“আমার কৈশোরের সাজেক এখন অন্যের প্রমোদ প্রাসাদ”

hillতেপান্তর লারমা অপু :

যে ভূমিতে শৈশব কাটিয়ে কৈশোরের দুরন্ত জীবন অতিক্রম করার আগেই কোন এক অদৃশ্য শক্তি এসে কেড়ে নেয় বসতভিটা, সেটাকে আর যাই হোক নিজের বলে দাবি করা যায় না । হাজারো কষ্ট বুকে নিয়ে অশ্রুসজল চোখে বাধ্য হয়ে অন্যত্র চলে যেতে হয়। এর চেয়ে বেদনাদায়ক ঘটনা কী-ই বা আর হতে পারে। জীবনটা তো এখনো জীবিত আছে..!

নিরাপত্তার উষ্মতা দিয়ে মনের যন্ত্রণাকে ডেকে সময়টাকে অতিক্রম করলেও মনের অপমৃত্যু ঘটে ঐ একটি আঘাতেই। শুধুমাত্র জিন্দা লাশ হয়ে বেঁচে থাকার জন্য আসলে বেঁচে থাকা। এরকম বহু বঞ্চনা, শোষণ, নির্যাতনকে বুকে চেপেই বেঁচে থাকে জুম্ম পাহাড়ের আদিবাসীরা।

SAjek 2রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলার সাজেক ভ্যালির কথা হয়তো অনেকেরই জানা। ২০১৫ সালের খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলায় সেনানিবাসের আয়োজিত বাংলাদেশের জনপ্রিয় টিভি ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ইত্যাদি-তে এই জমকালো অনুষ্ঠানটি বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বিটিভি ওয়ার্ল্ডে প্রচার করা হয় ৩০ জানুয়ারি ২০১৫ তে। সেই ইত্যাদির কল্যাণেই সাজেকের সেই অপরুপ সৌন্দর্যের রুপটি দেখার সৌভাগ্য হয়েছে আমার মতো হাজারো হতভাগার। আর সেই কারণেই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা হাজার হাজার পর্যটক এই সাজেককে দেখতে ছুটে আসছে।

নিজেদের ফেসবুক, টুইটারে সেই সাজেকের অপরুপ সৗেন্দর্যের কথা পোস্ট করছে, করেছে আর শেয়ার করেছে রুপের বাহার, সেই সাজেকে দাঁড়িয়ে হাত দিয়ে মেঘকে স্পর্শ করার কথা। কিন্তু কেউ কি জানেন সেই সাজেক ভ্যালির ইতিহাসের কথা…? – সাজেকে দাঁড়িয়ে যে মেঘকে স্পর্শ করেছেন নরম হাতের ছোঁয়ায়, সেই মেঘ কিন্তু কাচালং, মাচালং, কিংবা কর্ণফুলীর নদীর সৃষ্ট মেঘ নয়।

সেই মেঘ আদিবাসী খুকি সম্প্রদায়ের চোখের জল গড়িয়ে পরে আকাশের শূন্যতায় সৃষ্ট হওয়া কৃত্রিম মেঘ, সেই মেঘে জীবন থাকলেও মনের অপমৃত্যু ঘটিয়ে চোখের কোনে গড়িয়ে পড়া বিন্দু বিন্দু চোখের জলের সাজানো মেঘ।

হ্যাঁ আমি সেই সাজেক ভ্যালির কথা বলছি।

Sajek 1জানা যায় যে, সেই সাজেককে পর্যটন স্পট করতে আদিবাসী খুকি সম্প্রদায়ের ৬০ টি পরিবারকে উচ্ছেদ করা হয়। আর কেড়ে নেওয়া হয়েছিলো তাদের বাপ-দাদার বংশ পরম্পরায় চাষ করে আসা একমাত্র সম্বল জুম চাষের পাহাড়গুলোকে। আর সেই জায়গাতেই আমরা দেখতে পাচ্ছি এখন সাজেককে।

এই উন্নয়নের ধারাকে অনেকেই প্রশংসা করেন বটে। অবশ্যই প্রশংসার দাবিদার রাখে এই ভেবে যে অকল্পনীয় ছিলো সাজেক। যেখানে রাস্তা হবে এমন কল্পনা করাটাও দু:সাধ্য ছিলো, সেখানে আবার হোটেল, বোর্ডিং থেকে শুরু করে বিরাট পর্যটন এরিয়া। এই উন্নয়নের ধারাকে অনেকেই আদিবাসীদের জন্যই উন্নয়ন বলে ধারণা করেন।

কিন্তু শৈশব কৈশোরের সেই দুরন্তপনায় কাটানো সেই বসতভিটা, জীবনের মৃত্যু আর মনের অপমৃত্যুর মাঝে সেই বসতভিটা থেকে উচ্ছেদের মুহূর্তকে কি কেউ উপলব্ধি করতে পারবে? প্রাণে বেঁচে থেকেও মনের অপমৃত্যু ঘটানোর মুহূর্তটি যে কতটা বেদনাদায়ক সেটা ভুক্তভোগী ছাড়া অন্য কেউ বুঝতে পারবে না।

আসলে মনের কোনে প্রশ্ন জাগে বাংলাদেশে সংখ্যালঘু হয়ে জন্মানোটা কি আজন্ম পাপ? তাহলে এই উন্নয়নের ধারা কি আদিবাসিদের জন্য? নাকি সেই উন্নয়নের ধারাটাই আদিবাসীদের জীবন বৈচিত্র্যকে হুমকির মুখে ফেলে দেয়া?

১৯৯৭ সালের ২রা ডিসেম্বর বর্তমান ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের সাথে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি ঐতিহাসিক পার্বত্য শান্তি চুক্তির মাধ্যমে দীর্ঘদিনের গেরিলা যুদ্ধের অবসান ঘটলেও অবসান ঘটেনি সেই জুম্ম পাহাড়ে বসবাসরত আদিবাসীদের উপর নির্যাতন, ধর্ষণ, ধর্ষণের পর হত্যা, জমি দখলের প্রচেষ্টা, সাম্প্রদায়িক হামলাসহ আরো অনেক অপকর্ম।

নিরীহ আদিবাসীদের এই শোষণ, এই বঞ্চনা, এই নির্যাতন আর কতকাল চললে প্রশাসন সজাগ হবে? সরকার তাদের প্রতি সদয় হবে? তারপরও দুর্গম পাহাড়ে বসবাসরত জনগোষ্ঠীগুলো এক বেলা খেয়ে পড়ে বাঁচার স্বপ্ন দেখে, বাঁচতে স্বপ্ন দেখে, স্বপ্ন দেখে শোষণ, নির্যাতন, ধর্ষণ, হত্যা মুক্ত সুন্দর একটা পার্বত্য চট্টগ্রামের। সেই আশা, সেই স্বপ্ন নিয়েই বেঁচে থাকুক জুম্ম পাহাড়ের অধিবাসীরা।

শেয়ার করুন:

Any infrastructural development has its cost . When the Panaromic Second Capital was built in Dhaka in 1960’s many inhabitants who lived there for generation after generation were uprooted. Same thing also happened with the original dwellers of the posh residential neighbourhoods of Dhaka like Gulshan, Banani, Baridhara. It’s the sad part innate in such development. It happened everywhere of the world. When New Delhi was being developed in early 20th Century millions of mainstream Indians ( not the monoroties) were evected. So this phenomenon does not necessarily have communal tone.