অভিজিতের মৃত্যু নেই, আমরা সবাই অভিজিৎ

Urmiইশরাত জাহান ঊর্মি: আপাত:দৃষ্টিতে কোথাও কোন অস্বাভাবিকতা চোখে পড়ে না। পুলিশ বারবার নিস্পৃহ চোখ আর শক্ত মুখে চেক করে ব্যাগ-পত্র, সবার। কাল ঝড়বৃষ্টি হয়েছে। বইমেলার এখানে-ওখানে কাদাপানি। সুন্দরীরা মাথায় ফুলের রিং জড়িয়ে সেলফি তোলে। প্রকাশকরা কিছুটা ব্যস্ত কালকের পানিতে ভেজা বইয়ের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে। দুএকজন লেখক হেঁটে যান গর্বিত মুখে। আমিও স্বজন বন্ধু পরিবেষ্টিত। নিজের বই এসেছে। ছবি তুলি, হাসি ঠাট্টা করি। আর থেকে থেকে দমকা হাওয়ার মতো মনে পড়ে যায় ২৬ ফেব্রুয়ারির কথা!

অভিজিত রায়কে আমি চিনতাম না। অবিশ্বাসের দর্শন আমি পড়েছি তিনি খুন হওয়ার পর। পড়েছি আর অকারণে দীর্ঘশ্বাস ফেলেছি। যুক্তিবাদিতা, শুধু যুক্তিবাদিতার জন্য একজন লেখককে মেরে ফেলা যায়? এভাবে! তার আগে পর্যন্ত দুচারটা যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসির রায় কার্যকর নিয়ে কি সুখ ছিল আমাদের!

Abhijit 2
ড. অভিজিৎ রায়

আমার এখনও ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ এর সন্ধ্যাটার কথা মনে পড়ে। চারুকলায় কী একটা এসাইনমেন্ট ছিল। আমি আর আরিফ জেবতিক সোহরাওয়ার্দি উদ্যানের পার্কের বেঞ্চিতে বসে অনেকক্ষণ আড্ডা দিই। এইসব কিছু নিয়ে। রাজনীতি, আন্দোলন, ব্যক্তিজীবন। আড্ডা শেষ করে চায়ের কাপ মুখে তুলে আরিফ বইমেলায় যায়, আমি অফিসে ফিরি। খানিকবাদেই এই ঘটনা। ঠিক আমরা যেখানে বসেছিলাম তার কয়েক গজের ভেতরে বাউন্ডারির বাইরে। কেমন যেন শূণ্য লাগছিল সেদিন সবকিছু। তখনও অভিজিতের লেখার সাথে পরিচিত নই, কিন্তু খুনটা মনে করিয়ে দেয় হুমায়ূন আজাদের কথা। আমরা ভেবেছিলাম সেই অবিশ্বাস্য সময় বুঝি আমরা পার করে এসেছি।

এবং তারপর। কিসের পার করে আসা? অন্ধকার কালো গহ্বর আরো হা করে যে এগিয়ে আসছে তাতো ২৬শে ফেব্রুয়ারিতেই বুঝলাম! দিন চলে যায়। আমাদের স্মৃতির উপর রবার ঘষা শুরু হয়ে যায়। অভিজিতের লাশের উপর জমতে থাকে একের পর এক লাশের স্তুপ। আর আমরা এগিয়ে যাই কী এক অদ্ভুত বিতৃষ্ণা আর বিবমিষা নিয়ে।

হতাশ লাগে। বিচার হবে না, হয় না, এটাই সবাই বিশ্বাস করে এখন। কিন্তু আমরা তো হতাশার কথা বলতে জানি না। আমাদের কলম চলবে। অভিজিত অভিজিত হয়ে উঠেছিলেন তাঁর লেখা আর চিন্তা দিয়েই। শুধু শুধু অভিজিত হওয়া যায় না। আমাদের আশাবাদ তাই কলম চালানোর জন্য যুক্তি আমরাও শিখবো। বিশ্বাস করুন, বিশ্বাস করুন এবং বিশ্বাস করুন, আমরা হারবো না। হারতে আমরা পারি না। কারণ আমরা সবাই অভিজিৎ।

 

শেয়ার করুন: