কী ভাবছেন আপনারা, পার পেয়ে যাবেন?

Muzzle me notজয়শ্রী দত্ত: কী ভাবছেন? চুপ করে ঘরের কোণে বসে থাকলে, সারা বছর ফেইসবুকে সাজানো দামী বাড়ি, গাড়িতে সেলফি মেরে, শুধু লতা-পাতার ছবি দিয়ে, নিরপেক্ষ ভাব নিয়ে, আস্তিক সেজে পার পেয়ে যাবেন?

ভাবছেন, হ্যাঁ ,যারা পগাড় পার করেছে, তারা  চাপাতির কোপ খুব ডেজার্ভ করে,  আর আপনি বা আপনারা চাপাতি, দোররা, পাথর নিক্ষেপ থেকে খুব দূরে আছেন? আপনাদের আর কী হবে, নেক বান্দা বলে কথা, বড়জোর অসাধুতা, দুর্নীতি, ছল চাতুরি, গিবত, পরকিয়া, ধর্ষণ এসব করেছেন, কিন্তু ফেইসবুকে তো আর বিজ্ঞান বা ধর্ম নিয়ে যৌক্তিক কিছু লেখেননি বা চাপাতি সংস্কৃতির প্রতিবাদ করেননি, তাই খুব সহজেই জান্নাতের ৭২ টি হুরপরী পেয়ে যাবেন, তাই ভাবছেন তো?

হমম, গা বাঁচিয়ে যান এভাবেই, দেখুন শেষ রক্ষা হয় কিনা! তারা তো তবু সুকন্ঠি শায়খ আব্দুর রাজ্জাক বিন ইউসুফ আর নায়কদেরও নায়ক মহান ‘জাকির নায়েক’ দের আদর্শে বিভ্রান্ত ‘চাপাতি -ধর’ ! কিন্তু ভদ্রবেশী, সুবিধাবাদী আপনারা কী হতে পেরেছেন? না মুক্তবুদ্ধির চর্চাকারী ,  ধারক- বাহক ,না চাপাতি-ধর! স্রেফ ক্লীব হয়েই রইলেন!

ভেবেছেন বুঝি এদের মাঝখানে পড়ে নিজের ‘ধড় ‘ টাই না হারান ,তাই না? “তার’চে এই ভালো ঘাপটি মেরে সকাল-বিকাল ধর্মের পোস্ট মেরে সেইফ থাকি “, তাই তো? কার এত ঠ্যাকা কে, কেন কোপ খেলো তা চিন্তা করার?

ভুল, সব ভুল ভাবছেন! আপনারা এতই অপদার্থ আর ক্লীব যে নিজের জন্যও লড়তে অক্ষম৷ অথচ আপনাদের ভালো রাখবে বলে লড়ছে, লিখে যাচ্ছে, প্রতিবাদ করছে, যুক্তি দিয়ে আপনাদের জ্ঞান ফেরানোর চেষ্টা করছিল এই কোপ খাওয়া মুক্তবুদ্ধির, বিজ্ঞান মনস্ক গুটিকয় মানুষ! দেশটাকে কুসংস্কার আর অজ্ঞতার অন্ধকার থেকে বাঁচাতে তারাই যেন শুধু মরণপণ করেছে, যার সুফল পাচ্ছেন আপনারা ক্লীবরা, যে কারণে আপনারা আজ অব্দি ছেলেমেয়েকে স্কুলে পাঠাতে পারছেন, ইংলিশ মিডিয়াম করে করে মুখে দু’চারটা ইংরেজির বোল ফুটিয়ে শো অফ করছেন, নাচ-গান, চিত্রকর্ম, মডেলিং, আর নানান শিল্পকলা শেখাচ্ছেন, ফটোগ্রাফির জন্য নাবালকের হাতেও ক্যামেরা কিনে দিতে পারছেন, ইউনিভার্সিটির বারান্দায় ছেলেমেয়ে প্রাণখুলে হাসতে পারছেন, একসাথে বসে চা-বিস্কুট খেতে পারছেন, চাকরি করতে পারছেন, ছেলেমেয়েকে ইউরোপ আমেরিকায় পাঠাতে পারছেন “মানুষ” হবার জন্য !!!

ভেবে দেখেছেন কখনও যে, দেশে এই “মানুষ” বানানোর কারিগর এখন কারা? কাদের অদম্য, নির্ভীক, যুক্তিনির্ভর, তীক্ষ্ণ লেখনী ও মননশীলতার জন্য আপনারা ক্লীবরা খোয়াব পূরণের খোয়াব দেখতে পারছেন এখনও?

যাদের নিরব প্রশ্রয় দিচ্ছেন ধর্মীয় অনুভুতির জুজু দেখিয়ে, আশামনির চরিত্র হনন করে, বা ‘সীমা লঙ্ঘনকারী” লেখা আখ্যা দিয়ে সরবে ও নিরবে চাপাতির কোপের বৈধতার কারণ খুঁজে বেড়াচ্ছেন, তারা তো ঠিকই এই দেশটাকে “বাংলাস্তান” বানানোর প্রজেক্ট বাস্তবায়ন করবে আপনাদের প্রশ্রয় পেয়েই !

তাহলে আর দেরী কিসের? আফগানিস্তান, পাকিস্তান, সিরিয়া, লিবিয়া, ইরাক চলে যান আপনাদের স্বপ্ন পূরণের জন্য, বাধা কোথায়? সবাই তো নিজেরা নিজেরাই ! সৌদি আরব চলে যান গোলামী করতে!

না, তা যাবেন কেন? যাবেন তো স্বপ্ন পূরণ করতে সেই নাস্তিক আর কাফেরদের দেশেই, ইউরোপ আমেরিকা ভারত, চীন, জাপানে!

একে একে সমাজ ও দেশগড়ার মিস্ত্রিগুলোকে আল্লাহর নামে কোরবানী দিচ্ছেন, ভালো তো৷ যখন এই পর্বের মানুষেরা বিলীন হবে, তখন বিশ্ব দেখবে আপনারা আঙ্গুল চোষা আস্তিকেরা কোথায় পালান?

তখনও ধর্মের আর ধার্মিকতার কুসংস্কারের পানি পড়া খেতে থাকবেন এই খোয়াবের ” বাংলাস্তানে”, আর নিজেরাই নিজেদের দোষারোপ করবেন এই ভেবে যে, কেন আপনাদের দেশের নাম আর নিজের নামের আগে ও শেষে পদবী দেখলে বিভিন্ন দেশের বর্ডারে আজকাল একটু বেশিমাত্রায় ইমিগ্রেশন চেক করছে অন্যদের তুলনায়, কেন গণহারে আপনাদের ভিসা প্রত্যাখ্যান করছে, অপমানে কান্না পাবে যখন দেখবেন প্লেনে সেই হিজাবী মেয়েটির মত নিরপরাধ হয়েও আপনিও যখন ঢাকনা খোলা ডায়েট কোকের ক্যান পাচ্ছেন, আর প্রতিবাদ করতে গেলে এয়ার হোস্টেস আর যাত্রীদের মুখে  ” ইউ মুসলিম আর টেররিস্ট ”  গালি শুনতে হচ্ছে !

http://www.mirror.co.uk/news/world-news/united-airlines-tahera-ahmad-coke-5795548

http://www.washingtonpost.com/local/muslim-americans-say-life-is-more-difficult-since-911/2011/08/29/gIQA7W8foJ_story.html

দেখে আসুন ফ্রান্সের রাস্তায় কিভাবে নিরীহ মুসলিমরাও থু থু খাচ্ছে শার্লি এব্দোর ঘটনার পরে , আমেরিকায় আপনাদের  নিরপরাধ আত্মীয় ,বন্ধু বান্ধবদের জিজ্ঞেস করুন তারা কেমন কোনঠাসা হয়ে থাকে কোনো না কোনো ক্ষেত্রে ৯/১১ এর ঘটনার পর!

পত্রিকা পড়ে দেখুন কেন ইউরোপ ইমিগ্রেশন ও অন্যান্য রাজনৈতিক পলিসি দিন দিন কঠোর করছে টেররিজম ঠেকানোর জন্য! খারাপদের দমন করতে গিয়ে তার ভিকটিম হচ্ছে সমস্ত  নিরীহ সুনাগরিকেরাও !

খবর কিছু রাখছেন? ভাবছেন ” ঘাপটি মেরে থাকি কুলুপ এঁটে, আমার কী? বড়জোর না পোষালে দেশ ছেড়ে যাবো ” ! কিন্তু এটা ভেবেছেন কোনো দেশে “বাংলাস্তানের” মানুষদের ঠাঁই মিলবে কী? দেখেছেন তো রোহিঙ্গা নিরপরাধ হতদরিদ্র মানুষগুলোর কি অবর্ণনীয় ভোগান্তি  হয়েছে? কেউ ঘাটে ভিড়তে দেইনি এক ফোটা জলপানের জন্য পর্যন্ত, কেন ? তা এতোদিনেও বুঝতে না পারলে লোকসানটা বাড়বে বৈ কমবে না !

ধর্মান্ধতার কীটকে এতদূর বাড়তে দেয়ার পরেও এখনো আপনাদের সম্বিত ফিরছে না, শিক্ষিত হওয়ার পরেও এখনো সেসব কূপমণ্ডুকদের মতো করেই  নিজেকে আর নিজের সন্তানদের বড় করছেন, মনুষ্যত্বের আগে ধর্মের বাণী আত্মস্থ করাচ্ছেন!

ভেবে দেখুন ইদানিং ধর্ম করে করে যা শুরু করলেন, তা কি শুধুই হুজুগ নয়? নাকি আপনাদের আগে বাপ-দাদা-নানা আর তাদের পূর্ব পুরুষেরা শান্তিপ্রিয় ধার্মিক ছিলেন না? নাকি এও প্রমাণ পেয়ে গেছেন আপনাদের পূর্বপুরুষেরা সব দোজোখে গেছেন শান্তিপ্রিয় ধার্মিক হওয়ার কারণে? কই, তাদের তো আস্তিক নাস্তিক নিয়ে কোনো চুলকানি ছিল বলে ইতিহাস বলে না !

