‘রামপাল’ নিয়ে জেদাজেদির শেষ কোথায়?

নাদেরা সুলতানা নদী: বাংলাদেশে প্রস্তাবিত রামপাল নিয়ে শুরু থেকেই একদল মানুষ সোচ্চার ছিল। তাঁদের যুক্তি ছিল, এটা আমাদের অন্যতম জাতীয় সম্পদ, বিশ্বের একমাত্র ম্যানগ্রোভ সুন্দরবনের প্রাকৃতিক পরিবেশ ও প্রতিবেশ এর জন্যে হুমকিস্বরূপ।

Sundarban 1এরপর থেকে বিচ্ছিন্নভাবে দেখে আসছি পরিবেশবাদী কিছু মানুষের কার্যক্রম।  
সম্প্রতি বিষয়টি চূড়ান্ত পর্যায়ে যাচ্ছে বলেই গণমাধ্যম জানাচ্ছে। এই মূহুর্তে বিশেষ করে ফেসবুকে বাংলাদেশের প্রস্তাবিত রামপাল প্রজেক্ট নিয়ে বিতর্ক দেখছি, পড়ছি এবং দিনশেষে নিজের মতো করে কষ্ট পাচ্ছি। এই ইস্যুতেও বর্তমান সরকারকে খুব বেশি আত্মবিশ্বাসী মনে হচ্ছে। কিন্তু এই আত্মবিশ্বাস স্বস্তির পরিবর্তে অস্বস্তিতেই ফেলছে বেশি। অধিকাংশই আবার কনফিউসড পুরো বিষয়টা নিয়ে। তারা এধারেও কাটছে না, ওধারেও না। এরকম মানুষের সংখ্যাও কম নয়।

অন্যদিকে আমরা যারা দলান্ধ নই, বলাই বাহুল্য বর্তমান সরকারকে অনেক ইস্যুতে (অনেক সময় নিতান্তই বাধ্য হয়ে) নিরব সমর্থন দিয়েই যাচ্ছি। স্বাধীনতা বিরোধী চক্র, জঙ্গিবাদ, দুর্নীতি এসব নিয়ে এই সরকার কিছু করতে চাইলে বিরোধিতা করছি না, প্রশ্নই উঠে না। দেশে কোনো যোগ্য বিরোধী দল বা নেতা নেই, সেই সত্য নিম তিতা-নিশিন্দা তিতা’র মতো গিলতে বাধ্য হচ্ছি এবং মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষে থাকা অসাম্প্রদায়িক চেতনায় উদ্বুদ্ধ দারুণ চৌকষ, জনসমর্থন পুষ্ট একটা রাজনৈতিক দলের বড্ড অভাব বোধ করছি বাংলাদেশে… যারা আওয়ামী লীগকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করার মতো রাজনৈতিক প্রজ্ঞা এবং সাহস রাখে। আওয়ামী লীগ এর প্রতি সবটুকু শ্রদ্ধা রেখেই বলছি, তাঁরা জনগণকে যা ইচ্ছে তাই কেন গেলাবেন, কতদিনই বা গেলাবেন, একমাত্র রাজনৈতিক দলই যদি থাকতে চান তাহলেও তো কিছু জনগণের মনের ভাষা বোঝার চেষ্টাও করা উচিত। প্রয়োজনও।

প্রবাস জীবন যাপন করছি, তাই এখন ‘বাংলাদেশ নিয়ে চাওয়াটাও অন্যরকমভাবে বদলে গেছে’! যেভাবেই হোক, ভালো থাকুক প্রিয় স্বদেশ, বিশ্ব মানচিত্রে বাংলাদেশের নাম হোক ‘গৌরব’ এই চাওয়া নিয়েই নিজের মতো করে আছি আমার জন্মভূমির সাথে প্রতিটা মূহুর্ত।

Nodi
নাদেরা সুলতানা নদী

কিন্তু এই প্রথম মনে হচ্ছে, সরকারকে তাঁর আত্মবিশ্বাস কোথায় নিয়ে দাঁড় করায়, এটা দেখার দিন বোধ হয় আর বেশি দূরে নেই। ঝকঝকে-তকতকে-সুন্দর চিন্তার এক তারুণ্য এখনও হাল ছেড়ে দেয়নি, এই জাগ্রত জনগোষ্ঠীই একদিন কোটি মানুষকে নতুন স্বপ্ন দেখাবে, বাংলাদেশ ৫২, ৬৯, ৭১ ও ৯০  জন্ম দিয়েছে, সেই চেতনায় মানুষ জাগবেই, সরকার যদি এখন বুঝতে পারে আজকের জনগণকে কোনঠাসা করা ব্যাপার না, অবশ্যই ব্যাপার না, তবে ইতিহাসে আপনাদের কথা স্বর্ণাক্ষরে লেখাতে চান, না কয়লা দিয়ে, সেটাই দেখার বিষয়!!!

সরকার সমর্থক অনেক ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠান থেকে বলা হচ্ছে, সরকার এই বিষয়টিতে যথেষ্টই আন্তরিক, হোম ওয়ার্ক যা করার ইতিমধ্যেই তা সম্পন্ন করেছেন। সুন্দরবন পরিবেশ রক্ষা করেই এই প্রকল্প করা হচ্ছে, সরকার যদি সবটুক আত্মবিশ্বাসী হয়েই থাকে, তাহলে এই বিষয়ে বিতর্ক অবসানে কেন জাতীয় সংলাপ বা সবকটি জাতীয় গণমাধ্যমে আমরা যারা এটার বিরোধিতা করছি, তা ভুল প্রমাণ করতে উদ্যোগ নিচ্ছেন না।

এই সরকার ক্ষমতায় আসার আগে থেকেই যারা বলে আসছিল ‘দেশ ভারতের কাছে বিক্রি হয়ে যাবে’ সেই প্রোপাগান্ডা বিশ্বাস করার লোক যেমন বাংলাদেশে আছে, তার বাইরেও কিন্তু নিখাদ বাংলাদেশপ্রেমী আছেন, সরকার সেই জনগোষ্ঠীকে কেন একদমই আমলে নিচ্ছেন না।

কেউ তো বলছে না ‘কালকেই সুন্দরবন শেষ হয়ে যাবে’, যা বলা হচ্ছে, তা হচ্ছে এটা একটা দীর্ঘমেয়াদি ধ্বংস কার্যক্রম এর সূচনা মাত্র। অনেক অনেক কিছুর এখন পর্যন্ত আওয়ামী লীগ এবং কিছু সময় বাংলাদেশের সব ভরসার জায়গা হয়ে উঠছেন সেই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই, আচ্ছা ঊনি কি এই বিষয়ের সকল খুঁটিনাটি বিষয়ে অবহিত আছেন আদৌ, এটা কি জানা সম্ভব কোনভাবে!

আমি এই বিষয়টিতে বিশেষজ্ঞ নই, তাই শেষমেশ যে বিশেষজ্ঞ মতটি উঠে আসবে বা প্রতিষ্ঠিত হবে, সেটিই মেনে নেব। চাওয়া তো একটাই, বাংলাদেশের ভালো হোক!!!

এডেলেড, সাউথ অস্ট্রেলিয়া

শেয়ার করুন: