সুইসাইড করতে চাইছো?

মাসরুফ হোসেন: একটা সময়ে আমার মনে হয়েছিল, এই ভয়াবহ বোঝা বহন করতে পারবোনা। এই অসহ্য যন্ত্রণা ত্রিশ বছর বহন করার চাইতে একটা বুলেট বসিয়ে দিই মাথায়- তিন সেকেন্ডে সব শেষ। বেশিদিন না, বছর চারেক আগের কথা।

NY 1জেগে থাকতেও কষ্ট হতো, চোখ বন্ধ করতেও। রাতের পর রাত স্রেফ বসে থাকতাম বিছানায়, সকাল বেলা বিছানা থেকে নামার চাইতে মরে যাওয়াটা সহজ বলে মনে হত।

ডাস্টবিনের পাশে শোয়া কুকুরটিকেও মনে হত আমার চাইতে ভাগ্যবান। রাম শ্যাম যদু মধু যাকেই দেখতাম খড়কুটোর মত আঁকড়ে ধরতাম, নিজের যন্ত্রণার কথা বলতাম। ভাবতাম, ও কত ভাল আছে আমার চাইতে, কি সুন্দর ওর জীবন!

আত্মহত্যা নিয়ে গুগল করেছি দিনের পর দিন।

চার বছর পর আজকে সামান্য যতটুকু পথ পাড়ি দিয়েছি, সেই সময়ে কেউ আমাকে যদি বলত যে আমি এদ্দুর আসতে পারব- স্রেফ পাগলের প্রলাপ বলে উড়িয়ে দিতাম।

পছন্দের চাকুরি পাওনি? সাত বছরের প্রিয়তমার বিয়ে হয়ে গিয়েছে? অনাগত সন্তান মারা গিয়েছে? পরিবার টেকেনি? বাসায় এসে অপমান করে গিয়েছে বন্ধুরূপী বদমায়েশরা? “কথা বল, তোর চেহারা দেখতে তোর বাসায় আসি নাই”- তোমার হতবাক মুখের দিকে ঠিক এই কথাগুলো বলেছে অতি প্রিয় কিন্তু এক মুহূর্তে অচেনা হওয়া কোন বন্ধু? রক্তের সম্পর্কের কেউ কেউ তোমার ব্যর্থতায় কাটা ঘায়ে নুন দিচ্ছে??

উপরের প্রত্যেকটা ঘটনা আমার সাথে ঘটেছে। ডিড আই ডাই?? নো।

সেদিন যদি সদ্য ইস্যু করা বেরেটা নাইন্টিটু পিস্তলের ট্রিগারটা টিপে দিতাম, ইউরোট্রিপ করা হতনা, জাপানে পড়তে এসে সুশি খাওয়া হত না, আর্মি কমান্ডোদের সাথে হেলিকপ্টার থেকে লাফানো হতো না, জন্মদিনে সাকিব আল হাসান, আকরাম খান আর প্রফেসর ইউনুস স্যারের স্নেহধন্য উইশ পাওয়া হতনা( জেনিফার আর দীনাকে ধন্যবাদ), মুক্তিযোদ্ধা সেলিম ভাইয়ের পা ছুঁয়ে সালাম করা হতনা, জাফর স্যার ইয়াসমীন ম্যাডামের আশির্বাদ নেয়া হতনা,অচেনা কোন তরুনীর কাছ থেকে শোনা হতনা-“ভাইয়া, আমার ছেলেটির নাম আপনার নামে রেখেছি”।

অপেক্ষা করো। One day at a time. একদিন একদিন করে। টিকে থাকো। আমি একটা পর্যায়ে প্রতি পাঁচ মিনিটে একবার করে নতুন জীবন হিসেব করতাম, ” আগামী পাঁচ মিনিট আমি খারাপ অনুভব করবোনা”- এভাবে। বাবা-মায়ের সাথে, প্রিয় কোন আত্মীয়ের সাথে শেয়ার করো তোমার কষ্ট। অতি অবশ্যই প্রফেশনাল হেল্প নাও। “কান পেতে রই” তে ফোন করে কথা বলো (গুগল করলেই পাবে ওদের)।

খুব বেশি খারাপ লাগছে??

মেইল করো আমাকেঃ [email protected]

থিসিসের কাজ শেষ করে প্রতিটা ইমেইলের জবাব দেবো আলাদা করে। সে পর্যন্ত অপেক্ষা করো, নিজের কোন ক্ষতি করে বোসনা।

তুমি এখন যে মুহূর্তের ভেতর দিয়ে যাচ্ছ, আমি এটা পার হয়ে এসেছি। চলো, একসাথে পার হই!

আমরা হারবোনা। তোমাকে হারতে দিচ্ছিনা, প্রমিজ!!

(বাংলাদেশের এক কিশোরীর আত্মহত্যা প্রচেষ্টার ভিডিওটি কিছুটা দেখলাম। এটুকু জানি- এই অসুস্থ সময়ে ও একা নয় । আমার প্রোফাইল শুনেছি অনেক অল্পবয়েসি ছেলেমেয়ে ফলো করে।
এ লেখাটি ওদের জন্য। একজনের উপকার হলেও এ লেখাটি সার্থক)

শেয়ার করুন: