তামান্না কদর: ভালো মেয়েরা তার নির্যাতনের কথা কারোকে বলে না। সে নির্যাতন শারীরিক, মানসিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক অথবা যৌনও হতে পারে অথবা একাধিক একসাথে সংঘটিত হতে পারে। ঘরে, বাইরে, মিডিয়া, অনলাইনে সর্বত্রই মেয়েরা বহুমুখি অবাক করা সব নির্যাতনের শিকার।
পারিবারিক নির্যাতনে মেয়েরা মুখ খোলে না। দোহাই দেয়া হয় পরিবারের সম্মানের। বলা হয়, পরিবারের ভেতর একটু পর সব ঠিক হয়ে যাবে, বাইরের মানুষকে এসব বলা অভদ্রতা। সম্মান রক্ষার দায়িত্ব নির্যাতিত মেয়েটির ওপরই পড়ে। মেয়ে হয়ে জন্মানোটাই তার বড়ো অপরাধ কীনা।
বাইরের নির্যাতনেও মেয়েরা মুখ খোলে না, এখানেও পরিবারের সম্মানের হানি হবে দোহাই দেয়া হয়, কেননা ভালো মেয়েরা কখনো টিজ এর শিকার হয় না। যদিও কখনো মেয়েটি মুখ খোলে পরিবারে তাকে আরেক দফা নির্যাতন করা হয় এই বলে যে, নিশ্চয়ই তোর কোনো ত্রুটি ছিলো নইলে তোর সাথে এমন করবে কেনো?
এরপর তার চলাফেরা সীমিত করে দেয়া হয়, নানারকম বাধা তৈরি করা হয় এবং একজন বডিগার্ড নিযুক্ত করা হয়। দুই দফা নির্যাতনের কারণে মেয়েরা তখন মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। বয়ো:সন্ধিকালের মেয়ে হলে এর পরিণাম ভয়াবহ, যার ফল মেয়েরা পরবর্তী সময়ে পেতেই থাকে।
মিডিয়া জগতে মেয়েদের হয়রানি বা নির্যাতনের রকমফের শুনে অবাক হয়ে গিয়েছিলাম চলচ্চিত্র পরিচালক বন্ধুর কাছ থেকে শুনে। আমি জানি না এসব নির্যাতিত মেয়েরা শেষ জীবন কেমন মনস্তত্ত্ব নিয়ে কাটায়!
অনলাইনে নির্যাতনের একটা কমন ঘটনা ইনবক্সে অযাচিত সেক্স আহ্বান, শিশ্নের ছবি পাঠানো এবং ভুল তথ্য দিয়ে প্রেম সম্পর্ক গড়ে তোলা যা শেষ পর্যন্ত যুগল ছবি বা ভিডিও সেক্স ছড়ানোর হুমকি দিয়ে মেয়েটিকে ব্ল্যাকমেল করা হয় আবার কখনো কখনো তা ছড়িয়েও দেয়া হয়।
সম্পর্ক হয়ে যাবার পর মেয়েটি যখন আবিস্কার করে ছেলেটির দেয়া তথ্য ভুল, ছেলেটি তার উপযুক্ত নয় তখন মেয়েটি সরে আসতে চাইলে তখনো তাকে নানারকম ভয় দেখিয়ে নির্যাতন করা হয়। মেয়েটি হয় সাময়িক নির্যাতন মেনে নিয়ে দূরে সরে যায় নয়তো অযোগ্য ছেলেটিকে বিয়ে করে স্থায়ী একটি নির্যাতনের শিকার হতে ছেলেটিকে জীবনের সাথি করে। মেয়েটি এখানেও অসহায়। পারিবারিক, সামাজিক সম্মানহানির ভয়ে সে মুখ খুলতে পারে না।
জন্মের পর থেকে মেয়েদের নিজের কোনো পরিবার বা ঘর নেই।
বাপের ঘর, স্বামীর ঘর, ছেলের ঘর এই করেই জীবন পার। মেয়েদের নিজের কোনো সমাজও নেই তবু এই পরিবার আর সম্মান রক্ষার দায়িত্বটি মেয়েরা পালন করে নিজেকে নির্যাতিত হতে দিয়ে।
এর একটাই কারণ, মেয়েদের নিজের কোনো ঘর নেই, নিজের কোনো সমাজও নেই।
এখন মেয়েদের নিশ্চয়ই আর ভালো মেয়ে হওয়া উচিত হবে না। তারা বরং এখন নিজের ঘর আর সমাজ তৈরির দিকে মনোযোগ দিক।