শারমিন শামস্: আন্তর্জাতিক নারী দিবস আসলেই এদেশের কয়েকটা গণমাধ্যম, বিশেষ করে ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া (শুরুটা অবশ্য করেছিল প্রিন্ট মিডিয়া) একটা বিশাল ফাইজলামি করে মেয়েদের সাথে।
সেদিন তারা ঘোষণা দেয়, ঐ বিশেষ দিনে গণমাধ্যমটির সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করবে নারী কর্মীরা। অর্থাৎ একদিনের সম্পাদক, একদিনের প্রধান বার্তা সম্পাদক, একদিনের প্রধান প্রতিবেদক। এর চেয়ে হাস্যকর আর কিছু হয় বলে আমার মনে হয় না। আর মেয়েরাও একদিনের দায়িত্ব পেয়ে বিগলিত হয়ে সেই দায়িত্ব পালন করে, পুরুষ সহকর্মীরা দিনভর তাদের নানারকম মন্তব্য-হাস্যরসে ভরিয়ে রাখে, আর মেয়েরা সেটা এনজয়ও করে।
এখন দেশে এরকম একাধিক গণমাধ্যম হাউস আছে, যেখানে বাস্তবিক অর্থেই সম্পাদক, বার্তা প্রধান, প্রধান বার্তা সম্পাদক, প্রধান প্রতিবেদক এবং অনুষ্ঠান বিভাগের প্রধান পদে নারীরা সসম্মানে তার আসন অধিকার করে আছেন। তারা একদিনের জন্য তাদের দায়িত্ব পান না, বরং বছরের পর বছর জুড়ে নিজের কাজ যোগ্যতার সঙ্গে করে যাচ্ছেন।
যে হাউসগুলো এই কাজটি করে, তারা প্রকৃত অর্থে কী বোঝাতে চায় আমার জানা নাই। এদের অনেকেই আছে সারা বছর মেয়েদের নানাভাবে জেন্ডার ডিসক্রিমিনেশন করে, নারী দিবসের দিন ভালো ভালো অনুষ্ঠান দেখায়।
সারা বছর মেয়েদের মাতৃত্ব নিয়ে নির্যাতন করে, আর মা দিবসে প্যানপ্যানে কান্নাকাটি জাতীয় রিপোর্ট প্রচার করে। এর চেয়ে বড় ভণ্ডামি আর কী হতে পারে?
এদেশে নারী ইস্যুতে গণমাধ্যমের ভণ্ডামি নিয়ে রীতিমত রিসার্চ হওয়া দরকার। যা হয়েছে, তা যথেষ্ট নয়। ভণ্ডামির বিষয়টিকে প্রাধান্য দিয়ে গবেষণা করা উচিত। আর যেসব পুরুষ নির্বাহী এইসব গণমাধ্যমে চেয়ার আঁকড়ে বসে থেকে মেয়েদের নানাভাবে নির্যাতন করেন, তাদের নামধাম সব প্রকাশ করার সময়ও চলে এসেছে।
আমি এক টেলিভিশনে কাজ করতাম, সেখানকার প্রধান বার্তা সম্পাদক একদিন এক বাচ্চা মেয়ে নিউজ প্রেজেন্টরকে আমার সামনে এনে তার বুকের দিকে আঙ্গুল তুলে বলতে লাগলেন, ‘বলো বলো শারমিন, ওর জামাটা কি বেশি টাইট না? এটা কি ওর নেক্সট নিউজে পরা উচিৎ?’ বাচ্চা মেয়ে লজ্জায় জড়োসরো।
আমি বললাম, ‘হ্যা, জামা টাইট, তবে সেটা সবারই ভাল্লাগবে, আপনারও তো লাগছে। হেহেহেহে’ হাসি দিয়ে বেয়াদপি কাভার দিলাম। তো এই হলো অবস্থা। এই টেলিভিশনও নারী দিবসে সব ক্ষমতা মেয়েদের দিয়ে বিশাল কিছু করে ফেলেছে ভাবে। আর দিবস গেলেই প্রেগনেন্ট মেয়েদের নানাভাবে নির্যাতন করে, মেয়েদের প্রেগনেন্সিকে কটাক্ষ করে অশ্লীল কথা বলে, মেয়েদের বুকের দিকে তাকিয়ে আদেশ নির্দেশ দেয়, আর দিন গেলে তৃপ্তির ঢেঁকুর তোলে। আর সেকারণেই এই দিবসের বিশেষ দায়িত্বের মুখে আমি ঝাড়ু মারি!