জেসমিন চৌধুরী: সদ্য এড করা এক ফেইসবুক ফ্রেণ্ড ইনবক্সে নক করে জানতে চাইলেন, আপনার এড করা পোস্টটা খুব রিয়ালিস্টিক। এটা কার লিখা? বাহুল্য প্রশ্ন, কারণ প্রতিটা লেখার সাথেই লেখকের নাম থাকে, তবু ভদ্রতা বশে জানতে চাইলাম, কোন লেখাটার কথা বলছেন?
ঐযে বহুগামিতা এবং নারীর সতীত্ব। লেখাটা খুবই বাস্তব সম্মত। এটা নাদিয়া ইসলামের লিখা, আমি তাকে ব্যক্তিগতভাবে চিনি না।
আপনার কি মনে হয় না লেখাটা খুবই বাস্তবধর্মী?
মনে মনে ভাবলাম, আরে বাস্তবধর্মী ভাবি বলেই তো শেয়ার করেছি, কিন্তু তবু উত্তর দিলাম, আপনার যদি এই লেখা সম্পর্কে কিছু বলার থাকে, কমেন্ট থ্রেডে গিয়ে বলুন।
ভদ্র (নাকি অভদ্র?) লোক তবু টাইপ করতেই থাকলেন, জানেন, আমি কিন্তু বহুগামি।
কী যন্ত্রণা! তবু সামলে নিয়ে বললাম, সেটা কমেন্ট থ্রেডে গিয়ে সবাইকে জানিয়ে দিন, আমাকে একা একা বলার কী মানে?
যাই হোক, শেষ পর্যন্ত তাকে আনফ্রেণ্ড এবং ব্লক করা হলো। নিজের যৌন জীবন নিয়ে যে গোপনে ইনবক্সে কথা বলতে চায়, তাকে ফ্রেণ্ড লিস্টে রাখার কোন মানে হয় না। ফেইসবুক বন্ধুত্ব নিয়ে অনেকে অনেক কথা বলেন, অচেনা মানুষকে এবং বিশেষ করে পুরুষলোককে এড করা প্রসংগে। আমি এ ব্যাপারে অনেক লিবারাল বেশ কয়েকটা কারণে।
প্রথমত আমার এলোপাথাড়িভাবে এড করা অনেক ফেইসবুক ফ্রেণ্ড এখন বাস্তব জীবনে আমার সবচেয়ে ভাল বন্ধুতে পরিণত হয়েছেন, অথচ বাস্তব জীবনের অনেক বন্ধু কোথায় কোন ভার্চুয়াল জগতে হারিয়ে গেছেন জানি না।
পৃথিবীর আনাচে-কানাচে থেকে বন্ধু তালিকায় এসে জড়ো হওয়া অনেক মানুষের সাথে আমার চিন্তাভাবনা ধ্যান-ধারণার কী অদ্ভুত মিল অথচ যাদের সাথে বড় হয়েছি, একই স্কুলে পড়েছি, একসাথে দীর্ঘদিন কাজ করেছি, তারা আজকাল আমার অনেক কথা বুঝতেই পারেন না।
দ্বিতীয়ত আমি বন্ধুত্বের বেলায় নারী-পুরুষের ভেদাভেদে বিশ্বাসী নই, আমার সবচেয়ে ভাল বন্ধুদের অনেকেই পুরুষ।
আর সবচেয়ে বড় কথা হলো, আমি মনে করি এতো বাছাবাছি, এতো সতর্কতা নিজের পৃথিবীকে শুধু সংকীর্ণই করে তুলে। ইন্টারনেটের বদৌলতে সুযোগ এসেছে নিজের পরিধিকে বড় করে নেয়ার, দূর দূরান্তের চমৎকার সব মানুষের সাথে পরিচিত হবার, জুজুর ভয়ে সেই সুযোগ আমি হারাবো কেন?
ইদানীং উইমেন চ্যাপ্টারে লেখালেখির সুবাদে অনেক ফ্রেণ্ড রিকোয়েস্ট পাচ্ছি। অনেকে সেইসাথে ইনবক্সে লেখা সম্পর্কে তাদের মতামতও জানাচ্ছেন। এসব ইতিবাচক মন্তব্যে উৎসাহিত হয়ে আরো বেশি বেশি লিখছি, এবং সেইসাথে বন্ধু তালিকাও বড় হচ্ছে।
কিন্তু এই সবকিছুর মধ্যে একটা উপলব্ধি আমাকে আহত করেছে।
আমরা উইমেন চ্যাপ্টারের লেখকরা যখন লেখার মধ্য দিয়ে নিজেদের দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরছি, জেন্ডার ইকুয়ালিটি প্রমোট করার চেষ্টা করছি, তখন এসব লেখা পড়ে আমাদের সম্পর্কে কী ভাবছে পুরুষ সমাজ?
আমার ওয়ালে নাদিয়া ইসলামের চমৎকার লেখাটি পড়ে একজন পুরুষ ধরে নিচ্ছে যেহেতু লেখাটির সাথে আমি একমত, সেহেতু আমি বহুগামি এবং পুরুষের জন্য সহজলভ্য। আমার সাথে ইনবক্সে সেক্স নিয়ে কথাবার্তা বলা যাবে, এবং আরো অনেক কিছুই করা যেতে পারে।
সবাইযে এরকমটা ভাবছে তা বলছি না, কিন্তু আপনারা যারা এমনটা ভেবে থাকতে পারেন, তাদেরকে আমি কিছু কথা বলতে চাই।
আমি নারী-পুরুষ উভয়ের ব্যক্তি স্বাধীনতায় বিশ্বাস করি, যা পুরুষের জন্য গ্রহণযোগ্য তা নারীর জন্যও গ্রহণযোগ্য হওয়া উচিৎ বলে ভাবি। যে সকল সামাজিক বা ধর্মীয় বিশ্বাস পুরুষকে নারীর ঊর্ধ্বে স্থান দেয় সেসবের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে গিয়ে আমি নারীর সতীত্ব জাতীয় কনসেপ্টের বিরুদ্ধে কথা বলি, তার মানে এই নয় যে, আমি আপনাদেরকে ডেকে ডেকে সেক্স নিয়ে কথা বলার দাওয়াত দিচ্ছি, বা রাত বিরাতে আপনাদের সাথে গল্প করার জন্য ব্যাকুল হয়ে আছি।
গঠনমূলকভাবে যে কোন বিষয় নিয়ে খোলাখুলি কথা বলার পক্ষে আধুনিক নারীর আন্দোলনকে আপনারা যদি খোলামেলা সেক্সের দাওয়াত বলে ভাবেন, তাহলে বলবো, আমাদের পয়েন্টটাই মিস করছেন আপনারা। নিজেদের মেইল ইগোতে পানি ঢেলে আরো বেশি চাঙ্গা করে চলেছেন, বুদ্ধিমতী নারীর সঙ্গ লাভের জন্য নিজেকে আরো বেশি অনুপযুক্ত করে তুলছেন।
আমি নিজে বহুগামি কীনা সেটা যদিও মূল বিষয় নয়, তবু বলবো আমি একগামিতায় এবং নারীপুরুষের মধ্যে পরিপূর্ণ কমিটমেন্ট ও আস্থা নির্ভর সম্পর্কে বিশ্বাসী। আর আমি যদি বহুগামী হয়েও থাকি, মেলামেশার জন্য আমার পছন্দের পুরুষদেরকে খুঁজে নেব।
আপনি যদি তাদের মধ্যে একজন হবার আশা রাখেন তাহলে আমাকে বুঝবার চেষ্টা করুন, আমাকে শ্রদ্ধা করুন। আমাকে পণ্য সামগ্রী ভাবার ভুল করলে ডিলিটেড হবেন, ব্লকড হবেন, কারণ আমি আপনাকে পণ্য সামগ্রীর মধ্যেও ধরি না। আমার কাছে আপনি অবশ্য বর্জনীয় আবর্জনা ছাড়া কিছুই না।