কন্যা মৃত্যুর শোক মশাল হয়ে জ্বলুক বিক্ষোভ মিছিলে…..

মলি জেনান: মাথা তোলো, রুখে দাঁড়াও, পথে নামো, নাহলে একে একে সবার কন্যা/বোন হয়ে যাবে তনু/আফসানা…..।মাত্র একমাস ষোল দিন হলো আমার কন্যা আমাকে ছেড়ে দূর আকাশের তারা হয়ে গেছে। প্রতিদিন, প্রতি মুহূর্ত সন্তান হারানোর বেদনা বুকে বয়ে বেড়াচ্ছি। কিন্তু আজ আফসানা নামের মেয়েটির নির্মম মৃত্যুর খবর আমার চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে গেল, আফসানার বাবা-মা এর কষ্টের কাছে আমার কষ্ট কিছুই না।

যে সন্তান মৃত্যুর আগে চরম বর্বরতা শিকার হয়েছে, পশুসম বর্বররা যাকে বেচেঁ থাকবার সুযোগAfsanaটুকুও দেয়নি, মৃত্যুর সময় যে তার আপনজনদের পাশে পায়নি, লাশ কাটা ঘরে যাবার আগে যে বাবা-মা এর স্নেহ স্পর্শ পায়নি তার বাবা-মা বাকি জীবনটা কী করে বেঁচে থাকবে? আমার কন্যা হারানোর পাহাড়সম যন্ত্রণাও কোনদিন তাদের যন্ত্রণাকে ছুঁতে পারবে না!

সবার এক্ষুণি পথে নামবার সময়।

খুনি, ধর্ষকে ভরে গেছে দেশটা; আজ আমার কন্যা বেঁচে থাকলে তার বেলায়ও যে এমনটি ঘটতো না, তা কে বলতে পারবে! আসুন সমস্ত বাবা-মা, ভাই-বোন এক্ষুণি পথে নামি। এই বিচারহীনতার সংস্কৃতি যদি এখনই রুখতে না পারি তাহলে যাদের ছেলে সন্তান আছে বলে নিশ্চিন্ত হয়ে আছেন, নিশ্চিত থাকুন তারাও একদিন খুনি/ধর্ষক হয়ে উঠবে আর আমাদের মেয়েগুলো সব ধর্ষিত ও খুন হয়ে যাবে।

কেউ জন্ম থেকেই বাবা-মা হয়ে উঠে না। একটি সন্তান জন্মের সাথে সাথে বাবা-মা এরও জন্ম হয়, সন্তানকে লালন-পালন করতে গিয়ে বাবা-মা শিখতে থাকেন কেন সন্তান কাঁদে, কেন হাসে, কখন তার কী প্রয়োজন!

গর্ভধারণ থেকে হাঁটাচলা পর্যন্ত প্রতিটা পদক্ষেপে বাবা-মা শিখতে শিখতে বাবা-মা হয়ে উঠেন। সেই বাবা-মা কখনোই তার সন্তানদের এমন পরিণতি চান না।

এমন করুণ পরিণতি আরো দুর্বিষহ হয়ে উঠে যখন খুনি/ধর্ষক বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়ায়। আর আমাদের রাষ্ট্র ও সমাজ ব্যবস্থা এসব ধর্ষক/খুনিদের বিচারের আওতায় না এনে পক্ষান্তরে তাদের উৎসাহিত করে। আর তা করছে বলেই ভিকটিম বিচার চেয়েও দ্বিতীয়বার ধর্ষিত হচ্ছে, সাথে সাথে ধর্ষিত হচ্ছে আমাদের বিবেক ও মানবতাবোধ।

ঠিক এ মূহুর্তেই যদি পথে নামতে না পারি, সন্তানের মৃত্যুর শোক যদি বিক্ষোভ মিছিলের মশাল করে তুলতে না পারি, তাহলে কারও রেহাই নেই। আমার সন্তানের নিশ্চিত নিরাপদ জীবনের ব্যবস্থা আমাদেরই করতে হবে। এখনই সময় এই বিচারহীনতার সংস্কৃতিকে চ্যালেঞ্জ জানানোর। সকল কন্যা/মাতা/ ভগ্নিকে বিক্ষোভ মিছিলের মশাল হয়ে জ্বলতে হবে। রাষ্ট্র যখন নির্বিকার হয়ে থাকে তখন নিজের নিরাপত্তার দায়িত্ব নিজেকেই নিতে হয়।

শেয়ার করুন: