সব ধর্ষণের খবর কী আমরা জানি?

শাহাদাত রাসএল: কুমিল্লার ভিক্টোরিয়া কলেজের তনুর মতো অনেক নারীর ধর্ষণ ও হত্যা নিয়ে মিডিয়ায় নিউজ হয়, তোলপাড় ওঠে এই শহরে। কিন্তু এই নিউজ মানেই বাংলাদেশ না। প্রকাশিত সংবাদের চেয়ে অপ্রকাশিত নির্যাতন বহুগুণ বেশি। শতকরা ৫ ভাগ ধর্ষণ পত্রিকায় আসে বলেও মনে হয় না। যে নারীটি মাইগ্রেনের ব্যথায় অস্থির হয়ে উঠেছিলো আর তার স্বামী অস্থির হয়েছিলো যৌনাকাঙ্ক্ষায়।

Raselমধ্যরাতে নিজের বেডরুমে স্বামীটি তার স্বামীত্বের অধিকারে নারীটির নিষেধ ও অনুরোধের পরেও জোর করে সেই নারীকে ধর্ষণ করলো, নারীটি মাথা ব্যথায় নীল হতে হতে কাঁদলো, সেই ধর্ষণের মামলা হয়েছে কোন আদালতে? হয়নি।

আমার এক মেয়ে বন্ধু একদিন রান্না করতে গিয়ে ভাত বেশি নরম হয়ে যায় বলে তার প্রগতিশীল নারীবাদী ও অনলাইনের মুক্তচিন্তার পক্ষের স্বামীটি বাসায় ফিরে আমার বন্ধুটিকে ৮ টা ঘুমের ওষুধ খাইয়ে দিলো জোর করে, তারপর বিছানায় মুখোমুখি বসিয়ে রাখলো আমার বন্ধুটিকে, ঔষধের প্রতিক্রিয়ায় যখনি আমার বন্ধুটি ঘুমে হেলে পড়ছিলো তখনি একের পর এক থাপ্পড় মারা হচ্ছিলো তাকে। জোর করে জেগে বসে থাকতে বাধ্য করা হয়েছিলো তাকে। রাত ১ টা থেকে সকাল ৭ টা পর্যন্ত, তার স্বামীটি অফিসে যাবার আগ পর্যন্ত এভাবেই থাপ্পড়ের পর থাপ্পড় মেরে তাকে বসিয়ে রাখা হয়েছিলো, তাকে ঘুমের ঔষধ খাইয়েও ঘুমোতে দেয়া হয়নি।

আমাকে যখন আমার বন্ধুটি এই ঘটনা বলে তখন দুজনেই কেঁদেছিলাম। ওর দুই গালে হাতের পাঞ্জার থাপ্পড়ের দাগ ছুঁয়ে কেঁদেছিলাম।

সেই কান্না পর্যন্তই। আমাদের কান্না মিডিয়া বা আদালতে পৌঁছায়নি। কারণ আমার বন্ধুটি ও তার স্বামীর একটা সামাজিক মর্যাদা আছে। আমার বাসার এক কাজের মেয়ে ছিলো, যার বয়স হবে আনুমানিক ২১। তার পাঁচটি সন্তান। একদিন সে আমার মায়ের কাছে খুব কাঁদলো, কারণ সে আবার গর্ভবতী, কিন্তু সে আর গর্ভধারণ করতে চায় না। তার স্বামীটি তা মানবে না, তার আরো সন্তান চাই।

স্বামীটি একজন মুদি দোকানি, পাশাপাশি একজন পীরের মুরিদ। তার পীর বলেছে জন্মনিয়ন্ত্রণ হারাম। যতো বেশি সন্তান নেয়া যায়, ততোই ছোয়াব। স্বামী আর তার ধর্মীয় পীর মিলে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে তারা অগণিত সন্তান উৎপাদন করে স্বর্গে যাবে। সেই সিদ্ধান্তে স্ত্রীটি কোথায়?

সেই স্ত্রীটি আমার মায়ের কাছে বসে কাঁদলো, তারপর বললো, ‘সবই কপালের লিখন, স্বামীর কথার অবাধ্য হবো কী করে’?  

ফলাফল সেই কপাল অব্দি গিয়ে থেমে গেলো। সেই নারীটি ভাবতেও পারেনি যে স্বামীর বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের মামলা করা যায়। তাই মামলা হয়নি।
এমন অনেক ঘটনাই জানি। কিন্তু এসব নিয়ে কথা বলবে কে? যদি নিপীড়িত নারীটিই অভিযোগ না তোলে? যদি নারীর ইচ্ছের বাইরে তার সাথে যৌন সম্পর্ক গড়ে তোলার প্রতিটি ঘটনার মামলা দায়ের করা যায়, তবে দেখা যাবে “আগাছা বাছতে গিয়ে ধানক্ষেতই নাই হয়ে গেছে”। বেশিরভাগ পুরুষই তখন জেলখানায় স্থান পাবে। আর তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ধর্ষণ মামলার বাদী হবে স্ত্রী আর আসামী স্বামী রত্নটি। সুতরাং বলি কী……
“নারী তোমার জীবনের লাগামটা তোমার হাতে নাও
যে হাত তোমার লাগাম টানে সে হাত ভেঙে দাও।
নারী, তোমার জীবন শুধুই তোমার, ইচ্ছেমত নাচো
বাঁচো, নারী বাঁচো”।

শেয়ার করুন:
Copy Protected by Chetan's WP-Copyprotect.