রোকসানা ইয়াসমিন রেশনা: শুধু কি কন্যা দায়গ্রস্ত পিতার কন্যা বলেই অতিথি পাখি ও সোনালি ডানার কাক এসে শিকার করে নিয়ে যাবে তারে?
আমি কী দু:খবিলাসী? না হলে সবকিছুতে এতো মন খারাপ হবে কেন? কোথায় কোন মাছরাঙ্গাকে শিকার করছে অতিথি পাখি, কোন কাক সোনালী ডানা লাগিয়ে ধরে নিয়ে যাচ্ছে ময়ুরের মতো সুন্দর, কোকিলের মতো মধুরকন্ঠী কোনো পাখিকে, তা নিয়ে তো কেউ ভাবে না!
সেদিন খুব বড় মাপের একজন ব্যক্তিকে দেখি তার নিজের অবস্থা বোঝাতে কন্যা দায়গ্রস্ত পিতার সাথে তুলনা করেছেন। তাই তো, কন্যা। সে আসলেই যে পিতামাতার বড় দায়। আর সেই দায় মেটাতেই হয়তো তাকে ছুঁড়ে ফেলে বিদেশী তকমা বা সোনালী ডানাওয়ালা মানে টাকাওয়ালা কোনো শিকারির সামনে।
আমি হয়তো সত্যিই দু:খবিলাসী। আর দু:খবিলাসী বলেই আমার ভাবনায় সব অপ্রয়োজনীয় জিনিস চলে আসে। যেমন সেই ছাত্রজীবনে বান্ধবীর ৩৮ বছরের অশিক্ষিত ভাইয়ের সাথে শুধু বিদেশে থাকে বলে ১৯ বছর বয়সী শিক্ষিত গরীবের মেয়ের যখন বিয়ে হয়েছিল, মেয়েটা আমার কিছু হয় না জেনেও মন খারাপ হয়েছিল।
ভাবছিলাম, কন্যা, তোমার যোগ্যতা যদি গুনে না হয়ে রূপে হয়, তাহলেও তো তুমি ১০০তে ১০০ পাওয়ার মতো। সাথে গুন হিসেবে আছে তোমার লেখাপড়া। তাহলে তোমার এই পরিণতি কেন? কন্যা দায়গ্রস্ত গরীব পিতার কন্যা বলেই কি অতিথি পাখি এসে শিকার করে নিয়ে গেল তোমাকে?
সকল পেশা বা লেখাপড়ার প্রতি শ্রদ্ধা রাখার পরও ভাবনায় চলে আসে অতীত। চাকরি জীবনের প্রথমদিকের কথা, এক মেয়ের বাবা এসেছে অফিসে এক ছেলে বেতন কতো পায় তা জানার জন্য। কারণ এই ছেলের সাথে তার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংলিশে সম্মান পড়ুয়া মেয়ের বিয়ে দিবেন তিনি।
এদিকে ছেলে আমাকে আগেই অনুরোধ করে রেখেছে এই বলে যে মেয়ের বাড়ি থেকে খোঁজ নিতে আসবে। আপনি শুধু আমার বেতনটা দ্বিগুণ করে বলবেন, আর হেড অফিসেই বসি, এইটা বলবেন।
জানতে চাইলাম, লেখাপড়ার কথা কী বলবো?
ওরা জানে, আমি প্রকৌশলী।
ডিপ্লোমা তা জানে?
জানবে না কেন? প্রকৌশলী তো প্রকৌশলীই। ডিপ্লোমা হোক আর বিএসসি হোক।
মেয়ে জানে, এটা?
জানবে না কেন?
একটু অবাক হয়েছিলাম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংলিশে পড়া একটা মেয়ের কাছে ডিপ্লোমা আর বিএসসিতে কোন পার্থক্য নেই শুনে।
থাকবে কেন? সে যে কন্যা দায় গ্রস্ত পিতার কন্যা, সোনালী ডানার শিকারি তাকে শিকার করে নিয়ে যাবে এটাই তো স্বাভাবিক।
কিন্তু এই যে বিসিএস পাশ করা স্বাবলম্বী মেয়ে, তুমি কেন নিজেকে কোরিয়ায় ফোরম্যান হিসেবে দশ বছর ধরে চাকরি করা অশিক্ষিত ছেলেকে বিয়ে করলে? কোরিয়া বিদেশ বলে?
আর তুমিই বা কী শিক্ষা দিবে ছাত্রীদের? এতো কষ্ট করে লেখাপড়া করে, বিসিএস পাশ করে সেই তো বিয়ে করলে টেনেটুনে পাশ করা বিশাল বড়ো এক কোম্পানির ক্রয় ব্যবস্থাপককে। নিজের ব্যক্তিসত্ত্বাকে বিলিয়ে দিয়ে, যোগ্যতাকে তুচ্ছ করে, শুধুমাত্র আত্মবিশ্বাসের অভাবে সোনালী ডানার কাকের শিকার হলে কেন তুমি?
আসলে কন্যা দায়গ্রস্ত গরীব পিতা বলে কোনো কথা নেই, যতদিন কন্যারা নিজেদের যোগ্যতা নিজেরা না বুঝতে শিখবে, নিজেদেরকে সত্যিকার স্বাবলম্বী না ভাবতে পারবে, ততোদিন তারা শিকার হতেই থাকবে। তাই কন্যা, তোমাদের বলি, তোমরা মাথা উঁচু করে দাঁড়াও, নিজেদের যোগ্যতা নিজেরাই নির্ধারণ করো, তবেই না হয়ে উঠবে একজন সত্যিকার স্বাবলম্বী নারী।
অগাস্ট ১৫, ২০১৬
আমার তখন বছর পঁচিশেক বয়স। আমাদের পাড়ার মেয়ে শীলাদিকে দেখতে এসেছে শুনলাম। পরে আবার শুনলাম পছন্দ হয়নি।
আমি রোগা পটকা 5’5″,। শীলা দি আমার চেয়ে বছর চারেকের বড়। তার উচ্চতাও 5’5″ এর কম নয়। শ্যামলা কিন্তু উজ্জ্বল, টান টান। ভরাট শরীর – কিন্তু মেদাধিক্য নেই। নাক, মুখ, চোখ, সবই কেমন যেন কথা কয়, রক্তের প্রবাহ হঠা$করেই অনেক গুণ বাড়িয়ে দেয়। এগুলো নিজেকে বলা আমার নিজস্ব আনচানের কথা, অন্য কাউকে বলার নয়। আর শীলা দি জানতে পারলে আমার কান ছিঁড়ে দেবে। মোদ্দা কথা, শীলা দির ব্যক্তিত্ব (অতি+)আকর্ষক – পুরুষের খুনে দেয় সুনামির ধাক্কা।
শীলাদি বি-এ পাশ। একটু প্রেম টেমের রটনাও মাঝে শোনা গিয়েছিল; তবে অবশ্যই তা ক্ষণিকের ইয়ে – আমি হলপ করে বলতে পারি। তিনি শীলাদির চিরদিনের হওয়ার নেহা$ই অনুপযুক্ত। তার সঙ্গে ঘোরা ফেরা ছিল সত্যিই ক্ষণস্থায়ী। শুনেছিলাম শীলাদির উপেক্ষার কথাও।
একটা সম্বন্ধ, তার সরকারি চাকুরী, ভাল মাইনে। শীলা দি নাকি নাক শিঁটকালো,’বেঁ টে! আরেকজন বেশ; কিন্তু কালো। এইরকম অনেক সম্বন্ধ শীলাদি নাকচ করলো। তার পর, আমি চাকুরীস্থল থেকে বাড়ীতে এসেছি, শীলাদিকে দেখলাম, একটু গল্পও হল। হঠা$ কেমন যেন মনে হল, আরে, সেই ঢলঢলে ভাব তো দেখলাম না!
তারপর শুনেছিলাম পাত্রদেরই আর পছন্দ হচ্ছেনা, শীলাদিকে।
তারও পরে, শীলাদির বছর চল্লিশ বয়সে বিয়ে হল অতিসাধারণ একজনের সঙ্গে – সাধারণ ম্যাট্রিকুলেট, সাধারণ একটি দোকান, মোটা থলথলে শরীর।
অনেকদিন পর আবার দেখা হল, কুশল বিনিময় হল। বেশ আছে, ছেলে হয়েছে একটা। শেষবার দেখা হয়েছিল বছর পঁচিশেক আগে।
I read it thoroughly. Thanks to writer. I belive if a girl can try and try, again and again then she can stand alone. No need to get help from boy. But her father and mother should 1st make her aimful from her childhood. Her parents should help her to set her target 1st. Thereafter all will run for good.
মেয়েরা সচেতন না হলে এই সমাজ তাদের প্রাপ্য সম্মান দিবে না। মেয়েদের আত্মসম্মান নিয়ে বাঁচতে হবে।
আপনাকে ধন্যবাদ।