ঘৃণা করি বনসাই হয়ে বেঁচে থাকাকে

ঝর্ণা চৌধুরী: বাংলাদেশের স্বাধীনতায় গর্ববোধ করি, আপ্লুত হইI সারা বিশ্বের বিস্ময় ‘বাংলাদেশ’ আজ মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে ‘ গার্মেন্টস ‘ শ্রমিকদের ঘামে ঝরা শ্রমের বৈদেশিক মুদ্রায় — অথচ সেই মেয়েদের প্রতিটা দিন কাটে প্রচণ্ড নির্যাতনে এবং বৈষম্যেI

Religion 1কিছু ‘অমানুষ’ ক্রমাগত মানবতার /সভ্যতার বিরুদ্ধে আস্ফালন করে যাচ্ছে I দেশের প্রতিটি আনাচে -কানাচে ঘটছে ধর্ষণ, এটা ক্রমাগত ঘটছে, কারণ দেশে আইনের শাসন নেইI কত বার দেশের প্রধানমন্ত্রী, সংসদের বিরোধী দলীয় নেত্রী নারী হলেন এবং এখনও আছেন। কিন্তু পিতৃতন্ত্র, স্বামীতন্ত্র থেকে বের হয়ে তারা ‘নারী বান্ধব’ দেশ গড়তে পারলেন না, এই আফসোস থেকে কোনদিন কি বের হতে পারবো?

বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার এক পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে, দেশে ২০১৫ সালে ১৪১টি শিশু ধর্ষণের শিকার হয়। এর আগে এই সংখ্যা ছিল ২০১৪ সালে ১১৫, ২০১৩ সালে ৯৩ ও ২০১২ সালে ৮৫। সদ্য বিদায়ী বছরে গণধর্ষণের শিকার হয়েছে ১০৩ জন নারী। এর আগে ২০১৪ সালে ৯৬ জন, ২০১৩ সালে ৩৫ জন ও ২০১২ সালে ২৬ জন নারী গণধর্ষণের শিকার হয়।

বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির তথ্য অনুযায়ী বিগত দু’বছরের নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতার একটি তুলনামূলক চিত্রে দেখা গেছে, ২০১৫ সালে নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা ৫% বৃদ্ধি পেয়েছে। ধর্ষণের ঘটনা আশঙ্কাজনক হারে (৩৫%) বেড়েছে। এছাড়া যৌতুকের কারণে নির্যাতন (২৮%), যৌন হয়রানি ২৪% বৃদ্ধি পেয়েছে I বলাই বাহুল্য যে, যে হারে ধর্ষণ এবং নির্যাতন ঘটে, তার ২%ও মিডিয়াতে আসে কিনা সন্দেহ।

নারীকেন্দ্রিক বিভিন্ন সমস্যার বিষবাষ্পে জর্জরিত আজ আমার প্রাণের বাংলাদেশ। পারিবারিক অঙ্গনে নারীকে সকল সময়ই অনেক চাপের মধ্যে থাকতে হয়। বিশেষত: তিনি যদি ঘরের বউ হয়ে থাকেন তবে তো কথাই নেই I পরিবারে পান থেকে চুন খসলেই তাকে নানান গঞ্জণা সহ্য করতে হয়। তবে কন্যা, বোন এবং মা যে এর বাইরে থাকেন তাও নয়।

বাকস্বাধীনতা, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, কর্মের স্বাধীনতা, নিজের স্বপ্নের মত করে বড় হতে পারা —- দেশের কজন মেয়ে /নারীর ভাগ্যে জোটে? ২/১ জন হয়তো কোথাও আছেন, কিন্তু তারা তো কোনো পরিসংখানে আসেন না।

স্যালুট জানাই সেই পিতা এবং স্বামীকে, যিনি তার কন্যা সন্তানকে/নারীকে তাঁর স্বপ্নের মতো বড় হতে দিয়েছেন, তাকে মানুষ হিসাবে সম্মান করেছেন। যেখানে বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটি পরিবারেই মেয়ে শিশুটি নানারকম বৈষম্যের মধ্যে বেড়ে উঠে, যদিও প্রতিটা ক্ষেত্রে বাবা-মায়ের দিকে আঙ্গুল তুলে লাভ নেই, এর শেকড় আর্থ -সামাজিক, ধর্মীয়, নিরাপত্তাজনিত ইস্যুর অনেক গভীরে —- তবুও কষ্টতো কষ্টই , কান্নার রং নীল সব মেয়েদেরই I

দীর্ঘ সময় মেয়েদের নিয়ে /সাথে আমি কাজ করেছি, আমি জানি প্রায় প্রতিটা মেয়ে ( দু-একজন সৌভাগ্যবান ছাড়া) বুকের ভেতর নদী নিয়ে, বনসাই হয়ে বেঁচে থাকে —- বাইরে চকচকে, কিন্তু ভেতরে? তাই একবিংশ শতাব্দীর আলো ঝলমলে পৃথিবীতে দাঁড়িয়েও আমি আমার জন্যে, দেশের প্রতিটি নির্যাতিত মেয়ের জন্যে বড় অসহায়, বড় বিপর্যস্ত বোধ করি।

আমি জানি না এই পথের শেষ কোথায় ??

মাঝে মাঝে খোলা আকাশের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করি, হে ঈশ্বর, কী তোমার নাম, কোথায় তোমার বাস আমার জানা নেই! মেয়েদের তৃতীয় বিশ্বের দরিদ্র দেশগুলিতে না পাঠালেই নয়? নাকি মেয়েদের ওই দেশগুলিতে জন্ম দাও জন্মান্তরের পাপ শোধ করবার জন্যে ????

 

শেয়ার করুন: