উইমেন চ্যাপ্টার: গত পরশুই উইমেন চ্যাপ্টার এ এই ‘হিজাব র্যালি’ নিয়ে একটি লেখা ছাপা হয়েছে, যেখানে ইভেন্টটির আয়োজক সব মুসলিম, নন-মুসলিমদের একদিনের জন্য হিজাব পরে হিজাবের পক্ষে মাঠে নামার আহ্বান জানিয়েছিলেন। ১ ফেব্রুয়ারি ‘ওয়ার্ল্ড হিজাব ডে’ উপলক্ষে বাংলাদেশের পক্ষ থেকেও সংহতি প্রকাশ করে সাইকেল র্যালির মাধ্যমে এর আয়োজন করা হয়।
আজ ১ ফেব্রুয়ারি, সাইকেল নিয়ে হিজাবের পক্ষে প্রচারণা চালাতে নেমেছিলেন মাত্র তিনজন নারী। সাথে কয়েকজন পুরুষ-সমর্থক। তার মানে তাদের এই আহ্বান খুব একটা সাড়া ফেলতে পারেনি এইদেশের হিজাবী নারীকূলের মধ্যে।
এ নিয়ে বিবিসি বাংলার রিপোর্টের পরিপ্রেক্ষিতে ফেসবুক পেজে পাঠকের কিছু প্রতিক্রিয়া চোখে পড়েছে। একজন লিখেছেন, এ তো দেখি গরু মেরে জুতো দান,,,,,।। হিজাবকে এরা খেলনা পেয়েছে, এরকম করে ক্ষমা পাবেন না। তাছাড়া মুসলিমদের কোনো দিবস পালন জায়েজ নেই। এটা খ্রিস্টানদের কাজ, কোনো মুসলিম বোনের থেকে এটা আশা করিনি। আবার সাইকেল চালিয়ে হিজাব পালন? এখনো সময় আছে, সাবধান হয়ে যান।আল্লাহ্ আপনাদের হিদায়েত দান করুন।
আরেকটি মন্তব্য, এমন হিজাব করবেন না, যে হিজাব আপনাকে আরো আকর্ষণীয় করে তোলে। মনে রাখবেন হিজাব ফ্যাশন নয়। নারী পুরুষ উভয়ের জন্য পর্দা করা ফরজ।
তৃতীয় একজনের মন্তব্য: গতকাল কোন এক পত্রিকা/কারো স্ট্যাটাস এ দেখলাম ৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে বাংলার মেয়েরা শাড়ি পরে রাজপথে মিছিল করছেন আর ২০১৬ সালের আধুনিক মেয়েরা হিজাব পরার জন্য আন্দোলন করছেন! নজরুল, রবীন্দ্রনাথ, মানিক,শরৎচন্দ্র, রোকেয়ারা প্রায় শত বছর আগে যেখানে বিভিন্ন ভণ্ডামির মূলে আঘাত করেছিলেন, আর আজ আমরা সেসব ভণ্ডামিতে নতুন রং লাগাচ্ছি!
