নারী অধিকার অর্জনে পুরনোরাই মূল বাধা?

সিনথিয়া আরেফিন:  ৮-ই মার্চ। আন্তর্জাতিক নারী দিবস। তো এখন প্রশ্ন হচ্ছে এই নারী দিবসের দিন কী হয়? উত্তরটি খুব বেশী সুনির্দিষ্ট না হলেও প্রতি বছরের মতোই নারী দিবসে মূলত কিছু নারী প্ল্যাকার্ড নিয়ে বের হয়, টিভিতে, রেডিওতে নারীরা আসেন, তাদের অধিকার নিয়ে কথা বলেন, সারা পৃথিবী ব্যাপী হাস্যকর সব সেমিনার হয় এবং সবার ভাবখানা এমন যে প্রতিবছর ৮-ই মার্চের দিন নারীদের অধিকার দিয়ে সব ঠিক হয়ে যাবে। এবারও তার অন্যথা বা ব্যতিক্রম কিছু চোখে পড়েনি, অন্তত বাংলাদেশে।

Sinthiaআমার প্রশ্ন হচ্ছে নারীদের এই অধিকার দেবে কারা কিংবা এইদিনেই কি নারীদের অধিকার নিয়ে, তাদের ক্ষমতায়ন নিয়ে কথা বলবার একমাত্র দিন? কেন সারা বছরে একটি দিনকেই নারীর অধিকার নিয়ে এত ব্যাপক কথা বলবার আবহ তৈরি করা হয়? সারা বছর তাহলে কী হয়? সারা বছর তাহলে নারীদের অধিকারের প্রসঙ্গ কিংবা দাবি কোথায় থাকে? প্রশ্ন আসে যে, অন্য সময়ে কি নারীর কোনো অধিকারের প্রয়োজন হয় না?

আমি এই পুরো ব্যাপারটিতে পুরুষতান্ত্রিক সমাজের দিকে অঙ্গুলি নির্দেশ করবার চাইতে ইনফ্যাক্ট নারীর ভূমিকা নিয়েই কথা বলতে আগ্রহী। নারীর ক্ষমতায়নে, নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠায় নারীদের ভূমিকা কতটুকু? নারী কি একে অপরের দুঃখ বোঝেন? আমাদের এই নারী সমাজে আমাদের নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠাকালে কি আমাদের একে অপরকে ধরে কাজ করবার প্রবণতা রয়েছে? আমি কিন্তু বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বলতে পারি, নেই। নারীদের মধ্যে যে প্রথাগত পুরোনো ধাঁচের একটা জেনারেশন রয়ে গেছেন, তাঁরা কিন্তু এই আধুনিক সময়ের নারীদের সেই পুরোনো জুজুর ভয় দেখাতে সব সময়ই সচেষ্ট থাকেন।

সত্যিকার অর্থে নারী অধিকার বলুন আর নারীর ক্ষমতায়ন বলুন, তা অর্জন করতে হলে আন্দোলনের পথ পরিবর্তন করতে হবে, কৌশল বদলাতে হবে। ওই তথাকথিত মানববন্ধন বা সেমিনার-সভায় কাজ হবে না। এখন তো নারীনেত্রীদের অধিকাংশই আবার সরকারের সাথে তাল মিলিয়ে চলছেন, তাদের প্রতিবাদ নজরে আসছে না তেমন করে। তাহলে অধিকার আদায় হবে কী করে?

আপনি লক্ষ্য করে দেখবেন যে ঘরের একজন মা কিংবা নারী-ই তার মেয়ে সন্তানকে একেবারে প্রাথমিক অবস্থাতেই এটা শেখান যে নারীর মূল গন্তব্য হচ্ছে স্বামীর ঘর। এই স্বামীর ঘরেই সব সুখ। বেশী পড়ালেখা করে কী লাভ? শেষ পর্যন্ত পালতে হবে সন্তান-সন্ততিদের। সুতরাং একটি নারীর জীবনকে শুরু থেকেই মূলত বেঁধে রাখে নারী নিজেই।

এগুলো থেকে উত্তরণের পথ কী? এই প্রজন্মের নারীদের ভূমিকাই বা কী? আমি কিন্তু আশার আলো বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে খুব বেশী যে দেখি, তা নয়। এই প্রজন্মের নারীদের মধ্যেও যখন আমি ষাটের দশকের ভাবনা দেখি তখন হতাশ লাগে। মনে হয় এগোবার বদলে আমরা বরং পিছিয়ে যাচ্ছি। আমাদের নারীদের এখনো শেখানো হয় পুরুষ মানেই মেনে নেয়া, স্বামীর সাথে বোঝাপড়া করে চলা, ভালোভাবে থাকা, ইত্যাদি ইত্যাদি।

অনেক নারীনেত্রীকেই কাছে থেকে দেখার সৌভাগ্য বা দুর্ভাগ্য দুটোই হয়েছে। তারা কথায় এক, কাজে আরেক। তারাও মূলত পুরুষতান্ত্রিকতাকেই শেষতক মেনে নেন। এতে করে না হয়েছে নারীর ক্ষমতায়ন, না হয়েছে নারীর আত্নোন্নয়ন। নারীরাই পিছিয়ে থাকে। আর সে কারণেই আমি বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে কর্পোরেট নারী দিবস পালনের মতো একটি শো-অফ দিবস নিয়ে খুব বেশী উদ্বেলিত নই। এই দিনটি পুরুষদের তৈরি করা একটা স্বান্তনা মাত্র। এ কেবলই ভ্রম।

শেয়ার করুন:

কথাগুলো একেবারেই সত্য। নারী দিবসের মানে হওয়া উচিৎ ছিল প্রগতিশীল নারী সমাজের অগ্রসরমান কর্মসূচী মুলুক দিবস পালন। কিন্তু তা না হোয়ে দেখাযায় যে, মুষ্টিমেয় কিছু প্রগতিশীলরূপী নারী সমাজসেবক, এই দিন তাদের ব্যক্তি উন্নয়ন চরিতার্থ প্রদর্শন নিয়েই বেশি ব্যতিব্যস্ততা থাকেন। এযুগে এখন আর ব্যানার, ফেস্টুন নিয়ে প্রচারণার কোন মানে হয়না। এগুলো আসলে লোক দেখান ব্যক্তিগত বার্তি-আয়ের উপকরণ বা প্রণালি মাত্র। এখন দরকার একজন অপরজনের পাশে এসে কর্মকান্ডে সরিক হওয়া এবং আক্ষরিক সহায়তা করা। ধন্যবাদ আপনাকে সিনথিয়া আরেফিন, আপনার এই সুন্দর ও সহজ সত্যের জন্য।