ফারহানা আনন্দময়ী: সমাজে যা কিছু ঘটছে সবকিছু নিয়েই প্রতিক্রিয়া জানাতে হবে বিষয়টা তেমন নয়। ভেবেছি, কাল রাত থেকে আজ বিকেল পর্যন্ত। কিন্তু কিছুতেই কোনো কার্যকারণ খুঁজে পাচ্ছি না ঘটনাটা ঘটানোর। সাবিরা নামের তরুণী যদি আত্মহত্যা না করতেন তবে আমার প্রশ্নের সঠিক উত্তরটা পেতাম।
ঠিক কী কারণে এই তরুণী আত্মহত্যা করলেন? বিষণ্ণতা? কিন্তু কেন তিনি বিষণ্ণ হয়েছিলেন? আমি ভাইরাল হয়ে যাওয়া ভিডিওটা দেখিনি, শুধু পড়েছি তাঁর শেষ নোটটা। এটুকু বুঝেছি, এই তরুণী তাঁর প্রেমিক দ্বারা প্রতারিত হয়েছেন, এমনটাই বোধ করেছিলেন।
সাবিরাকে আমার মানুষ হিসেবে একেবারেই বোকা মনে হয়নি, ভীতুও নয়। একটি নারী যিনি স্বাধীন জীবনযাপন করবেন বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এবং তিনি জীবিকার জন্যে মডেলিং এবং টিভি অনুষ্ঠানের সঞ্চালনাকে পেশা হিসেবে নিয়ে একা একটি বাড়িতে বসবাস করতেন। সহজেই বুঝা যায় তিনি বুদ্ধিমতী এবং সাহসী। সেই তিনি শুধু প্রেমিক প্রতারণা করেছে অর্থাৎ বিয়ের প্রতিশ্রুতিভঙ্গ করেছে…শুধু এই কারণে এমন একটি আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত যখন নেন, তখন তাঁর প্রতি কেবল করুণাই নয়, ক্ষুদ্ধ হওয়ারও যথেষ্ট যুক্তি থাকে। সাবিরা অতি-আবেগি একজন মানুষ এবং যে আবেগটি একেবারেই অপ্রয়োজনীয় এবং অর্থহীন।
তিনি যদি প্রেমিকের বিয়ের প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করাতেই জীবনের সব অর্থ হারিয়ে ফেলেন তবে আমি বলবো, সাবিরা শুধু পোষাকেই আধুনিক ছিলেন। বোধ এবং বিবেচনায় তিনি একেবারে পুরুষতান্ত্রিক ধারণারই ধারক ও বাহক ছিলেন। অর্থাৎ “পুরুষ ছাড়া তোমার গতি নেই, তোমাকে আমাদের উপর ভর ক’রেই চলতে হবে।” সাবিরার আত্মহত্যার মতন এক একটি ঘটনা এই সমাজে সংগ্রামরত অনেক নারীর একলা চলার সংগ্রামকে অসম্মান করার জন্যে যথেষ্ট।
সাবিরারই প্রায় সমবয়সী একজন কন্যা আছে আমার। মা হয়ে তাঁকে আমি বলি, বিয়েটাই নারীজন্মের একমাত্র লক্ষ্য নয়, সূর্যমুখি হয়ে বাঁচাটাকেই জীবনের লক্ষ্য ক’রে এগোও। গন্তব্যের পথে যদি কখনো মনে হয়, কোনো সম্পর্ক বিয়েতে পরিণাম পেলে তোমার জীবনটা আরো অর্থপূর্ণ হয়ে উঠবে, ঠিক তখুনি বিয়ের বিয়ের সিদ্ধান্ত নিয়ো। তার আগে কিছুতেই নয়।
জীবন অনেক সুন্দর. প্রতিটি নারীর উচিত নিজের জীবনকে একান্ত নিজের ভাবা।