যারা চাপাতি ধরেছে তাদের জন্ম বৃত্তান্ত ,পারিবারিক ইতিহাস, শিক্ষাদীক্ষার বৃত্তান্ত খোঁজ নিয়ে দেখুন যুগে যুগে এরা কী ছিল, কী এদের জীবন আর জীবিকার ভাবনা ! তাদের মতো স্তরের মানুষদের সাথে আজ আপনারা আঙ্গুল চোষা শিক্ষিত আস্তিকরা কন্ঠ মিলিয়েছেন!

একবার ভেবেছেন কি, এনোনিমাস মুক্তমনাদের পর্যন্ত যেরকম ডিটেইল্স খুঁজে খুঁজে এরা কোপাচ্ছে, ঠিক তেমনটি চাইলে এদের চাইতেও অধিকতর বুদ্ধিমান চৌকস মুক্তমনারা কি পারতো না সেসব কীট আর কীটদের পরিবারগুলিকে টুকরো টুকরো করতে?

মুক্তমনাদের টাইম লাইনে ঢুকলেই দেখা যায়, শত শত ধর্মের বুলি কপচানো, বিকৃত ভাষার, মানসিকতার সব নর্দমার কীটেরা কত নোংরা মন্তব্য লিখে রেখে যায়! তাদের  হদিস করে হাপিস করে দেওয়া কি মুক্তমনাদের বাহিনীর কাছে রকেট সায়েন্স ছিল?

এইখানেই  ধর্মের ধ্বজাধারী আর মুক্তবুদ্ধির চর্চাকারী দের মধ্যে পার্থক্য – বুদ্ধি ও বিবেকের পার্থক্য!!! তাহলে ভাবুন কেন মুক্তমনের মানুষেরা নিজের প্রাণপাত করে চলেছে ! তারপরেও এদের আপনারা শত্রু ভাবছেন,” সীমা লঙ্ঘনকারী” ভাবছেন?

এখনো সবটা শেষ হয়ে যায়নি, প্রাণের দেশটাকে ধর্মান্ধতা আর সন্ত্রাসের হাত থেকে মুক্ত করবার জন্য এখনো অন্ধকার টানেলের শেষপ্রান্তে আলো খুঁজে চলছে বিবেকবান মানুষগুলো, তাদের সাহায্য করুন৷ তাদের কাঁধ শক্ত করুন, দেখবেন তারাই তাদের নিজের কাঁধের উপর ভর করে আপনাদের উত্তাল সাগর পার করে দেবে৷

” ভালো” র কষ্টসহিষ্ণুতা প্রবল, দেরিতে হলেও তার কষ্টে ভাগীদার হউন!

বিশ্বাস করুন, বাংলাদেশটা এখনো বিশ্ববাসীর চোখে পাকিস্তান, সিরিয়া ,লিবিয়া ,ইরাক, আফগানিস্তান হয়ে যায়নি !

তারা এখনো বিশ্বাস করে বাংলাদেশ আইসিস আক্রান্ত দেশ নয় ! সুযোগ ও সময় দুই-ই হাত ফসকে বেরিয়ে যাবার আগে ” ধর্মান্ধতা” র হুজুগকে পাল্টা ধাওয়া দিন, কেননা  “ধর্মান্ধতা” জাল সেখানেই বিস্তৃত হয় যেখানে মন ও যুক্তি দুর্বল, “ধর্মান্ধতার” ব্যবসা তাদের নিয়েই করা যায় যেখানে মস্তিষ্কের গভীরে আলো পৌঁছে না!

প্লিজ, সময় গড়িয়ে যাচ্ছে, ভাবুন আর নিজেকে, নিজের পরিবারকে বুদ্ধিদীপ্ত করুন, শেখান-  ”  যেকোনো ধর্ম নিহিত থাকে সবার আগে, সবকিছুর আগে শুধু মনুষ্যত্বেই”! তা নাহলে হয়তো এমন দিনও আসতে পারে যেদিন নিজেরাই আবার বাধ্য হবেন নিজের নামের আদ্যাক্ষর ও নামের শেষের পদবীটুকু ছুঁড়ে ফেলে দেবেন আত্মরক্ষার জন্য! সেদিন হয়ত ” মাই নেইম ইজ মোহাম্মদ … … খান এন্ড আই এম নট টেররিস্ট ” নাম দিয়ে হাজারটা ফিল্ম বানালেও বিশ্ব আপনাদের বিশ্বাস করবে না !!! তাই চান কি ?

বি: দ্র: আঙ্গুল চোষা ” ক্লীব” আস্তিক গোত্রের মধ্যে ” মাননীয় সরকার ও তার বাহিনীরা “ও অন্তর্ভুক্ত !

লেখক পরিচিতি: লন্ডন প্রবাসী আইনজীবী।

উইমেন চ্যাপ্টারে যেকোনো লেখার জন্য লেখকের পূর্ণ স্বাধীনতা থাকে, সেজন্য তারা সমানভাবে দায়ীও থাকেন।

শেয়ার করুন: