ইতু ইত্তিলা: কিছুদিন আগে চট্টগ্রামে এক অনুষ্ঠানে বক্তৃতা দিতে গিয়ে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেছেন, ‘নৈতিক শিক্ষার ভিত্তি হবে ইসলাম’। মন্ত্রী তার বক্তব্যে বোঝানোর চেষ্টা করেছেন, তারা বিএনপি জামায়াতের চেয়েও বেশি ধার্মিক। তাদের সরকার মাদ্রাসা (মগজ ধোলায় কারখানা) বানাচ্ছে, মসজিদ তৈরি করছে। কে কার চেয়ে বেশি ধার্মিক সেটা প্রমাণ করতে ব্যস্ত। ভোটের জন্য আওয়ামীলীগ বিএনপি জামায়েতের সাথে ধার্মিক হওয়ার প্রতিযোগীতায় নেমেছে।

বাংলাদেশে ক্লাস ১-১০ পর্যন্ত ধর্ম নামে একটা আবশ্যিক সাবজেক্ট আছে। আগে ধর্ম বই গুলোর নাম ইসলাম ধর্ম, সনাতন ধর্ম থাকলেও কয়েক বছর আগে বই গুলোর নামে কিছুটা পরিবর্তন আনা হয়েছে। নাম হয়েছে, ইসলাম ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা, সনাতন ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা। সব ধর্মের নামের শেষে নৈতিক শিক্ষা যোগ করা হয়েছে।
‘নৈতিক’ শব্দের অর্থটা নিয়ে আমি কিছুটা বিভ্রান্ত ছিলাম। ডিকশেনারী ঘেঁটে পেলাম, বিশেষ্য ‘নীতি’> বিশেষণ ‘নৈতিক’> বিশেষ্য ‘নৈতিকতা’। নীতি শব্দটি ন্যায়ের সাথে সম্পর্কযুক্ত।
প্রশ্ন হলো, কোনও ধর্ম কি কখনো নৈতিক শিক্ষার ভিত্তি হতে পারে? অবশ্যই না।
সদা সত্য কথা বললে আল্লাহ্ খুশি হবেন, নাস্তিক হত্যা করলেও আল্লাহ্ খুশি হবেন। কাজেই সত্য বলাটা নৈতিক হলেও নাস্তিক হত্যা মোটেই নৈতিক কাজ নয়। সুতরাং ধর্মের সাথে নৈতিকতা মিলিয়ে ফেলাটা ঠিক নয়।
ধর্ম মানুষে মানুষে বিভেদ সৃষ্টি করতে পারে, যুদ্ধ-সংঘর্ষের কারণ হতে পারে, বোমা মেরে মানুষ মারার কারণ হতে পারে, চাপাতি দিয়ে নাস্তিক হত্যার শিক্ষা দিতে পারে। কিন্তু নৈতিক শিক্ষা কখনোই দিতে পারে না। নৈতিক শিক্ষার ভিত্তি হওয়ার তো প্রশ্নই আসে না।
২.
আমি তখন ক্লাস সিক্সে পড়ি, আমার খুব প্রিয় একজন বন্ধু ছিল, আমাদের বাসা পাশাপাশি, একসাথে আমরা আর্ট ক্লাসে যেতাম। একদিন আর্ট ক্লাস থেকে ফেরার পথে দেখলাম পাশেই একটা খালি জায়গায় পূজার মণ্ডপের মত বানানো হয়েছে। সেদিন কি যেন একটা পূজা ছিল।
আমি ওই বন্ধুকে বললাম, ‘চল গিয়ে দেখে আসি।’
সে বলল, ‘না, আমি যাবো না’।
জিজ্ঞেস করলাম, ‘কেন?’
