তামান্না সেতু: বছর পাঁচেক আগের কথা, বাসে করে শেওড়া পাড়া থেকে শাহবাগ যাচ্ছি। শেকড় পরিবহন। সামনের মহিলা আসন ফাঁকা থাকতেও পেছনের একটা খালি উইন্ডো সিটে মানে জানালার পাশের সিটে যেয়ে বসেছি। সামনের দিকে টানা যে সিটটাকে মহিলা সিট নাম দেয়া হয়েছে সেটা বসার জন্য ভীষণ অনুপযোগী। পিঠ সোজা করে, পা ভাঁজ করে বসতে কষ্ট হয় খুব। আমি লম্বা মানুষ, ওখানে পা ভাঁজ করে বসে এক ঘণ্টা জার্নি করা কবরের আজাবের মত লাগে।
সিট ফাঁকা থাকলে আমি পিছনের সাধারণ আসনে চলে যাই।
সেদিনও বসেছি জানালার পাশে। মিনিট দুই পরেই পাশের সিটে একজন যাত্রী এসে বসলেন, পুরুষ। দামি পারফিউমের গন্ধ তার কাপড়ে। চোখে সানগ্লাস। দামি কাপড়ে মোড়া শরীর।
তিনি বসলেন তার হাত বুকের কাছে ভাঁজ করে। এই লোকাল বাসগুলোর সিট এতো চাপা যে তার হাতের কনুই বারবার আমার শরীরের একপাশে গুঁতো খাচ্ছিল। গুঁতো খাবার জন্য বাসের চাপা সিটের থেকেও তার ইচ্ছের গুরুত্ব যে বেশী তা বুঝতে পেরে ভদ্রভাবে বললাম- ‘ভাই হাতটা সোজা করে বসুন।’
তিনি কথার উত্তর না দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে মধুর হাসি হাসলেন এবং একই ভঙ্গিতে বসে রইলেন এবং বাসের প্রতিটি ঝাঁকিকে কাজে লাগিয়ে আরও বেশী বার তার কনুই আমার বক্ষে লাগিয়ে যাচ্ছিলেন। এবার আমি একটু রাগ করেই বললাম- আপনার কনুই আমার শরীরে লাগছে, সরান হাত। লোকটি আবার মধুর হেসে মিনমিনে অভ্যস্ত ইংলিশে গলায় একটা ইংরেজ টান এনে বলল – টেক ইট ইজি ম্যান !!!!
আমি ইজিলি টেক করি নাই। উঠে দাঁড়িয়ে চোয়াল বরাবর একটা চড় লাগিয়েছি। বাসের ৩০ ভাগ পুরুষ জিজ্ঞেস করেছে, কি হয়েছে ম্যাদাম, সবিস্তারে বলুন। কি করেছে উনি? থাপ্পর কেন দিলেন?
আমি নির্লিপ্ত স্বরে বলেছি- ইচ্ছে করে আমার বুকে গুঁতো দিয়েছে। যারা ভাবছেন “বুকে” বলার কি দরকার ছিল, বলতেন গায়ে। তাদের জন্য বলছি, গায়ে বললে আমাকে আবার প্রশ্ন করা হত- গায়ের কোথায়? কিভাবে? কতবার?
আমার নখরা ভালো লাগে না তাই একবারে বলে দিয়েছি ‘বুকে’। আমার বক্ষ আমার দুর্বলতা নয়। শরীরের এ অংশ আমাকে গর্বিত মা জাতি বানিয়েছে। এ শব্দ বলতে আমার লজ্জা লাগে না।
আমরা পার হয়ে এসেছি অনেকখানি পথ। অনেক কিছু ইজি টেক করে কাটিয়েছি অনেক বছর।
চলছে বই মেলা। আমাদের প্রাণের মেলা। মেলার ভিড় কাজে লাগিয়ে কন্যাদের ইজিলি আপনারা যা কিছু দেবার চেষ্টা করবেন তার বিপরীতে অনেক কন্যাই এবার ঘুরে দাঁড়াবে। দিন বদলেছে। পবিত্র এই মেলার মাঠে পবিত্র হয়ে আসুন সবাই। না হলে কশিয়ে এক থাপ্পর মেরে হাসিমুখে কন্যারাও এবার বলবে “টেক ইট ইজি ম্যান” ।
নারীকে সম্মান করাটা পরিবার থেকেই শেখানো উচিৎ। কিন্তু সেটা আর হচ্ছে কই?