নারী তুমি নিজ শরীরকে ভালোবাসতে শেখো

ফাহরিয়া ফেরদৌস: নির্দিষ্ট একটি বয়সের পর মানুষের জীবনে একটি নুতন মৌলিক চাহিদার আবির্ভাব ঘটে; এই চাহিদার নাম “জৈবিক চাহিদা”কোন মানুষই এই চাহিদাকে অস্বীকার করতে না, তারপরও আমাদের দেশের মানুষ ভদ্রতার মুখোশ পরে খুব সুন্দর করে এই বিষয়ে কথা বলবে না বা খুব কঠিনভাবে এর বিরোধিতা করবে, কিন্তু মনে মনে লাড্ডু ফুটবে

Fahriya 2মানুষ এটিকে অস্বীকার করতে পারে না বলেই প্রতি বছর বিলিয়ন টাকা ইনভেস্ট হয় পর্ন ইন্ডাস্ট্রিতে, আর এর দর্শক সংখ্যাও কোটি কোটি! দেশের বিভিন্ন ধরনের অপরাধের সাথে, সমস্যার সাথে খুব ওতোপ্রোতভাবে জড়িত এই “জৈবিক চাহিদা” বিষয়টি

সৃষ্টির আদিকাল থেকেই প্রাপ্ত বয়স্ক ছেলেমেয়ের মাঝে সম্পর্ক হয়েছে, হচ্ছে আর হবেই! আদি কালে ‘মুত্তা বিবাহ’ চালু ছিল কেবল এই চাহিদা’কে বৈধভাবে ব্যবহারের জন্যই। বিভিন্ন রাজা বা জমিদারদের জন্যও ছিল “হেরেম” বা “কোঠা”! কালের সাথে রাজা, জমিদার হারিয়ে গেছে তাই “হেরেম” বা “কোঠার” অস্তিত্বও আর নেই। তাই বলে ভাববার কোন কারণ নেই যে, মানুষের চাহিদা শেষ বা মানুষ অতিমাত্রায় ভদ্র হয়ে গেছে।

এই চাহিদা এখনো আছে বলেই অস্তিত্ব আছে পতিতালয়ের, যা  নিষিদ্ধ পল্লী নামে পরিচিত; যারা সেখানে থাকে তারা নষ্টা, সমাজে বেমানান, কিন্তু যারা সেখানে যান, তারা নষ্ট নন। এই নিষিদ্ধ পল্লীতে যাদের জন্ম হয়, তারা কিন্তু সমাজের ঐ সকল বংশীয় বাবারই সন্তান! কালে কালে এই সমস্ত হেরেমের নারীরা আর যৌনকর্মীরাই রসদ জুগিয়েছে মানব জীবনে, ইতিহাসে ও সাহিত্যে।

আর তাইতো হোক রাজা সোলায়মানের হেরেম কাহিনী কিংবা মোঘল সাম্রাজ্যের হেরেম কাহিনী কিংবা কালজয়ী উপন্যাস দেবদাস সর্বদাই উপভোগ্য! একজোড়া প্রাপ্ত বয়স্ক ছেলেমেয়ের মাঝে শারীরিক সম্পর্ক হতেই পারে এবং হচ্ছেও, কিন্তু আমার সমস্যা হলো যখন মেয়েটি বলে যে, তাকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে  শারীরিক সম্পর্ক  করেছে, অথবা যখন পত্রিকায় দেখি মেয়েরা নিজেদের ব্যবহার করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ে বেশি নম্বর পাবার জন্য।

Womenআবার ছেলেটিও “শারীরিক সম্পর্ক” বিষয়টিকে পুঁজি করে মেয়েটিকে ব্ল্যাকমেইল করে, ভিডিও করে সেটি আপলোড করে! অথবা শারীরিক সম্পর্ক করার জন্য প্রেমময় মিথ্যা সম্পর্কে মেয়েটিকে জড়ায়। শারীরিক সম্পর্কের পর ছেলেটির আর কোনো দায়িত্ব থাকে না, কিন্তু মেয়েটি ততক্ষণ পর্যন্ত নিরাপদ নয় যতক্ষণ পর্যন্ত নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে যে মেয়েটি গর্ভধারণ করেনি।

নারীর সবচেয়ে বড় উপহার হলো, সে গর্ভধারণ করতে পারে, আবার এই গর্ভধারণই তার সবচেয়ে বড় কাল হয়ে দাঁড়ায়। ছোট থেকে বড় সব বয়েসি মেয়েরাই এই বিষয়ে ভুল করে থাকে। ছেলেটির কোন প্রকার কোন লেনাদেনা থাকে না, কিন্তু মেয়েটির জন্য অনেক কিছু যুক্ত থাকে।  

মেয়েদের বোঝা উচিৎ শরীর দিয়ে কিছু আদায় হয় না, আর যেটি আদায় হয় সেটি স্থায়ী হয় না, কারণ কোথাও কোথাও মেধারও দরকার আছে। বুঝে না বুঝে শারীরিক সম্পর্ক করার কারণে অনেক মেয়েই বিভিন্ন রকম সমস্যায় পড়ছে। কাজ করতে গিয়ে দেখেছি, অল্প বয়সে গর্ভপাতের কারণে অনেক মেয়ে জীবনে আর মা হতে পারে না, আবার কারণটিও কাউকে বলা যায় না, তাই মেয়েটির এই বলতে না পারার যন্ত্রণা তাকে কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে।

Child 1তাই বলছিলাম কী, মেয়েদের উচিৎ নিজেকে, নিজের শরীরকে ভালবাসতে শেখা। বিরত থাকুন আপনার নিজ শরীরকে বিকিয়ে দিয়ে কোনকিছু আদায় করা থেকে, হোক সেটা ভালোবাসা কিংবা অন্য কিছু। প্রযুক্তির কারণে এখন অনেক ছোট বয়স থেকেই ছেলে-মেয়েরা বিষয়টি বুঝতে শিখে যায়, তাই মায়েদের উচিৎ ছোটবেলা থেকেই মেয়েদের নিজ শরীরকে ভালবাসতে শেখানো, এটিকে যেন কারো ভোগ্য পণ্য হিসেবে ব্যবহার করতে না দেয়।

১৯৯৪ সালে “সেক্সি সেক্সি লোক মুঝে কিউ বলে” নামক একটি গান পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে বের হয়েছিল। তখন আমি ক্লাস ফোরে পড়ি, গানটি শোনা এবং দেখা দুটোই নিষিদ্ধ ছিল, তাই এর প্রতি কৌতূহল ছিল যে কেন এই শব্দটি উচ্চারণ নিষেধ!

কিন্তু এখন দেখি যে “তোমাকে সুন্দর লাগছে” লাইনটি আর সৌন্দর্যকে ডিফাইন করে না, খুব অহরহ এই “সেক্সি” শব্দটি ব্যবহৃত হচ্ছে “সৌন্দর্য” কে ডিফাইন করার জন্য।

যুগের সাথে তাল মিলিয়ে সব পাল্টে যাচ্ছে, তাই শব্দের ব্যবহারও পাল্টে গেছে, শুধু একই রকম রয়ে গেছে নারীর শরীরচর্চা। নারীর শরীর সর্বদাই ভোগ্য ও উপভোগ্য বিষয়। এর ব্যবহার কখনো থেমে থাকেনি, তাই তো যেখানে প্রয়োজন সেখানেও, আবার যেখানে দরকার নেই সেখানেও নারী ব্যবহৃত হয়েছে; সাবান, শ্যাম্পু, গাড়ির এ্যাড থেকে শুরু করে শেভিং ক্রিম, আফটার শেভ সব জায়গাই!!  

ফাহরিয়া ফেরদৌস, আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট

 

 

শেয়ার করুন:
Copy Protected by Chetan's WP-Copyprotect.