বলল, ‘আমাদের ধর্মে মূর্তি পূজা হারাম’।
বন্ধু যখন যাচ্ছে না, আমিও আর গেলাম না। কারণ আমি মূর্তি বিশ্বাস করে মূর্তিটা দেখতে চাই নি, ব্যাপারটা কি হচ্ছে, সেটাই দেখতে চেয়েছিলাম।
একদিন আর্ট ক্লাসে স্যার কিছু একটা আঁকতে দিয়েছিলেন, যেখানে কিছু মানুষের ছবি আঁকাতে হবে। আমার বন্ধুটি, রঙে তুলি ডুবিয়ে আঁকতে আঁকতে বলল, জানিস আমাদের কিন্তু মানুষ আঁকা মানা। বললাম, স্যার তো আঁকতে দিলো।
-‘স্যার হিন্দু তাই দিয়েছে।’
‘তাহলে তুই আঁকছিস যে?’
-‘ থাক, আঁকতে ভাল লাগছে, শিশুদের গুণা আল্লাহ্ মাফ করে দেয়।’
মাঝেমাঝেই তার সাথে কথা বলার সময় এমন কিছু কথা বলতো যেসবে তাকে আমার খুব অচেনা লাগতো, অপমান বোধ করতাম তার কথা শুনে। ‘তোরা তো হিন্দু, তোরা এটা করিস, সেটা করিস, আমরা ওইসব করি না, গুণা। আমাদের এই নিয়ম, তোদের ওই নিয়ম।’ নিজেকে হিন্দু ভেবে অপমানবোধ করতাম তা নয়, বন্ধু আমাকে হেয় করে দেখছে চিন্তা করেই খারাপ লাগতো। আমাদের মাঝে বন্ধুত্ব টিকে ছিল নিজেদের গুণে। আর আমাদের মধ্যে যা কিছু পার্থক্য, যা কিছু সমস্যা, সেসব হয়েছিল ধর্মের কারণে।
ছোটবেলায় বন্ধুরা হিন্দুদের নিয়ে, হিন্দু ধর্ম নিয়ে আমাকে কিছু বললে আমি বুঝে পেতাম না কেন আমাকে হিন্দু ধর্মের ত্রুটি দেখাচ্ছে ওরা। ওদের কথাবার্তায় মনে হতো হিন্দু ধর্মের ভুল মানে আমার ভুল। বড় হয়ে বন্ধুদের মধ্যে কেউ হিন্দু ধর্মের ভুল ত্রুটি নিয়ে কথা বললে, আমি আরও কিছু যৌক্তিক ভুল ধরিয়ে দিতাম, যেটা আবার তাদের পছন্দ হতো না। কারণ তারা মূলত আমাকে উদ্দেশ্য করেই, আমাকে অপমান করতেই সেসব কথা বলতো। যেহেতু আমি একজন অবিশ্বাসী, কাজেই আমার এতে কিচ্ছু যায় আসে না। কিন্ত আমি যখনই হিন্দু ধর্মের পাশাপাশি অন্য ধর্ম নিয়ে কিছু বলতে শুরু করতাম তখনই তাদের চেহারা পাল্টে যেতো। একটু আগে তারা হিন্দুদের অযৌক্তিক বিশ্বাস নিয়ে হাসাহাসি করলেও নিজেদের অযৌক্তিক হাস্যকর বিশ্বাসগুলোকে তারা খুব যত্নে লালন করে। তারা অন্যের বিশ্বাস নিয়ে হাসতে পারলেও, তাদের বিশ্বাস নিয়ে কেউ হাসতে পারবে না, এমনই নিয়ম!
স্কুল কলেজে মুসলমান ক্লাসমেটরা তাদের হিন্দু ক্লাসেমেটটিকে ধর্ম প্রসঙ্গ তুলে অপমান করতে পছন্দ করে। আমি অবিশ্বাসী বলে হয়তো এতে আমি অপমানিত হতাম না, কিন্তু অন্য হিন্দুরা কোন উত্তর দিতে পারতো না, নিজের ক্লাসমেটদের কাছে অপমানিত হতো, চুপচাপ সহ্য করতো। বাংলাদেশের একটি রাষ্ট্র ধর্ম আছে, একটি নির্দিষ্ট ধর্মের অনুভূতির প্রতি রাষ্ট্র খুবই যত্নবান। সেখানে অন্যদের চুপ না থেকে উপায় আছে!
৩.
একদিন একজন বলল, ‘তোরা হিন্দুদের তো এক পা ইন্ডিয়ায়, বাংলাদেশে থেকে ইন্ডিয়াকে সাপোর্ট করিস’ এক পা ইন্ডিয়ায় থাকার যথেষ্ট কারণ আছে। কিছুদিন আগে স্লোভাকিয়ায় একজন ইন্ডিয়ান মুসলিম টুরিস্টের সাথে কথা হচ্ছিল। ইন্ডিয়ায় তাদের বাড়ি হিন্দু এলাকায়। জিজ্ঞেস করেছিলাম, কোন সমস্যা হয় কিনা। বলল, না, কোন সমস্যা করে না হিন্দুরা। করলে সাথেসাথেই জবাব দিয়ে দেয়া হয়। আর বাংলাদেশে যেকোনো ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ হিসেবে হিন্দু বাড়ি, মন্দির পোড়ানো এখন ডাল-ভাত টাইপ।
আর হিন্দু মেয়েরা একটু বড় হলেই বাবা-মায়েরা মেয়েকে মুসলমান ছেলেদের হাত থেকে রক্ষা করতে ইন্ডিয়ায় পাঠিয়ে দেয়, যাদের সামর্থ আছে। এরকম অবস্থায় হিন্দুদের এক পা ইন্ডিয়ায় থাকাটাই স্বাভাবিক। আবার যখন বাংলাদেশের একের পর এক উইকেটের পতন ঘটছে, তখনো তাকে চোখ মুছতে দেখা যায়। এই যুবকের নাম বিক্রম। জন্মেছিলেন বরিশালের উজিরপুরের গ্রামে। তার তিন বছর বয়সে তার পরিবারটি বাংলাদেশ ছেড়ে গিয়ে কলকাতাবাসী হয়।
খুশিতে মাকে জানালো, যে সে বাংলাদেশের খেলা দেখছে। মা ছেলের কাছে জানতে চাইলেন, বরিশালের কেউ স্টেডিয়ামে আছে কিনা। এতো বছর ইন্ডিয়ায় থেকেও নিজের দেশ বলতে তারা বাংলাদেশকেই বুঝে। ইন্ডিয়ায় এক পা থাকুক কিংবা দুই পা, মন কিন্তু থাকে বাংলাদেশেই।
Evu’s article is unfair.Islam can not be judged by comment of a few students.Islam does not allow killing without due process of law.Islam does not allow disrespect of other religions Evu should read books of some major writers of Islam like That of Dr Qaradawi and Dr Tareq Ramadan
Shah Abdul Hannan
Former secretary GOB
প্রিয় লেখিকা,
আপনি কোথায় পেয়েছেন যে নাস্তিক হত্যা করলে আল্লাহ খুসি হবেন ???!! কুরআন শরীফ বা হাদিসে কোথাও লেখা নাই যে তোমরা নাস্তিক বা কাফের দের হত্যা কর। যারা নাস্তিকদের হত্যা করেছে তারা নিজেদের আক্রোশে করেছে… আর নিস্তিকদের দরকার কি অন্য ধর্ম কে ব্যাংগ করে, ছোট করে, আঘাত করে কথা বলার…?? ধর্মের প্রয়োজন আছে বলেই সমাজে যুগ যুগ ধরে ধর্ম চলে এসেছে. শুধু বিজ্ঞান দিয়ে সমাজ চলে না… ছোট্ট একটা উদাহরন দেই… বিজ্ঞান বলছে — মানুষের মাংশও আমিষ আবার গরুর মাংসও আমিষ… তাহলে গরুর মাংশ খাওয়া গেলে মানুষের মাংশ খাওয়া যাবে না এ কথা কে শেখাচ্ছে — ধর্ম শেখাছছে… অল্প দর্শনে মানুষ নাস্তিক হয় কিন্তু গভীর দর্শনে মানুষ আস্তিক হয় কথা টা মনে রাখবেন…