থেকে বঞ্চিত হলো, সে যেন জীবদ্দশায় একটি সম্পূর্ণ জীবন কাটাতে পারে সেই চেষ্টায় বিদ্যাসাগর জীবন উৎসর্গ করলেন। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের উপন্যাসের একটি নায়ক প্রশ্ন করেছিল, ঠাকুর রামকৃষ্ণ সর্বজনপূজ্যতে, ঘরে ঘরে তাঁর ছবি, অথচ নারীকে বাঁচবার এবং পুনরপি সংসার গড়বার অধিকার যিনি দিলেন সেই বিদ্যাসাগরের ছবি কোথায়? অন্ততঃ মেয়েদের তো তাঁকে স্মরণ করবার কথা।
ভাবছেন, বাল্যবিবাহ- সতীদাহ এইসব তো কবেকার কথা, বেন্টিঙ্কের আইনের পরে তো সেইসব মাথাব্যথা গেছে, এখন এ নিয়ে ফেনানোর কি আছে। সত্যি বলছেন? সতীকে জ্বলন্ত চিতায় স্বামীকে আলিঙ্গন করে জীবন্ত পুড়তে হয় না, তৈলভাণ্ড মাথায় করে অনুমরণে যেতে হয় না, ছাই ওড়ে না, তবে বিধবার কাছে আমৃত্যু বৈধব্য আশা করা হয় এখনো। সন্তানকে সঙ্গী হিসেবে দেখিয়ে ব্যবস্থাপত্র করে দেয় সমাজ- ওকে নিয়ে জীবন কাটাও। সন্তান যে সঙ্গমের সঙ্গী নয়, বিধবার শরীরও যে নারীশরীর- তার চাহিদা আছে, তা বিধবা নিজে বলেন না। সমাজও ধরে নেয় তার শরীর নেই, সে অশরীরি। এই সমাজই পরিত্রাহি চিৎকার শুরু করে পুরুষ বিপত্নীক হওয়ামাত্র, পরিজনরা আভাসে বা সরাসরি শারীরিক কামনাবাসনার কথা বলতে দ্বিধা করেন না।
আর, বাকি রইলো বাল্যবিবাহ, সেটা গ্রামে গ্রামে এখনো নেই? মেয়ের বাপকে জমি লিখে দিয়ে শিশু কন্যাকে প্রৌঢ় শিক্ষকের বিয়ে করবার খবর তো এই সেদিনও পড়লাম। ‘কচি পেয়ারা’-‘কাঁচা ডাব’ ইত্যাদি প্রসঙ্গ তুলে শহরের মেয়েদেরও যে বয়সে বিয়ে দিয়ে ফেলবার চেষ্টা করা হয়, সেটাকে বাল্যবিবাহ বলা চলে। বাল্যবিবাহ রদ করবার জন্যে সেইসব নমস্য মানুষকে কী না সইতে হয়েছে। জ্যৈষ্ঠমাসের চৌদ্দ তারিখই আম পাকে কি না (তেঁতুল-হুজুর তখনো ছিল!) সেই অশ্লীল প্রশ্ন করতে পিছপা হয়নি এমনকি বিদ্যোৎসাহী সমাজও। মন্দিরে-মন্দিরে এই মহাপাপ থেকে ত্রাণ চাওয়ার জন্য কাতারে কাতারে মানুষ সমবেত হয়েছে। কিশোরীর পুষ্পদলনের সে কী আকুতি মনেপ্রাণে যযাতি একটি সমাজের!
আমাদের এই মেয়েশিশু বা কিশোরীপ্রীতির মূলে আসলে কি আছে? যার শরীর যৌনতার জন্য প্রস্তুত নয়, যার মন কাঁচা বয়েসের লাবণ্যে জ্যোতির্ময়- তাকেই কেন বারবার যৌনসংসর্গের জন্যে ভাবা হয়, তাকে নিয়েই কেন উপন্যাসে-নাটকে এত উদ্বোধন আমি ভেবে পাই না। হুদো হুদো সব নায়ক চলচ্চিত্রে আধো আধো সব কিশোরী-সদৃশ মেয়েদের আঁচল ধরে টানছে আর চটকাচ্ছে, মেয়েটা অনুনয় করছে- লজ্জায় মুখ ঢাকছে কিংবা বালিকাবধূ আঙুল কামড়াচ্ছে- এইই তবে আমাদের যৌনবাসনার চিত্র?
বেহেশতের হুর হচ্ছে ‘লামইয়াতমিছহুন্না’, কোনো জ্বিন অথবা মানুষ তার সতীচ্ছদ ছিন্ন করেনি। অর্থাৎ চিরকিশোরী-উদ্ভিন্নযৌবনা-অক্ষতযোনি কুমারীর প্রশ্নে আরবরাও এক। শুধু আরব কেন, আরবদের শত্রু ইহুদিরাও এক, এসিরীয়-আক্কাদিয়-সুমেরীয় এক, একটু আগেই বললাম, বিশ্বনিখিল এক। পৌরুষ কি পূর্নবয়স্ক নারীর যৌনক্ষমতাকে ডরায়? কিংবা পুরুষতান্ত্রিক সমাজ কি যৌনতার শিক্ষা একপাক্ষিক করে রাখবার জন্য এবং নারীর যৌনতার জ্ঞান সীমিত করে রাখবার জন্যই দ্রুত কিশোরীকে বেছে নেয়?

যৌনতা বিষয়ে নারীর জ্ঞান যত বাড়বে, তার আরোপিত লজ্জার বোঝা তত কমবে, ততই সে শরীরের অধিকার নিয়ে সোচ্চার হবে, ‘প্রজননক্ষমতা’- ‘শারীরিক অক্ষমতা’- ‘যৌনতার প্রশ্নে তাকে বহুগামী পুরুষের প্রতি একগামী করে রাখার ষড়যন্ত্র’- ‘সন্তানধারণে তার সংকল্প’-‘যৌনরোগ ও তার সংক্রমণ’ বিষয়ে অকুন্ঠ আলাপ করতে পিছপা হবে না। ধর্ম এবং সমাজপিঞ্জর পুরুষের পক্ষে, কারণ পুরুষই সেগুলিকে নারীর বিরুদ্ধে ব্যবহারিক প্রয়োগের জন্য প্রস্তুত করেছে বহুবছরের সাধনায়। নারীশরীরে আরোপিত লজ্জা এবং সংস্কারের বাধা যত অবলুপ্ত হবে, তত রাষ্ট্রীয় এবং আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে গণধর্ষণ যুদ্ধাস্ত্র হিসেবে ভোঁতা হতে থাকবে। শারীরিক ক্লেশ এবং ক্ষতি ছাড়া ধর্ষণ একটি সর্বধ্বংসী অস্ত্র হিসেবে পরিগণিত হবে না। ভয় যে অধিকার তৈরি করে- সেই অধিকারগুলি রদ হয়ে যাবে নারীশরীর এবং নারীমানসে।
এখনো একজন পিতা কিংবা স্বামী স্বীয় সংসারে যে ভয় এবং মুখাপেক্ষিতার বাতাবরণ তৈরি করে রাখেন, তার তুলনা আমি জীবজগতে আর কোথাও পাই না। আমাদের সংসার মিথোজীবিতার উদাহরণ হয়ে থাকে না, রাষ্ট্রের একটি অনু-অঙ্গরাজ্য হিসেবে গড়ে ওঠে যেখানে একটিমাত্র রাজা এবং বাকিরা সবাই প্রজা। একতা কাপুরের সিরিয়ালের কল্যাণে এই মর্ষকামী কিশোরীদের ভালবাসা- এই ধর্ষকামী পুরুষদের পৌরুষের জয়জয়কার- এই বিচারবোধগ্রাসী তুচ্ছ আচারের মরুবালুরাশি সব ফিরেই তো আসছে, এসেছে। মেয়েদের কাছে চিত্তাকর্ষক করে তুলে ধরা হচ্ছে যূগান্তরের সব উপবাসপ্রথা, তার জীবন-যৌবনের একমাত্র লক্ষ্য হচ্ছে অমুক পরিবারকে বাঁচানো বা তমুক পরিবারের মান-সম্মানরক্ষা।
এবারের শারদীয়া আনন্দবাজার পত্রিকা ১৪২৩ এ ‘উন্নয়নও বলতে পারেন, পৌরুষও’ এ অনির্বাণ চট্টোপাধ্যায় দেখাতে চেষ্টা করেছেন যে নরেন্দ্র মোদীর মূল আকর্ষণ তাঁর গোধরায় রক্তরঞ্জিত হিন্দুত্ববাদের হাত নয়, তাঁর ছাপ্পান্ন ইঞ্চির ছাতিওয়ালা পৌরুষ। এভাবে তিনি টেনে এনেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্পের পৌরুষকেও এবং লিখছেন, মেয়েরা ক্রমশই পৌরুষ এবং পুরুষের প্রভুত্ব/আধিপত্যকে চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছে বলে অর্থনীতিতে এবং সমাজে নারীর কাছে ক্রমশ পিছিয়ে পড়া পুরুষ-মানসের কাছে ট্রাম্প অনিবার্য মুশকিল-আসান হিসেবে ধরা দিচ্ছেন।
পৌরুষের এমনি আকর্ষণ যা ভ্রুণহন্তা-শিশুহন্তার রক্তাক্ত হাতকে ছাপিয়ে তাঁর ছাতির মাপ নিয়ে ব্যস্ত করে তোলে জনসমষ্টিকে! এমনি আকর্ষণ যা বিশ্বপরিচালনার (আমেরিকা বলে কথা, ওরাই যে মাথা এ’কথা এলিয়েনরা অব্দি জানে, তাই মহাজাগতিকদের সকল ষড়যন্ত্র আমেরিকার বিরুদ্ধে) ভার সঁপে দিতে চাইতে পারে ট্রাম্পের মতো একটি অকল্পনীয়রকমের অমানবিক-অসংস্কৃত মানুষকে! এত তৎপরতার পরও রাজনীতিতে মোদীর ‘ভিশন’এর অভাবকে স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছেন অনেকে, সেটা অনির্বাণ চট্টোপাধ্যায় লিখেছেন।

ট্রাম্পের বেলায় প্রেসিডেন্ট ওবামা বলে ফেলেছেন, তাঁর পূর্ববর্তী বা সমসাময়িক লড়িয়েদের সাথে তিনি লড়েছেন সত্যি, কিন্তু মনে মনে তিনি জানতেন এঁরা দেশপরিচালনায় অদক্ষ নন- এ’কথা নিঃসংশয়ভাবে ট্রাম্পের বেলা তিনি কিছুতেই বলতে পারছেন না, অদক্ষ নয়- ট্রাম্প এই পদে মানসিকভাবেই সম্পূর্ণ অচল। গণমানুষের হৃদয়ে ট্রাম্পের এই ‘বিপুল পৌরুষ’এর অনুরণন কোন মাত্রায়- তা জানতে নিউইয়র্কে- লস এঞ্জেলসে- সিয়াটলে- ওহায়োতে দাঁড় করিয়ে রাখা ট্রাম্পের অন্ডকোষহীন নগ্ন মূর্তিটি যথেষ্ট। পৌরুষের মূল সুর অনির্বাণ লিখেছেন, ‘আমি জানি, তুমি জানো না’।
সত্যি কথা। এও সত্যি যে, ‘তুমি জানো না’ ভাবতে জানা মানুষ আর ‘আমি জানি’ থাকে না। বাইরের পৌরুষ দিয়ে ভেতরে বীরত্বের অভাবকে ঢাকা যায় না, ভূলুন্ঠিতকে তুলবার- আর্তকে ত্রাণের- অসম্মানিতকে শ্রদ্ধা জ্ঞাপনের যে পৌরুষ/নারীত্ব/বীরত্ব- সেটা কেবল ছাতির মাপ দেখিয়ে অর্জন করা যায় না, বিষয়টা অন্তরের।
নারী বা পুরুষে যা-কিছুকে আমরা পৌরুষ বা নারীত্ব হিসেবে চিহ্নিত করি, তার আনবিক পরিচয় একই। তার মূল সুর দয়া, তার প্রাণভোমরার নাম মানবিকতা। নারী তার নিজের প্রতি, বাকি পৃথিবীর প্রতি মানবিক হোক। বাকি পৃথিবী নিজেদের প্রতি এবং নারীর প্রতি মানবিক হোক। বড় বেশি নির্যাতিত হচ্ছে মানুষ।
Brave writing, not only as far the topic is concerned, but also in terms of style, incorporating so many historic references! But alas, Bengali women are not in a level to grasp its inner meanings. My other comment is, it is written in a manner that is apprehensible to a certain group of audience; if you would like to pass the message to a wider audience, you need to use easy Bangla.
Your buet friend
“আরেক আপা বিবাহপরবর্তী অভিজ্ঞতার আলোকে বলেছিল, মেয়েদের কিছু হয় না, একটা খালি নলের মতো জায়গা তো, ছেলেদেরই শুধু হয়…”
কথাটি মোটেও ঠিক না, বরঞ্চ উল্টো ৷
টিচার: আচ্ছা বল তো যৌনসঙ্গমের কে বেশি আনন্দ উপভোগ করে? পুরুষ না মহিলা…?
ছাত্র: নিঃসন্দেহে মহিলারা…
টিচার: কী করে বুঝলে?
ছাত্র: স্যার, কাঠি দিয়ে যখন কান চুলকান, তখন আরামটা কোথায় লাগে? কাঠিতে না কানে…?
এত পেচাঁল পেড়ে লাভ কি?
নারি আর আনাড়ি, বোঝা দরকার,
সুখপাঠ্য
লেখাটি অনবদ্য। তবে শব্দ ও বাক্য চয়নের কাঠিন্য লেখাটির সার্বজনিন বোধগম্যতাকে স্লথ করে, বলে আমার কাছে মনে হয়েছে। এ কথাটি আমি সাধারণ পাঠকদের যারা সহজে দ্রুত পঠনে অভ্যস্থ, কিন্তু কাঠিন্যে হোচট খেয়ে পাঠেবিরত হন কিংবা এড়িয়ে যান! এই লেখার মূল প্রতিপাদ্য প্রথমত: নারী পাঠকদের মর্মমূলে গ্রথিত হবার প্রয়োজন দাবি করে, পাশাপাশি সমাজ সংস্কারক পুরুষদের চেতনাতে টোকা দেবারও প্রয়োজন ঘোষনা করে। আমি নিজে লেখাটি ৩ বার পড়েও আত্মস্থকরণে তৃপ্ত হইনি এর কাঠিন্যতায়। লেখকের প্রতি আমার পূর্ণ শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা রেখেই তাকে এমন চমৎকার বিষয় ভিত্তিক লেখার ক্ষেত্রে আরেকটু সহজ ভাষা প্রয়োগের আবদার রাখছি এবং জানাচ্ছি অসংখ্য ধন্যবাদ।
গোলাম কবির
লন্ডন ৬ সেপ্টেম্বর ২০১৬
কোষ্ট -কাঠিন্য হবে না ত
জরুরি লেখা। সুলিখিত লেখা। সুন্দর লেখা। লেখককে অভিনন্দন।
খুব জরুরি লেখা, সাগুফতা। অভিনন্দন…………..
biology বই তে পড়েছিলাম – oargasm এর বাংলা “রাগ-মোচন”
খুব কঠিন কঠিন কথা। আসল জিনিস্তা কি তা আমার মত নারী দেহের বিষয়ে এত অল্প জানা পুরুষের কাছে কঠিন হবার কথা বৈকি। তা ছাড়া আমার ব্যাকরণে এত জ্ঞানই বা কোথায় যে এত কঠিন বাংলা বাক্যের অর্থ জানতে পারে! তাই কেউ আর সহজ করে বুঝিয়ে দিতে পারলে জানার খুব ইচ্ছে আছে।