এগুলো ছিল কয়েকশ মন্তব্যের মাত্র তিনটি। অধিকাংশই ছিল হিজাবের পক্ষে, কিন্তু মেয়েদের সাইকেল চালানো এবং দিবস পালানোর বিপক্ষে।
বিবিসি বাংলার রিপোর্টে বলা হয়েছে, হিজাব পড়ে যে নারীরা সব কাজ করতে পারে এটা দেখানোর লক্ষ্যে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার রাস্তায় তিনজন তরুণী আজ সাইকেল চালিয়েছেন। সাইক্লার্স অব বাংলাদেশের নামে একটি সংগঠনের তিনজন তরুণীর সঙ্গে ক’জন তরুণও হিজাব পরার সমর্থনে সাইকেল চালিয়েছেন ঢাকা শহরের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ রাস্তায়।
লালবাগ সাইক্লিং ক্লাবের প্রধান সিফাত-ই-কানিজ বলেছেন, “ধর্মীয় বিশ্বাস থেকে হিজাব পরলেও এ কারণে অনেক জায়গায় কাজ করা যায় না। আমি কয়েকটা চ্যানেলে কাজ করতে চেয়েছিলাম, কিন্তু পারিনি হিজাব পরি বলে। তাই আমি সাইকেল চালিয়ে প্রমাণ করতে চাই যে হিজাব করে সব করা সম্ভব”।
অন্যদিকে নারী আন্দোলন যারা করেন তাদের একজন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের আয়েশা খানম বলেছেন, “ফ্রিডম অব চয়েস সবার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। পোশাক পরিধানে যে কারও স্বাধীনতা থাকতে পারে”।
“তবে যে পোশাকেই নিজেকে ঢেকে রাখা হোকনা কেন, মন যেন উন্মুক্ত থাকে,” এমনটাই বলেন আয়েশা খানম।
তিনি আরো বলেন, “এক সময় নারীদের অবরোধ করে রাখা বা পর্দাপ্রথার মধ্যে রাখা এগুলোর বিরুদ্ধে লড়াই হয়েছে, নারী আন্দোলন হয়েছে। এখন একুশ শতকে এসে অনেকে মনে করছেন এটা আমাদের অধিকার। ফ্রিডম অব চয়েস সবার আছে তবে মনকে যেন কেউ বদ্ধ না করে ফেলে এটাই আমাদের চাওয়া।”
এখন যে নারীরা হিজাব পরে সাইকেল চালাতে পারছে, বাইরে বেরুতে পারছে এটা একসময়কার নারী আন্দোলনের ফল বলেও উল্লেখ করেন আয়েশা খানম।
হিজাব দিবসের মতো একটি দিবসের পালনের আহ্বানকারী নাজমা খান নিউইয়র্কে বসবাসরত বাংলাদেশী নাগরিক। দিবসটি পালনের জন্য নাজমা খান প্রথমে ইন্টারনেট-ভিত্তিক সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোতে মুসলিম-অমুসলিম নির্বিশেষে সব নারীর প্রতি আহবান জানান।
কিন্তু কী কারণে হিজাব দিবস পালনের আহ্বান জানিয়েছেন নাজমা খান?
নাজমা খান বলেছেন, তিনি যখন হিজাব মাথায় স্কুলে যেতেন, তখন তাকে অনেক সময় অপমান ও লাঞ্ছনার শিকার হতে হতো। মাধ্যমিক স্কুলে পড়ার সময় তাকে ব্যাটম্যান এবং নিনজা বলে ডাকা হতো। এমনকি ৯/১১ এর হামলার পর তাকে ডাকা হতো ওসামা বিন লাদেন এবং সন্ত্রাসী বলে।
হিজাব পরা নারীদের অনেক সময় অনেক বৈষম্যের শিকার হতে হয় বলে তিনি তার অমুসলিম বোনদেরকেও অন্তত একদিনের জন্য হিজাব পরে তাদের অভিজ্ঞতার কথা বলার আহ্বান জানিয়েছেন।
মাত্র ৩ জন !!! একি কথা !!! এত হিজাবী সাইক্লিস্ট থাকতে মাত্র ৩ জন এসেছিল!!! আচ্ছা, যেসব পুরুষেরা হিজাবের সমর্থনে সাইকেল চালিয়েছিল তারাও তো প্রত্যেকে মাথায় হিজাব পড়তে পারত !!! অন্তত একদিনের জন্য মাথায় হিজাব পড়লে কি আর পুরুষত্ব চলে যেত? “বিশ্ব হিজাব দিবসে” হিজাবের সমর্থনে তারা পুরুষ হয়েও যদি সাইকেল চালিয়ে দিবসটি উদযাপন করতে পারে, তাহলে হিজাব মাথায় দিতে সমস্যা কোথায় এসব হিজাব প্রেমীদের?