একজন প্রাইমারি শিক্ষকের লজ্জা

নাসরিন বিনতে ইসলাম: একজন শিক্ষক হিসাবে পরিচয় দিতে কেন জানি না ইদানীং অনীহা দেখা দিয়েছে। অথচ খুব ভাব নিয়ে কোনো এক সময় বলতাম, আমিও জাতি গড়ার কারিগর।

আজকাল খুব ঘেন্না লাগে এ পরিচয় দিতে। ক্ষমতার দাপটে আমাদের অবস্থান কোথায় তা ভাবতেও গা শিউরে উঠে। আমাদের কান ধরতে হয়,বাথরুম এ ঢুকেও নিজেকে বাঁচাতে পারি না, সমাজপতিরা ইচ্ছে করলেই আমাদের উলঙ্গ করতে পারে জন সমক্ষে। কারও কিছু বলার নেই, বিচার নেই। এতোটাই অসহায় আজ আমরা।

71 war 5ঘুণে ধরা সমাজে আমাদের কোনো ঠাঁই নেই আজ। আমরা শোষিত সর্বত্র।

আমার একটা কৌতুক মনে পড়ছে, মা খুব গর্ব নিয়া বলছে, আল্লায় আমায় খুব ভালা রাখছুইন। দুইডা ছেড়াই আমার খুব কামের। একটা ডাক্তর, আরেকটা ইঞ্জিনিয়ার। একজন আগ্রহ নিয়া জিজ্ঞাসা করলো, তো কীসের ডাক্তার?

মা ভুবনজয়ী হাসি দিয়ে বললেন, ‘বাড়ি বাড়ি মুরগির ইঞ্জেকশন দেওনের ডাক্তার, আর রাস্তায় বসে ছাতা ঠিক করনের ইঞ্জিনিয়ার’। আমরাও আজ এই মায়ের দুই সন্তানের মতো ডাক্তার আর ইঞ্জিনিয়ার যেন। নামে মহান আর কাজে……।

এবার আসি মূল কথায়। জিপিএ ৫ নিয়া খুব শোরগোল চলছে চারদিকে, কিন্তু কেন? আমি মনে করি, এ দায় শিক্ষার্থীদের নয়। এর জন্য দায়ী শিখন প্রণালী। আমরা কী শিখাচ্ছি তাদের, কীভাবে শিখাচ্ছি?

প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সৃজনশীল পদ্ধতি আগে ছিল না, এখন শুরু হচ্ছে। গ্রামার আমাদের প্রাথমিক সিলেবাসে নাই, তাই ৫ম শ্রেণী পর্যন্ত তারা কোনো গ্রামার না জেনেই হাই স্কুলে উঠে। নতুন বিষয়ে অভ্যস্ত হতে হতেই তাদের অনেক সময় চলে যায়। ইদানীং কালে প্রাথমিক স্তরে সৃজনশীল পদ্ধতি যোগ হলেও, অধিকাংশ শিক্ষক এ পদ্ধতি জানেই না। তার মূল কারণ হলো, এ পদ্ধতিতে তারা পড়াশোনা করেনি, আর এ বিষয়ে ট্রেনিং নাই।

শিক্ষকই যদি না জানে, শিখাবে কী? আর প্রাইমারির, পড়ার ধরন না পাল্টালে, সিলেবাস না পাল্টালে ভাল কিছু আশা করা ঠিক হবে না।

আজ ফেবু খুলেই দেখি আমার প্রবাসী বোন তার পাঁচ বছর বয়সী ছেলের গ্র‍্যাজুয়েশন এর ছবি পোস্ট করেছে। আমি অবাক এটা কীভাবে সম্ভব? বোন জানালো, বছর পুর্তিতে গ্র‍্যাজুয়েশন পাটি হয় উপরের শ্রেণিতে উঠার জন্য।

আর আমাদের দেশে……? সরকার ভুল সিদ্ধান্ত নেয় এ কথা বললে আমি রাষ্ট্রদ্রোহী মামলায় পড়বো, তারপরও বলতে বাধ্য হচ্ছি, সরকারের সব সিদ্ধান্ত সমাজের জন্য হিতকর নয় কোনভাবেই। হাজার হাজার স্কুলের জাতীয়করণ করে কোন ভালটা হয়েছে? ভাল রেজাল্টের ভিত্তিতে জাতীয়করণ হলে পড়ার মান বাড়তো। পিছিয়ে থাকা স্কুলগুলি ভাল রেজাল্ট করতো।

শেয়ার করুন: